ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মিশর

অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রবাসীর মৃত্যু, দেখা হলো না অনাগত সন্তানের মুখ

আফছার হোসাইন | প্রকাশিত: ০২:০২ এএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

মিশরের ইসমায়েলিয়া শহরে রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মো. ফাইজুল ইসলাম (৩৫) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি। আহত হয়ে ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা‌ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরও দুইজন। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের মো. হানিফ (৪২) ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান (২৬)।

জানা যায়, অনাগত সন্তানের স্বপ্নপূরণ আর পরিবারের স্বচ্ছতা ফেরাতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে মিশর আসেন চাঁদপুরের ফাইজুল ইসলাম নামে এই প্রবাসী। কিন্তু অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না। মিশর পৌঁছে কাজে যোগ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হন তিনিসহ দু’জন।

নিহত ফাইজুল ইসলামের ভাই, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের শিক্ষার্থী সুজন সর্দার বলেন, গত ২৩ অক্টোবর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভিরের মাধ্যমে মিশর আসেন আমার ভাই। কায়রো পৌঁছানোর পর পোশাক শিল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলে ইসমায়েলিয়া শহরের কানতারায় এলাকায় পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কোনো যোগাযোগ ছিল না বা করতেও পারিনি।

তিনি বলেন, গত ৫ অক্টোবর এক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি সে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি হাসপাতালে তাকে পাই। রোগীর অবস্থার অবনতি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ পাহারায় তাকে পার্শ্ববর্তী শহর জাকজিক এর বার্ন স্পেশাল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। চারদিন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আমার ভাই।

তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে এয়াহিয়া তানভিরের কোনো সহযোগিতা পাইনি। এমনকি তার সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি।

বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন স্যার এসেছিলেন, ভাইকে দেখে কিছু আর্থিক সহায়তা করে গেছেন। পরে পরিবারের ইচ্ছায় দূতাবাসের সহযোগিতা ও আমাদের ব্যক্তিগত খরচে ভাইয়ের মরদেহ দেশে‌ পাঠিয়েছি। দেশে পৌঁছার এক সপ্তাহ পর তার অনাগত সন্তানের জন্ম হয়।

মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুজন আরও বলেন, আমি আর্থিক কোনো সহযোগিতা চাই না, ছাত্র নামধারী তানভিরের মতো দালালদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক, যেন মিষ্টি কথার প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে মিশর এসে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।

ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা হাসপাতাল থেকে আহত আবু হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, ওই দিন সন্ধ্যায় রান্না করার সময় বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন লেগে মুহূর্তের মধ্যে পাক ঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হই। পরে স্থানীয়রা আমাদের ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনজনের মধ্যে ফাইজুল ইসলাম জাগজিগ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে শুনেছি। আমি ও লুৎফর এই হাসপাতালেই ভর্তি আছি। আমাদের শরীরে অনেক অংশই ঝলসে গেছে।

তিনি বলেন, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির আমাদের প্রত্যেককে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে মিশর আনেন অন-অ্যারাইভাল ভিসা দিয়ে। আসার পর তাদের কাজ দিতে নিয়ে যান ইসমায়েলিয়ার এক পোশাক শিল্প কারখানায়। কিন্তু তাদের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেন কাজ শিখে আসতে। তার কথা মতো এহিয়া লুৎফর তাদের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ দেন ছোট্ট একটি কারখানায়। কাজ শেষে ঘরে এসে নিজেদের রান্না করার সময় ঘটে এই দুর্ঘটনা।

এদিকে তানভির এয়াহিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই তিনজনকে আমি ভ্রমণ ভিসায় মিশর এনে কাজ দিয়েছিলাম ইসমায়েলিয়ার কান্তা এলাকার একটি ছোট কারখানায়। পরে শুনতে পেলাম তারা নিজেদের বাসায় রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ব্যস্ততার জন্য আমি তাদের দেখতে যেতে পারিনি। তবে, লোক পাঠিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি।

মিশরে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ জেনেও আপনি কেন অবৈধভাবে দেশ থেকে লোক আনেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তানভির বলেন, মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে ভিজিট ভিসায় এসেও এদেশে কাজ করতে পারবে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া। সেই ওয়েবসাইটের লিংক চাইলে পাঠাবে বলেও তিনি জানান।

এমআরএম