নিউইয়র্কের বইমেলায় তসলিমা নাসরিন
বাংলাদেশের নির্বাসিত কবি ও লেখক তসলিমা নাসরিন গত ১৫ জুলাই নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলায় গিয়েছিলেন। ওইদিন ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার মতো মেলায় অবস্থান করেন তসলিমা। এসময় তিনি বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
তসলিমা নাসরিনের সঙ্গে ছবি তুলতে এবং কথা বলতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে যায়। লেখক হাসিমুখে সবার সঙ্গে ছবি তোলেন এবং নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
এবারের নিউইয়র্ক বইমেলায় সুবীর চৌধুরী ও নুরজাহান বোসকে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়। স্মারক সম্মাননা পেয়েছেন মেলার উদ্বোধক ও কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম বীর প্রতীক।
স্থানীয় সময় মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার (১৫) বন্ধের দিন হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণে ছিল ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত চার দিনব্যাপী এ বইমেলার পর্দা নামবে আগামীকাল (১৭ জুলাই)।
বইমেলায় গিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, আমি ঢাকা ও কলকাতার বইমেলায় যেতে পারি না ৩০ বছর ধরে। অথচ আমি বাংলায় লিখি। কিন্তু আমার বইমেলায় যাওয়ার অধিকার নেই। তবে অন্যান্য ভাষাভাষির বইমেলায় আমি যাই। অনেক সময় উদ্বোধনও করেছি। নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলায় এসে খুব ভালো লাগছে। পুরোনো প্রকাশকদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অনেক নতুন বই দেখছি।
তিনি বলেন, এই যে বলা হয় আমাকে মেরে ফেলবে, আমার বিরুদ্ধে প্রচুর মানুষ- কই, আমি তো এখানে এসে দেখলাম কত মানুষ এলো, কত মানুষ আমাকে ভালোবাসে, কত মেয়ে এসে বললো তারা আমার বই পড়ে, আমাকে ভালোবাসে- এ বিষয়গুলোই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।
মেলায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ২৫টি প্রকাশনা সংস্থা। বন্ধের দিনে ভালোই বিক্রি হয়েছে বই। মেলা উপলক্ষে আদনান সৈয়দের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে একটি বিশেষ সংকলন। মেলা প্রাঙ্গণের সমরেশ মজুমদার মঞ্চে দেওয়া হয় আজীবন সম্মাননা।
এবার আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন সুবীর চৌধুরী ও নূরজাহান বোস। বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের সেরা ৫০ জন থট লিডারের একজন সুবীর চৌধুরী। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ভাষায়, তিনি নেতৃস্থানীয় উৎকর্ষ বিশেষজ্ঞ। নুরজাহান বোস একজন সংগ্রামী নারী। যিনি আত্মজীবনী ‘আগুনমুখার মেয়ে’ বইটি লিখে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। লেখক হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। স্মারক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে মেলার উদ্বোধক ও কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম বীর প্রতীকে।
দিনভর বই কেনাবেচা আর লেখক-পাঠকদের সম্মিলন শেষে রাতে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী অণিমা রায়ের গান দিয়ে শেষ হয় মেলার দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান। স্থানীয় সময় রোববার বিকেলে তসলিমা নাসরিন বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত সাহা। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতিপ্রেমীরা জড়ো হয়েছেন জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টার প্রাঙ্গণের এ বাংলা বইমেলায়।
এর আগে গত ১৪ জুলাই (শুক্রবার) মেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নিউইয়র্কে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ভাষা-সাহিত্য এবং সংস্কৃতির নিয়মিত চর্চা হয়। নিউ বাংলা বইমেলা তৃতীয় বাংলার বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠছে।
উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা বেগম বীর প্রতীক বলেন, মনে হচ্ছে আমার বীর প্রতীক উপাধি পাওয়া সার্থক হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে বাঙালিরা এসেছেন। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করছেন। এ যেন দেশের বাইরে আরেকটি বাংলাদেশ।
এমকেআর/জিকেএস