শ্রমিক সংকট উত্তরণের উপায় খুঁজছে মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ায় এখন বিদেশি শ্রমিক নেয়া বন্ধ। এ অবস্থায় সেখানকার শিল্প কলকারখানাগুলো শ্রমিক সংকটে পড়েছে। বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। শ্রমিক সংকটের কারণে সেখানে উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়ছে। ফলে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজছে সরকার।
বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. আহমেদ জাহিদ হামিদি সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার সরকার খুব শিগগিরই পুনরায় বিদেশি শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা দেবে। এ ব্যাপারে কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ এ ঘোষণা আসতে পারে তা বলেননি তিনি। এ নিয়ে সে দেশের শিল্প মালিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শ্রমিক বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা ভাবছেন ব্যবসায়িরা।
জাহিদ হামিদি বলেন, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের অভিযোগ ও পরামর্শের ভিত্তিতে সরকার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। বিদেশি শ্রমিক নেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন খাতে ইতোমধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পুনরায় বিদেশি শ্রমিকের প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে নিয়োগ কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। খুব শিগগিরই এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, সরকার এই বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও প্রস্তাবের বিষয়টি সবসময়ই উন্মুক্ত রেখেছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এই বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ করেছে বলে তিনি জানান।
জাহিদ হামিদি বলেন, আমি তাদেরকে দোষারোপ করছি না। কিন্তু আমি মনে করি, বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ে তাদের পরামর্শের জন্য শেষ পর্যন্ত দায়দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। তবে অবৈধ শ্রমিকদের পুনরায় নেয়ার পরিবর্তে স্থানীয় কর্মীদেরই নিয়োগ দেয়া হবে।
এদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশি হাইকমিশনারের নেতৃত্বে দেশটির মানবসম্পদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তারা মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশি শ্রমিক নেয়ার ক্ষেত্রে স্থগিতের ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছু জানায়নি।
তবে চুক্তির বিষয়ে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী রিচার্ড রিয়ট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়েছে তার মেয়াদ ৫ বছর। বিদেশে শ্রমিক নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হলেই বাংলাদেশের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছে তা কার্যকর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে শ্রমিক আনার ব্যাপারে আমরা কেবল বাংলাদেশের সঙ্গেই চুক্তি করিনি আরো ৭টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। সাময়িক স্থগিত মানেই চুক্তি বাতিল নয় বলেও জানান তিনি।
এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রিসভা নতুন করে বিদেশি শ্রমিক আমদানির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
যে শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিট নেই বা যাদের ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ তাদের আবেদন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন তিনি, বিদেশি শ্রমিকরা ৩০ জুন পর্যন্ত বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ‘জি-টু-জি’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। সে অনুযায়ী শুধু সরকারিভাবে মালয়েশিয়ার ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক পাঠানো হয়েছিল।
‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জি-টু-জি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
জেএইচ/এবিএস