মিশিগানে ভাষা দিবসের ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘ভাষার বসন্ত’
মিশিগানের প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে হয়ে গেলো ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান ‘ভাষার বসন্ত’। প্রবাসজীবনেও দেশীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া এনে দিতে মিশিগানে নর্থভিল কমিউনিটি সেন্টারে ভাষা দিবসের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় বাংলাদেশি পিঠা উৎসব।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পাঁচটা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি আমেরিকানদের অংশগ্রহণে উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও পিঠা উৎসব। স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনায় ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও এই দিবসের অর্জন।
তুষারে ঢাকা শ্বেতশুভ্রতা আর কনকনে শীতের পরবাসী জীবনে নতুন ধানের চালের গুঁড়ায় তৈরি পিঠার অতুলনীয় স্বাদ নিতে ভোলেননি মিশিগানের বাংলাদেশিরা। নোভাই-নর্থভিল, কেন্টন, আন আরবার, ট্রয় উইক্সম, ফারমিংটন হিলস সাগিনাও শহরের আশপাশের বাংলাদেশিরা মিলিত হন এ আয়োজনে। মঞ্চসজ্জা করা হয়েছিল প্রমাণ সাইজের শহীদ মিনার আর ফুল দিয়ে। লোকসমাগম দেখে মনে হয় পরবাসে এ যেন ছোট্ট একটি বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও বিশ্বব্যাপী এর স্বীকৃতির ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করে স্কুলে পড়ুয়া জারা, আতিফ, আয়ান ও জুনাইরা। এরপর ভাষা শহীদের স্মৃতির স্মরণে কবিতা সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন সাইফ, আহাদ, শাম্মা, তমা, নিশিতা ও অভিষেক।
এছাড়া নৃত্য পরিবেশন করে মনজুরি, আলিয়া, সানিয়া, থিয়া, ইরিনা, জোহান, সিহান, ইউসরা, সাইফান, জাভিয়ান ও শারাফ।
বড়দের মাঝে নৃত্য করেন জারা, জুনাইরা, সানজিদা, লাবন্য, মৃত্তিকা ও তার দল। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফজলে আহাদ, তৃনা বড়ুয়া, আরিশা, আদিবা, ও অভিষেক বালা।
উৎসবে ভাপা, পুলি, চিতই, পাটিসাঁপটা, চন্দ্র বাহার, চুঙ্গা পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, রস ফুল পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝাল পোয়া, ঝুরি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, নকশি পিঠা, নারকেল পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, দুধ চিতইসহ বিচিত্র নামের ও সৌন্দর্যের সব পিঠার সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল।
ছিল সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, বগুড়া, নোয়াখালী, রাজশাহী, নরসিংদী, সিলেট ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পিঠাও। পিঠার সেই ম ম গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো হলরুমে। অনুষ্ঠানে ছিল রিতা’স কিচেন ও জেরিন’স কিচেন। রাতের খাবারের ছিলেন সুরাইয়া’স কুকবুক।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের জন্য ছিল ৩৬০ ফটো বুথ। অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিলেন মৃধা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ পিস অ্যান্ড অয়েলথ ফাউন্ডেশন, এমি ইসলাম, এ এ ফটোগ্রাফী।
এছাড়াও ছিল ছেলে ও মেয়েদের দলীয় সঙ্গীত। ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় গানের সাথে সংগীত পরিবেশন করেন- সম্পা, শান্তা, সাজিয়া, লাবন্য, মৌসুমি, নিশিতা, সানজিদা, ফারজানা ও রনজিতা।
কারার ওই লৌহ কপাট ও তীর হারা গান সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ফজলে আহাদ, মোহাম্মদ মামুন, নাজমুল আনোয়ার, নির্মল দাস, আব্দুল মতিন, রুবাব আহমেদ আদিব, প্রসান্ত দে ও অভিষেক বালা। অনুষ্ঠানের পুরোটা সময় ছিল বাংলা গান ও নাচে প্রাণবন্ত।
শিশুদের জন্য ছিল বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার উপর কুইজ প্রতিযোগিতা। মঞ্চ সজ্জায় ছিলেন আদিব, হালিম ও মুমু। আলোক সজ্জা আহাদ, সাউন্ড ও মিউজিক নাজমুল আনোয়ার, আহাদ, আদিব ও সাইফ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ড. দেবাশিষ মৃধা ও অধ্যাপক আহসান হাবিব। বাংলাদেশের বিডিআর বিদ্রহে আত্মহুতি দেওয়া শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এমআরএম/জিকেএস