ফিনল্যান্ডে বৈধ অভিবাসনের যত উপায়
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্র ফিনল্যান্ডে বৈধ অভিবাসনের নানা পন্থা রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ভিসায় ফিনল্যান্ডে আসতে প্রয়োজন পড়ে শেঙ্গেন ভিসার। কিন্তু এই প্রতিবেদনে ফিনল্যান্ডে দীর্ঘমেয়াদি অভিবাসনের বৈধ পন্থাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ভিসা
৯০ দিনের বেশি সময়ের জন্য পড়াশোনা করতে গেলেই ফিনল্যান্ডে শিক্ষার্থী বা স্টুডেন্ট ভিসা দরকার। দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করে ভিসা হাতে পেয়ে ফিনল্যান্ডে আসার পর পড়াশোনার মেয়াদের জন্য রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করতে হয়। এই পারমিট দুই বছরের জন্য সাধারণত দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পড়াশোনার মেয়াদ দুই বছরের কম হলে এই পারমিটের মেয়াদও কম হয়।
কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বিচারাধীন থাকাকালীন কোনো ব্যক্তি শিক্ষার্থী হিসেবে থাকার অনুমতির আবেদন করতে পারবেন না। ডিপোর্টেশন বা নিজ দেশে প্রত্যার্পণের আদেশ পাওয়া ব্যক্তিও পারবেন না শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন করতে।
শিক্ষার্থীদের আবেদন করার সময় দেখাতে হবে যে তাদের কাছে ফিনল্যান্ডে জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। প্রতি মাসে অন্তত ৫৬০ ইউরো দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব, এই মর্মে প্রমাণ দেখাতে হবে আবেদনের সময়।
কাজ করার অনুমতি বা জব ভিসা
চাকরি করতে বা ব্যবসা করতে ফিনল্যান্ডে নির্দিষ্ট ভিসা প্রয়োজন। ভিসার শর্ত উপেক্ষা করলে রয়েছে মোটা অংকের জরিমানা। ফিনল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করে ও পড়াশোনা করার জন্য যথাযথ শিক্ষার্থী ভিসা রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তি চাইলে ‘জব সিকিং ভিসা’ বা কাজ খোঁজার জন্য বিশেষ ভিসার আবেদন করতে পারেন।
কিন্তু যদি অন্য কোনো ধারায় দেশটিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে দেখা যায় বেশির ভাগেরই ভিসার সঙ্গেই দেওয়া হয়েছে কাজের অনুমতি। কিন্তু শুধু কাজ করতে ফিনল্যান্ডে জব ভিসা দেওয়ার বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ফিনল্যান্ডে ওয়ার্ক পারমিট বা জব ভিসা পেতে গেলে ন্যূনতম বেতন পেতে হয়। নিয়োগপত্রে বলা থাকতে হবে যে কাজের জন্য প্রদত্ত বেতন ভিসার আবেদনকারীর জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত।
ফিনল্যান্ডে বছরে মাথাপিছু ১২ হাজার ইউরোর ন্যূনতম বেতনের প্রয়োজন কোনো ব্যক্তির ওয়ার্ক পারমিটের জন্য। কিন্তু এই অংক এক একজনের জন্য এক একেক রকম।
পারিবারিক পুনর্মিলন
পরিবারের কোনো ঘনিষ্ঠ সদস্য যদি ফিনল্যান্ডে থাকার অনুমতিসহ বাস করেন, সেক্ষেত্রে পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি থাকার ভিসার আবেদন করতে পারেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এক্ষেত্রে, ফিনল্যান্ডের বাসিন্দা পরিবারের সদস্য ( ‘স্পন্সর’) এই ভিসার আবেদন করতে পারবেন না। আবেদনকারীকে নিজেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবারের যে সদস্যরা এই ধারায় আবেদন করতে পারেন, তারা হলেন-
স্বামী-স্ত্রী,
নিবন্ধিত পার্টনার বা সঙ্গী,
একসঙ্গে জীবনযাপন করা সঙ্গী,
অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের দেখভাল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি,
সন্তান,
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই ধারায় ভিসা পেতে হলে স্পন্সরের আর্থিক অবস্থার প্রমাণ দিতে হয়, যেন সরকারের নির্ধারিত আয়ের সীমার আওতায় থাকে স্পন্সরের বার্ষিক আয়।
রাজনৈতিক আশ্রয়
ফিনল্যান্ডে আশ্রয় আবেদন করতে হলে ফিনিশ ভূখণ্ডের ভেতর থেকেই করা যায়। অগ্রীম আশ্রয় আবেদন করে পরে ফিনল্যান্ডে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আশ্রয় আবেদন পদ্ধতি অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আবেদনের পদ্ধতি থেকে কিছুটা ভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে আশ্রয় আবেদনের সাক্ষাৎকারের সময় ফিনিশ কর্তৃপক্ষের পক্ষে একজন আইনজীবী ও সমাজকর্মী নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
অন্যান্য আরো যত কারণ: রিমাইগ্রেশন, মানবপাচারের শিকার হিসেবে আশ্রয়
ফিনল্যান্ডের সঙ্গে কোনো পূর্ব সম্পর্ক থাকলে বা ফিনিশ জাতির কোনো ব্যক্তি বা ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালে ফিনল্যান্ডের সামরিক বাহিনীতে কাজ করা ব্যক্তিরা রিমাইগ্রেশন বা পুনর্ভিবাসনের আওতায় ফিনল্যান্ডে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা পেতে পারেন।
এছাড়া, মানবপাচারের শিকার ব্যক্তিরা ফিনল্যান্ডে অস্থায়ী থাকার অনুমতি পেতে পারেন।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমআরএম/জিকেএস