আয়ারল্যান্ড ততটা ধনী নয়, যতটা বলা হয়
সৈয়দ আতিকুর রব, আয়ারল্যান্ড থেকে
আইরিশ অর্থনীতির অগ্রগতির কথা সংখ্যাতত্ত্বে যেভাবে প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়, বাস্তবে সেই অগ্রগতিটা অনুভূত হয় না নাগরিক জীবনে। মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির হিসেবে আয়ারল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর একটি হলেও তার সঠিক প্রভাব দেশটির অর্থনীতিতে পড়ে না।
সর্বশেষ হিসেবে দেখা গেছে, আয়ারল্যান্ডের মাথাপিছু মোট জাতীয় উৎপাদন বিশ্বের ১৮২টি দেশের মধ্যে পঞ্চম। অথবা জনসংখ্যা ৫ লাখের কম এমন দেশগুলোকে বাদ দিলে এই তালিকায় আয়ারল্যান্ডের অবস্থান হয় তৃতীয় (কাতার ও সিঙ্গাপুরের পর) আর ইউরোপে প্রথম; কিন্তু আয়ারল্যান্ডের কোনো নাগরিক প্রকৃত অর্থে হয়ত বিশ্বাস করবে না দেশটি এতটা ধনী বা সমৃদ্ধ। কারণ তাদের ব্যক্তিগত জীবনে এই পরিসংখ্যানের প্রভাব পড়েনি।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্যাট্রিক হনোহানের গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছে, জিডিপির আলোকে অর্থনৈতিক অবস্থা পরিমাপ করার কিছু অসঙ্গতি। এর প্রথম কারণ হলো আয়ারল্যান্ডের বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো। এসব কোম্পানির উৎপাদন আয়ারল্যান্ডের জিডিপি হিসেবে গণ্য হলেও এর মুনাফার ভাগটি চলে যায় এই কোম্পানিগুলোর বিদেশি মালিকদের কাছে। তার দাবি আইরিশ অর্থনীতি নিয়ে পরিসংখ্যানে ভুল চিত্র রয়েছে।
সম্প্রতি মেধা সম্পত্তি বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টির ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান নিয়ে অসঙ্গতির কথা শোনা যাচ্ছে। যেমন কোনো পণ্যের পেটেন্ট হয়তো নতুন করে আয়ারল্যান্ডে স্থানান্তরিত হচ্ছে। আবার কোনো বিমান বহর, যা বিদেশে মোতায়েন রয়েছে; কিন্তু সেটি আয়ারল্যান্ডেরই কোনো লিজিং কোম্পানির অধীন। ২০১৫ সালে এমন কিছু বিষয়ের কারণে আয়ারল্যান্ডের জিডিপি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে পরিসংখ্যানে।
প্যাট্রিক হনোহানেরর মতে, জাতীয় আয় পরিমাপের কিছু ফরমায়েশি পদ্ধতির কারণে আয়ারল্যান্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা র্যাংঙ্কিংয়ে উপরের দিকেই স্থান পায়। ২০১৯ সালে দেশটির মোট জাতীয় আয় ছিল মোট জাতীয় উৎপাদনের চেয়ে ৪০ শতাংশ কম।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘জিডিপির জন্য পরিবর্তিত এই পদ্ধতিটি (মোট জাতীয় আয়) হিসাব করলে দেখা যাবে ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নে দ্বিতীয় নয়, বরং অষ্টম স্থানে নেমে যাবে’।
তিনি উল্লেখ করেন, বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে নাগরিকদের প্রকৃত ব্যক্তিগত খরচ হিসাব করলেও দেখা যাবে ২০১৯ সালে আইরিশদের মাথাপিছু খরচ ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের নাগরিকদের গড় খরচের ৯৫ শতাংশ। কাজেই এই পদ্ধতিতে হিসেব করলে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানের চেয়েও নিচে অবস্থান করছি।
এই পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক অবস্থা হিসেব করলে আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয়ান ইকোনমিক কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছয়টি দেশের সবার পেছনে পড়ে যায়। এমনকি অস্ট্রিয়া ও নরডিক অঞ্চলের দেশগুলোর চেয়েও পেছনে থাকবে বলে জানান প্যাট্রিক হনোহান।
কাজেই জিডিপি বাদ দিয়ে হিসাব করলে দেখা যাবে আয়ারল্যান্ড ইইউতে অর্থনৈতিক অবস্থার দিক থেকে প্রথম নয়, বরং ৮ থেকে ১২তম অবস্থানের মাঝে থাকবে। হনোহানের ভাষায় যা, সাধারণের অনুমানের চেয়েও নিচে। সূত্র : আইরিশ টাইমস
এমআরএম/এমকেএইচ