ইউনিভার্সেল ভ্যাকসিন প্রস্তুতের ব্যাপারে এক অগ্রনায়কের ভূমিকা
কাজী এনায়েত উল্লাহ প্যারিস, ফ্রান্স
প্রফেসর আল বেশির বেন মোহাম্মদ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বে অগ্রনায়কের ভূমিকা পালন করছেন। মরক্কান বংশোদ্ভূত আমেরিকান বিজ্ঞানী ইউমনোলজি সেলুলার এবং মলিকুলার বিষয়ক গবেষণা করছেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার প্রস্টিজিয়াস এরভিন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিজ্ঞানী বলেন, মরণব্যাধি করোনার পরবর্তী অধ্যায় কোভিড-১৯ থেকে কোভিড-৩০ পর্যন্ত পৌঁছানো আগামী ১০ বছরের ব্যাপার মাত্র। এটা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হচ্ছে একটা ইউনিভার্সেল ভ্যাকসিন, যা করোনার যে কোনো ভার্সন থেকে মানবজাতীকে রক্ষা করবে।
কোভিডের উৎপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমস্ত ধারনার একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে ‘মানুষের চাইতে অনেক কম ইউমিনিটি সম্পন্ন প্রাণী হচ্ছে বাদুড়। যে কোনো ভাইরাস বাহক হিসেবে এরা সেরা। দশ বছরেরও অধিক সময় ধরে তারা অনেক ভাইরাস বহন করতে পারে। বাঁচেও ৪০-৪৫ বছর।
একটা সময় করোনা বাদুড়কে বাহক হিসেবে গ্রহণ করে দিন কাটাচ্ছিল, ওই বাদুড় থেকে করোনাভাইরাস পংগোলা নামের আরেক জন্তুর উপর আশ্রয় নেয়। জংলী পংগোলা চাইনিজদের খুব প্রিয় খাবার, চীনের উহান প্রদেশে এক বাজারে এক চাইনিজ পংগোলা কিনে সেটা খাওয়ার মধ্য দিয়েই করোনা মানব শরীরে প্রবেশ করেছে।
এটা মানুষের তৈরি কোনো ভাইরাস নয়। জেনেটিক ও ফেলোজেনেটিক পর্যবেক্ষণে তাই দেখা গেছে। যা চিন্তিত করেছে সারাস্কফ-২ বা কোভিড-১৯। বাদুড় এবং পংগোলার মাধ্যমেই যা পরিবাহিত হয়েছে। কথা হচ্ছে যে বাদুড়ের মধ্যে লালিত এই ভাইরাস ৫,১০,১৫,২০ বছরেও বিভিন্ন সময়ে মহামারি আকারে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
বর্তমানে ১৩টি ভিন্ন করোনাভাইরাস শনাক্ত করা গেছে। তিনি বলেন, এখন আমরা নজর দিয়েছি স্পাইক প্রোটিনের দিকে। যার সূত্র ধরেই তৈরি হয়েছে ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, জেনসেন। নতুন ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে অন্য সূত্র ধরে, বুঝতে হবে যে আরো ২৫টি প্রোটিনের সমন্বয়ে তৈরি হচ্ছে এই ইউনিভার্সেল ভ্যাকসিন। যা হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায়।
প্রথম এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। আমরা এখন প্রেক্লিনিক পর্যায়ে আছি, ১৫টি বিভিন্ন ফর্মুলাযুক্ত ভ্যাকসিন ইউমিনাইজ ইঁদুরের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। দেখা যাক, কোনো ভ্যাকসিনটা বিভিন্ন করোনা ভ্যারাইটিজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকরি হয় তা নিয়ে শুরু করা হবে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা।
২০২১ সালের শেষে বা ২০২২ সালের প্রথমদিকেই আশা করা যায়, বহু কাঙ্ক্ষিত ইউনিভার্সেল ভ্যাকসিন বের করা সম্ভব হবে এবং এতে করে স্থায়ীভাবে করোনা সমস্যার সমাধান ঘটবে।
বিখ্যাত ফরাসি রেডিও ‘ইউরোপ ১ এর সাংবাদিক সোনিয়া মাবরুককে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বখ্যাত এই গবেষক
বলেন, তিনি মরোক্কান, আমেরিকান নাগরিক। প্যারিসের বিখ্যাত পাস্তর ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে তিনি চলে যান আমেরিকায়।
উচ্চতর সুযোগ এবং গবেষণার জন্য আমেরিকায় বিশ্বের অনেক গবেষক পাড়ি জমায়। তিনি ফ্রান্সে থাকাকালীন যারা তাকে সহযোগিতা করেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এমআরএম/জিকেএস