মিশিগানে ‘বাংলাটাউন’ নামফলকে কালি লেপন, প্রবাসীদের ক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি-আমেরিকানদের ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক ‘বাংলাটাউন’ নামফলকে রাতের আঁধারে কালো কালি লেপন করে দিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।
শনিবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বিষয়টি স্থানীয় প্রবাসীদের নজরে আসে। তাদের ধারণা, শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ডেট্রয়েট-হ্যামট্রামিক শহরের প্রবেশদ্বারে বাংলাদেশ এভিনিউ তথা কনান্ট এভিনিউতে অবস্থিত ফলকটির দুই পাশে কালো রঙ স্প্রে করে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশিদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিন্দার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঘটনার তদন্ত ও দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করতে মাঠে নেমেছে ডেট্রয়েট সিটি পুলিশ। এরই মধ্যে তারা নামফলক এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের কাছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করা দৃষ্টিনন্দন ‘বাংলাটাউন’ ফলকটি সবদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। এটি মিশিগানে বেড়াতে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় স্পট।
বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং আমেরিকা ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খচিত বাংলাটাউন এই ফলকটি নির্মাণ করে বাংলাদেশি আমেরিকান পাবলিক অ্যাফেয়ার্স। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ডেট্রয়েট সিটির মেয়র মাইক ডোগান আনুষ্ঠানিকভাবে ফলকের উদ্বোধন করেন।
এর আগে ২০১৫ সালে ৬ নভেম্বর মিশিগান স্টেটের তৎকালীন গভর্নর রিক স্নাইডার এই এলাকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাটাউন স্বীকৃতি প্রদান করেন।
ঘটনাটি প্রকাশ হওার পর থেকে এ নিয়ে সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। মিশিগান প্রবাসীর সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যের বাংলাদেশিরাও নিন্দা-ক্ষােভ জানাচ্ছেন এবং দোষীদের সন্ধান ও শাস্তি দাবি করেছেন।
ঘটনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে কথা হয়েছিল হ্যামট্টামিক সিটির মেয়র প্রোটেম কামরুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, বাংলাটাউন নামের সাইনবোর্ডটি আমাদের গৌরব ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
সাম্প্রতিক সময়ে কে কারা এই নাম ফলকটি মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
মিশিগান বিএডিসির সাবেক সভাপতি মুহিত মাহমুদ জানিয়েছেন, বাংলাটাউন সাইন বোর্ডটি যারা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে,আমি মনে করি ওরা দুস্কৃতিকারী, অবশ্যই সমাজের শত্রু। এটা কিন্তু কারো দয়ায় দেওয়া জিনিস না, বাংলাদেশিদের অর্জিত সম্পদ।এটাকে রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস শিগগিরই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
বাপাকের চেয়ারম্যান এহসান তাকবিম ববি জানিয়েছেন, আমরা যখনই জানতে পারছি যে দুষ্কৃতিকারীরা বাংলাটাউনের সাইনটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছে এবং সাইনের সৌন্দর্য নষ্ট করছে,তাদের ব্যাপারে আমরা ডেট্রয়েট সিটি পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি জানান, তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। পাশাপাশি হিউম্যান রাইট নিয়ে কাজ করা ক্রিও নামের সংগঠন ও ডেট্রয়েট সিটির পুলিশি যদি বিষয়টি হেইট ক্রাইম বলে অভিহিত করেন তাহলে আমরা এফবিআইয়ের সহযোগিতা চাইব।
বাংলাটাউনের সাইনবোর্ডটি পুনঃসংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে যত টাকাই খরচ হয় না কেন আমরা আবারো আমাদের জাতি সত্তার প্রতীকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনব।
প্রবাসী সংগঠক শাহাদাত হোসেন মিন্টুর মতে, এটা আমেরিকান বা অন্য কোনো জাতির কাজ নয়। এটা আমাদের বাংলার নতুন মীরজাফর, ঘষেটী বেগম এদের উওরসুরীদের কাজ। এ ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই।
দুষ্কৃতকারীদের মাধ্যমে নষ্ট করা বাংলাটাউন সাইনবোর্ড দেখতে এসেছিলেন আব্দুর রহমান নামের বাংলাদেশি যুবক। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমি মনে করি এটা হেইট ক্রাইম। আমার দাবি থাকবে, প্রশাসন এদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবেন।
রুম্মান চৌধুরী ইভান নামের এক ব্যবসায়ী প্রতিক্রিয়াজানান এভাবে, অপরাধী যে জাতির হোক, পরিচয় বের করে সম্মিলিতভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক।
শেখ ইসলামের বলেন, খুব খারাপ কাজ, যারা করেছে তারা আমাদের বাংলার শত্রু, সবার দুশমন। যারা একাজ করেছে তাদের মুখগুলো লাইভে এনে দেখাবেন তদন্তকারীরা। সবাই দেখুক, চিনতে পারোক আমাদের শত্রুদের।
এমআরএম