ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

হাতুড়ি নয়, শিশুদের হাতে খাতা-কলম তুলে দিন

আম্বিয়া অন্তরা | নিউইয়র্ক | প্রকাশিত: ১২:১৭ এএম, ১২ জুন ২০২১

নতুন বিশ্বের আলোকচিত্রে শিশুশ্রম একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এর মধ্যে গরিব দেশগুলোতে বেশি শিশুশ্রম লক্ষণীয়। কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করা হলেও মানবিক মূল্যবোধ এখানে ঢের অনুপস্থিত।

একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রম ষোলো কোটিতে পৌঁছেছে। চলমান করোনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। (আলজাজিরা)

১২ জুন, বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এই দিনটি পালিত হয়। করোনার এই সঙ্কটে গতবারের স্লোগান ছিল ‘যে কোনো সময়ের থেকে এই মুহূর্তে বেশি করে শিশুদের শিশুশ্রম থেকে বাঁচান’।

শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত এবং উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে এই দিনটি পালিত হয়।

১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ’ অনুমোদিত হয়। ১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শিশুশ্রম বন্ধ করতে কর্মসূচি নেয় এবং ২০০২ সালের ১২ জুন থেকে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা শুরু হয়।

আইএলও’র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে মোট ২৪ কোটি ৬০ লাখ শিশু বিভিন্নভাবে শ্রম বিক্রি করে। তার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ১৮ কোটি। কিন্তু বাস্তবে সেই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। এর মধ্যে হোটেল, রেস্তোরাঁ, কল-কারখানায় কাজ করা ছাড়াও রয়েছে মাদক উৎপাদন, পাচার, পর্নোগ্রাফি, যৌন-বিকৃতির মতো হাজারো অপরাধ।

সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই শিশুদের মধ্যে ৭১ শতাংশ মেয়ে। যাদের জীবন প্রায় ক্রীতদাসের মতো। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের সরকার শিশুশ্রম নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইতোমধ্যে ৩৮টি কাজকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত এক লাখ শিশুকে প্রত্যাহার করে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা দেয়া হবে।

সরকার জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি প্রণয়ন করেছে ২০১০ সালে। এ নীতি বাস্তবায়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং শিশুশ্রম নিরসন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য গঠিত জাতীয় বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো কাজ করছে।

কোনো শ্রমিকের সন্তান যাতে শ্রমে নিযুক্ত না হয়, সেজন্য তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে শিক্ষা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। শিশুশ্রম নিরসনে প্রয়োজন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপে ও জনসচেতনতা তৈরি।

শিশুশ্রম বেশিরভাগ সময়েই অপ্রকাশিত থাকে। আইএলও তার জন্য বিভিন্ন নির্দেশিকা জারি করেছে। এই শিশুশ্রম রোধের প্রধান পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি। তার থেকেও আগে প্রয়োজন গৃহীত নীতিগুলোর বাস্তবায়ন।

ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে, অন্যান্য শ্রমের মতো এটার সঙ্গেও আমরা অভ্যস্ত। যার ফলে দিবস হিসেবে পালন হলেও এক দিনের পরে কিংবা আদৌ এ ব্যাপারটা আমাদের বিবেকবোধে নাড়া দেয় না।

বলা হয়ে থাকে মানুষ দিনে দিনে আধুনিক হচ্ছে অপরদিকে মনুষত্ব কমছে। এ রকম পরস্পর বিপরীতমুখী অবয়ব বিশ্বে দাড়িয়ে যে কোনো বিষয়ের মানবিক সমাধান করাও কঠিন।

তবুও যা অকল্যাণকর কিংবা চির অমানবিক সে বিষয়ে সামাজিকভাবে আমাদের আরো সচেতন হয়ে উঠতে হবে। শিশু শ্রমের পরিবর্তে তাদের হাতে আমাদের খাতা কলম তুলে দিতে হবে। তখন তারও সুশিক্ষায় সু-নাগরিক হয়ে ওঠবে।

এমআরএম/এআরএ