আনুগত্য ও ধৈর্য অবলম্বনেই রয়েছে সফলতা
নেতার নেতৃত্ব মেনে নেয়া তথা আনুগত্য করা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর সফলতা লাভে এ আনুগত্য বা নেতৃত্ব মানতে হবে নির্দেশ অনুযায়ী। আর তা যদি হয় কোনো শত্রুদলের সঙ্গে যুদ্ধের; তবে তো আনুগত্যের গুরুত্ব দ্বিগুণ নয় বরং শতগুণ বেড়ে যায়।
নীতিবান নেতার আনুগত্য মেনে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন ও ধৈর্য অবলম্বনেই রয়েছে সফলতা। ইসলামের ইতিহাসে যার নজীর রয়েছে অনেক।
কোরআনে আনুগত্য নিয়ে উক্তি
আনুগত্যের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তাআলা হজরত শিমবিল কর্তৃক বনি ইসরাইলের জন্য নিযুক্ত নীতিবান বাদশাহ তালুতের অনুসারীদের মাঝে তার নির্দেশ মেনে আনুগত্যের বিষয়টি পবিত্র কুরআনুল কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আয়াতের অনুবাদ
কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য :
মুসলমানদের জন্য কাফের ও মুনাফিকদের আনুগত্য নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন,وَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَالْمُنَافِقِيْنَ وَدَعْ أَذَاهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ وَكَفَى بِاللهِ وَكِيْلاً- ‘আর তুমি কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ কর না। তাদের দেওয়া কষ্টসমূহ উপেক্ষা কর এবং আল্লাহর উপর ভরসা কর। বস্ত্ততঃ তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট’ (আহযাব ৩৩/৪৮)। কাফেরদের আনুগত্য না করে বরং তাদের সাথে জিহাদ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِيْنَ وَجَاهِدْهُم بِهِ جِهَادًا كَبِيْرًا ‘অতএব তুমি কাফেরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি তাদের বিরুদ্ধে এর সাহায্যে কঠোর সংগ্রাম কর’ (ফুরক্বান ২৫/৫২)।
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ
সুরা বাকারার ২৪৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তাআলা তালুতের সৈন্যবাহিনীর কাছ থেকে আনুগত্যের যে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন তা এ আয়াতে উঠে এসেছে। আরো উল্লেখ করা হয়েছে যারা নেতার আনুগত্য মেনে নেয়; তাদের সংখ্যা কম হলেও তারা বড় দলকেও পরাজিত করতে পারে। এটা মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। আর আল্লাহর অনুগ্রহ ধৈর্যশীলদের জন্যই নির্ধারিত।
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় জানা যায়, ‘যখন বনি ইসরাইলরা তালুতকে বাদশাহ হিসেবে মেনে নেয় তখন বাদশাহ তালুত তাদের নিয়ে জেহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তাফসিরকার সাদী বলেন, ‘তাদের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার।
তালুত তাদেরকে বললেন, ‘আল্লাহ তআলা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন একটি নদীর পানি দ্বারা; যারা এ নহরের পানি পান করবে তারা আমার সঙ্গে জেহাদে যেতে পারবে না; অথবা পান করলেও মাত্র এক অঞ্জলি পান করবে; তারা আমার সঙ্গে জেহাদে যেতে পারবে।
বাদশাহ তালুতের সতর্কবাণী উচ্চারণ করার পরও বনি ইসরাইলের অধিকাংশ লোক সেই নদীর পানি পান করেছিল; যদিও তারা ছিল তৃষ্ণার্ত কিন্তু তালুতের হুশিয়ারী বাণী উচ্চারণের কারণে তাদের পানি পান না করে সবর বা ধৈর্য অবলম্বন করা উচিত ছিল।
কিন্তু বনি ইসরাইলের প্রায় ৭৬ হাজার লোক তালুতের নির্দেশ অমান্য করে পানি পান করে। আর যারা সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী ছিল তারা পানি পান থেকে বিরত থাকে। ফলে মাত্র ৪ হাজার লোক তালুতের নির্দেশ মেনে অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম মেনে পানি পান না করে সবর বা ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো।
যারা বাদশাহ তালুতের নির্দেশ না মেনে আল্লাহর হুকুমের অমান্য করে, তাদের মধ্যে সঙ্গে সঙ্গে পানি পানের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়; তারা হীনবল হয়ে অত্যাচারী শাসক জালুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
আর যারা ঈমানদার ছিলেন এবং নীতিবান শাসক তালুতের নির্দেশ মোতাবেক আল্লাহর হুকুম পালন করে তারা সাহসহীন বনি ইসরাইলদের বুঝানোর চেষ্টা করে যে, ‘জয় পরাজয় আল্লাহ তাআলার হাতে’; সবর অবলম্বন করলে এবং নিয়ত সঠিক হলে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন।
ইতিহাস সাক্ষী! পৃথিবীতে অনেক ছোট ছোট দল, অনেক বড় ও বিশাল সৈন্যবাহিনীর দলকে পরাজিত করে বিজয় লাভ করেছে। আর তা আল্লাহ তাআলার সাহায্য পেয়ে বিজয় লাভ করেছে।
পড়ুন- সুরা বাকারার ২৪৮ নং আয়াত
পরিশেষে.
আল্লাহর প্রতি সুদৃঢ় ঈমান বা বিশ্বাস রেখে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে নেতার আনুগত্য করে আল্লাহর হুকুম পালন করলে বিজয় অনিবার্য। আর আল্লাহর সাহায্যের ওপর আস্থা রাখা এবং সবর বা ধৈর্য অবলম্বনে রয়েছে কল্যাণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নেতার আনুগত্য মেনে ধৈর্যের সঙ্গে আল্লাহর হুকুম যথাযথ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে বিজয় লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর