ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে থাকবে না অভাব

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৫৪ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন। এ ইবাদত-বন্দেগির রয়েছে অসংখ্য শাখা-প্রশাখা। তা হতে পারে কথায়-মৌনতায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, কাজে-কর্মে, উপদেশ-পরামর্শে এবং দান-অনুদান ও সাহায্য-সহযোগিতায়। যার প্রতিটির ব্যাপারেই রয়েছে কুরআনুল কারিমের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা।

মানুষের এ সব ইবাদত-বন্দেগির জন্য হালাল জীবিকা নির্বাহ আবশ্যক। তাই ইবাদত-বন্দেগির জন্য অভাব-অনটনমুক্ত থাকাও জরুরি। মনে রাখতে হবে অভাব মানুষকে কুফরির দিকে ধাবিত করে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে অভাব-অনটনমুক্ত থাকতে কর্মঠ হওয়ার নসিহত পেশ করেছেন। কর্মের সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। অভাব থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার কৌশল শিখিয়েছেন।

অভাব ও দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামের অনেক মানবিক গুণাবলী এবং বিশেষ নিয়ম-কানুন রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে আখেরাতের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত রাখা এবং আইনগত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেছেন। যার সঠিক প্রয়োগেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে অভাব ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ।

আখেরাতের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধ

>> সাজের দারিদ্র্য বিমোচনে আখেরাতের চেতনা এবং মানবিক মূল্যবোধ অনেক বেশি জরুরি। আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে ক্রীতদাসকে মুক্তি দেয়া এবং দুর্ভিক্ষের সময় অভাবীদের দান করাকে হেদায়েত প্রাপ্তির শর্ত হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা তা সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন, ‘আমি কি তাকে দেইনি চক্ষুদ্বয়, জিহবা ও ওষ্ঠদ্বয়? বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ দেখিয়েছি। অতঃপর সে ধর্মের ঘাঁটিতে প্রবেশ করেনি। আপনি জানেন, সে ঘাঁটি কি? তা হচ্ছে দাসমুক্তি। অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে ইয়াতিম আত্মীয়কে অথবা ধুলি-ধুসরিত মিসকিনকে অন্নদান। অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া; যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। তারাই সৌভাগ্যশালী। (সুরা বালাদ : আয়াত ৮-১৮)

>> পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সফলতার জন্য অভাব-অনটনমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, শুধু পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে; বরং বড় সৎকাজ হল এই যে- ঈমান আনবে আল্লাহর ওপর, কেয়ামত দিবসের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর এবং সমস্ত নবি-রাসুগণের ওপর; আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, ইয়াতিম-মিসকিন, মুসাফির ও ভিক্ষুক এবং মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৭)

>> অভাবমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার পদ্ধতি তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-অনুদান প্রদান কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি দান-অনুদান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও; তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। আল্লাহ তাআলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭১)

>> আল্লাহ তাআলা স্বচ্ছল ব্যক্তিদেরকে তাদের স্বীয় উপার্জন থেকে অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে উত্তম জিনিস দান-সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন। যা নিকৃষ্ট বা নষ্ট তা যেন কোনোভাবেই দান করা না হয় সে ব্যাপারেও তাগিদ দিয়েছেন।

আল্লাহর তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং যা আমি তোমাদের জন্যে ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর এবং তা থেকে নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ করবে না; তবে যদি তোমরা চোখ বন্ধ করে নিয়ে নাও। জেনে রেখো, আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৬৭)

>> দান-অনুদান ও সহযোগিতার ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ধন-সম্পদে বরকত দান করেন এবং মানুষকে উত্তম রিজিক দান করেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দুর্বল, অসহায় ও নিঃস্বদের (সব ধরনের দান ও সহযোগিতা করার) ওছিলাতেই সচ্ছল মানুষরা সাহায্য ও রিযিকপ্রাপ্ত হয়।’

অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাক; একটি খেজুরের অর্ধেক দানের বিনিময়ে হলেও।’

দারিদ্র্য বিমোচনের আইনগত প্রক্রিয়া

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য আল্লাহ তাআলা জাকাত আদায় করাকে ফরজ করেছেন। আর এ জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থাই অভাবমুক্ত সমাজ গঠনের সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। জাকাতের অর্থ সুষম বণ্টনই সমাজ থেকে অভাব-অনটন দূর করতে সক্ষম।

কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের কাছ থেকে জাকাতের অর্থ আদায় এবং তা বণ্টনের কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন দারিদ্র্যের হার বেড়েই চলছে। দারিদ্র্য থেকে চরম দারিদ্র্য সীমা নিচে অবস্থান করছে অসংখ্য মানুষ।

ইসলামের বিধান অনুযায়ী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকদের কাছ থেকে জাকাত আদায়; সচ্ছলদের দান-অনুদান ও পণ্যের ওশর আদায় করে তা অভাবি মানুষের মাঝে সুষম বণ্টন করতে পারলেই অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী থাকবে না বললেই চলে।

পরিশেষে...

অভাব ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে পরকালের চেতনাবোধ জাগ্রত করা এবং জাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরকালের মুক্তির চেতনায় কুরআন এবং হাদিসের দিক-নির্দেশনা মেনে চলে দান-অনুদান প্রদান করার এবং রাষ্ট্রকে জাকাত ভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আইআই

আরও পড়ুন