লিবিয়ার কারাগারে এক শরণার্থীর অভিজ্ঞতা
আফ্রিকার দেশ মালি থেকে আসা ২৪ বছর বয়সী অভিবাসী আমাদি (ছদ্মনাম) একটি বিশেষ সাক্ষাতে লিবিয়ায় সরকারি আটককেন্দ্রে শরণার্থীদের ওপর চলা নির্যাতন ও দুর্বিষহ নির্যাতনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
‘আমি পাঁচমাস ধরে ত্রিপোলির একটি কারাগারে রয়েছি। এর আগে আমাকে অন্য দুটি কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছিল। প্রথমবার আমাকে ত্রিপোলি শহরের উপকণ্ঠে গ্রেপ্তার করে আটককেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। দ্বিতীয়বার সমুদ্র পাড়ি দিতে গেলে আমাকে আবার গ্রেফতার করা হয়েছিল।’
ত্রিপোলিতে কর্তৃপক্ষ পরিচালিত বেশ কয়েকটি কারাগার রয়েছে- উদাহরণস্বরূপ, আল-মাবানী, আইন জারা বা তারিক আল-সিক্কা। ভুক্তভোগী মালির নাগরিক আমাদিকে কোন কারাগারে রাখা হয়েছিল সেটির নাম তিনি মনে করতে পারেননি।
আমাদি বলেন, কারাগারের জীবন অসহনীয় যন্ত্রণার। ভাগ্যক্রমে দেশে থাকা আত্মীয়রা আমার মুক্তির জন্য অর্থ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল তাই আমাকে বেশি দিন থাকতে হয়নি। প্রথমবার আমি দুই সপ্তাহ ও দ্বিতীয়বার নয় দিন কারাগারে কাটিয়েছিলাম। প্রত্যেক বার আমাকে কারাগার থেকে বের হতে ৩ হাজার লিবিয়ান দিনার (প্রায় ৫৫০ ইউরো) মুক্তিপণ দিতে হয়েছিল। প্রত্যেকবারই আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল।
প্রহরীরা বিনা কারণে আমাদের মারত
তিনি বলেন, আটক কেন্দ্রেগুলোর প্রহরীরা আমাদের সঙ্গে সবসময় খারাপ ব্যবহার করত। বিনা কারণে মারধর করত। তারা এমনকি দরজা খুলে আমাদের মারতে আসত। অনেক সময় প্রহরীদের আসার শব্দে আমি ঘরের পেছনে লুকিয়ে থাকতাম যেন মারধরের শিকার হতে না হয়।
‘আমরা প্রতিটি কক্ষে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জন লোক ছিলাম। কারাগার ও আটককেন্দ্রের কক্ষগুলো ছিল গুদাম ঘরের মতো যেখানে তারা অভিবাসীদের স্তূপ করে রাখা হয়। তারা কালো (পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আগত) আর সাদা (মিশরীয়, বাংলাদেশি) বন্দিদের আলাদা করে রাখত। আমি জানি না কেন এভাবে ভাগ করে রাখা হতো।’
‘আমরা যখন প্রথম রাতে পৌঁছাই, সেখানে প্রচুর লোক ছিল। কারাগারটি এত জনবহুল ছিল যে আমরা ঘুমানোর জন্য শুতে পর্যন্ত পারিনি। কিছু দিন পরে তারা কিছু অভিবাসীদের অন্যান্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করে। আমরা মেঝেতে ঘুমাতাম, আবার কখনও কখনও কম্বল ছাড়াই, কারণ প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কম্বল ও তোষক ছিল না।’
লিবিয়ায় আটক কৃষ্ণাঙ্গদের গায়ে আর শক্তি নেই
‘সেখানে সবসময় অপর্যাপ্ত সংখ্যায় খাদ্য বিতরণ করা হয়। সকালে, আমরা কেবল একটি ছোট রুটি খেতাম ও সন্ধ্যায় ভাত বা পাস্তা দেওয়া হতো। এমনকি তারা আমাদের কোনো গরম খাবার না দিয়ে ঠান্ডা খাবার পরিবেশন করত।’
লিবিয়ায় থাকা কৃষ্ণাঙ্গদের গায়ে শক্তি নেই, তারা সত্যি ক্লান্ত
আমাদি বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বেশিরভাগ সময় কারাগারের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সময় ব্যয় করে থাকে তারা আমাদের খুব বেশি সহায়তা করত না। তারা আমাদের বলত, তারা আমাদের দেশে ফিরে যেতে সহায়তা করবে। তবে আমরা তাদের পরে আর কখনও দেখিনি। আমি জানি এটি তাদের দোষ নয়, লিবিয়ায় তাদের কাজ করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই।
‘অনেক লোক কারাগার থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। বাইরে থেকে কেউ যদি আপনার মুক্তির জন্য যোগাযোগ না করে সেক্ষেত্রে কয়েক মাস আপনি সেখানে থাকতে পারবেন। আপনি যদি বেশি দিন থাকেন তবে লিবিয়ানরা আপনাকে বিক্রি করে দেবে। আপনার কী হবে তা কেউ জানে না।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত অবশ্যই বন্দিদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে বা কমপক্ষে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করা। বিশেষত অত্যন্ত উত্তপ্ত আবহাওয়ায় লোকেরা খুব কষ্ট পাচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে, ইনফোমাইগ্রেন্টস অভিবাসীদের কাছ থেকে নিয়মিত বার্তা এসে থাকে যারা লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ পরিচালিত কেন্দ্রগুলিতে বিভিন্ন সময় অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। নির্বাসিতরা বিশেষ নির্যাতন, ছিনতাই, ধর্ষণ, জোরপূর্বক শ্রম, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপুষ্টি ও গুমসহ বিভিন্ন অভিযোগের কথা জানান।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
এমআরএম/জিকেএস