ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

ইউরোপে বসবাস ও নাগরিকত্বের সুযোগ

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২১

ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী, পর্তুগাল থেকে

ইউরোপ হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক সমৃদ্ধ মহাদেশ। শুধু যে ইউরোপ ইতিহাস সমৃদ্ধ হয়েছে তা নয়; সাথে সাথে তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পেরেছে। বলতে গেলে বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ বিপ্লবের মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করেছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

এরপরে ইউরোপকে আর তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা সইতে হয়নি। অর্থনীতির চাকা গতিশীলতা বিবেচনা করলে কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব থেকে শুরু করে আধুনিক প্রযুক্তির অধিকাংশই ইউরোপ দ্বারা সৃষ্টি। সে কারণেই উন্নত বিশ্বের আরেক নাম ইউরোপ।

সংগত কারণেই বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জীবনের জন্য সবাই ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে চায়। সঠিক পন্থা না জানার কারণে মানুষ বিপরীতমুখী হয়ে স্বপ্নযাত্রায় বেরিয়ে পড়ে। অনেকেই প্রতারিত এবং বিপদের সম্মুখীন হন।

তবে একটি পরিকল্পনা করলে খুব সহজেই যে যার অবস্থান থেকে ইউরোপে যেতে পারেন এবং প্রতিটি দেশের নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন।

পাঁচটি উপায়ে ইউরোপে বসবাসের সুযোগ

চলুন জেনে নেয়া যাক কী কী উপায়ে আপনি ইউরোপের যেতে পারেন এবং বসবাসের সুযোগ পাবেন। প্রধানত পাঁচটি উপায়ে আপনি ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন। প্রথমত হাইলি কোয়ালিফাইড ওয়ার্কার বা উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী অর্থাৎ প্রফেশনাল, আন্ত: কোম্পানি স্থানান্তর কর্মী, গবেষক, ছাত্র, ভলেন্টিয়ার বা অবৈতনিক কর্মী।

এছাড়া আপনি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভ্রমণ করতে যদি পর্তুগাল, স্পেন এবং ইতালিতে চাকরি খুঁজে পান সেক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করা সম্ভব। আজকে আমরা আলোচনা করব শুধুমাত্র হাইলি কোয়ালিফাইড ওয়ার্কার বা উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী এই প্রোগ্রামকে ইইউ ব্লু-কার্ড হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়।

ইইউ ব্লু-কার্ড কী?

উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য এটি একটি স্কিম যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের উক্ত উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদের ইইউ বসবাস এবং কাজ করার অধিকার দেয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় আপনাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি এবং কাজের দক্ষতা থাকতে হবে।

ডেনমার্কে এবং আয়ারল্যান্ড ছাড়া ইইউ-এর বাকি ২৫টি দেশে এই প্রোগ্রামের আওতায় বসবাস এবং চাকরি করতে পারবেন। তাছাড়া জব কন্টাক্ট এবং যে দেশে আবেদন করবেন তাদের গড় বেতনের দেড় গুণ বা এ প্রোগ্রাম দ্বারা নির্দিষ্ট বেতনের সমপরিমাণ বেতন পাওয়ার অধিকারী হতে হবে।

ইইউ ব্লু কার্ডের জন্য প্রতিটি দেশেরই আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। চলুন জেনে নেই পর্তুগালের প্রেক্ষাপটের ব্লু-কার্ডের জন্য আপনার কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন এবং কিভাবে আপনি আবেদন করতে পারবেন।

আপনার কী কী যোগ্যতা প্রয়োজন

আবেদনকারীকে পর্তুগালের যে কোনো কোম্পানিতে কমপক্ষে এক বছরের চাকরির চুক্তিপত্র (কন্ট্রাক বা অ্যাপয়নমেন্ট লেটার লাগবে (উভয় ক্ষেত্রেই পেশাগত প্রমাণের জন্য স্থানীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সত্যায়নসহ)। উক্ত চাকরির বেতন পর্তুগালের গড় বেতন কাঠামো ১ দশমিক ৫ গুণ হিসেবে ২৪ হাজার ৫৩৫ ইউরো বাৎসরিক বেতন পাওয়ার অধিকারী হতে হবে।

আবেদনকারীর পেশা পর্তুগালের আইন অনুযায়ী স্বীকৃত হতে হবে। রেগুলেটেড চাকরির ক্ষেত্রে এবং সে অনুযায়ী প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে হবে। নন রেগুলেটর চাকরির ক্ষেত্রে উচ্চ পেশাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে। মেডিকেল ইনস্যুরেন্স এবং ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট অর্থাৎ পাসপোর্ট, রেসিডেন্ট কার্ড (যারা ইতোমধ্যে ইউরোপের অন্যান্য দেশে আছেন তাদের ক্ষেত্রে)।

এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায় আপনি কীভাবে চাকরি জোগাড় করবেন? ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চাকরির সাইট রয়েছে ইউরেস (EURES) এখানে বিভিন্ন পেশাগত হাজার হাজার চাকরির সুযোগ রয়েছে এবং আপনি দেশ মোতাবেক চাকরি সংস্থান করে নিতে পারবেন।

তাছাড়া আপনি বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে চাকরির সংস্থান করতে পারেন। আমাদের দেশ থেকে না হলেও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী ইউরোপে কাজ করছেন।

কোথায় আবেদন করবেন

ইইউ ব্লু-কার্ড প্রোগ্রামের আওতায় আপনাকে পর্তুগালের যেতে হলে প্রথমে একটি স্বল্পমেয়াদি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করতে হবে। পর্তুগালের ক্ষেত্রে সাধারণত ডি-৩ ভিসার আবেদন করতে হয়।

ভিসা আবেদনের জন্য, আপনাকে পর্তুগালে বা ইইউ-এর যে দেশে আপনি চাকরি পেয়েছেন তার চুক্তিপত্রের কপি অথবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স, পেশাগত সার্টিফিকেট, রিটার্ন টিকিট এবং পাসপোর্ট সহকারে সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বাসিতে জমা দিতে হবে। অনেকক্ষেত্রে অ্যাম্বাসি কার্যক্রম ভিএসএফ-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়; সেক্ষেত্রে আপনি ভিএসএফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে জমা দিতে পারেন।

পর্তুগালে প্রবেশ করার পর আর্টিকেল ১২১-(এ) টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আপনাকে পর্তুগাল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ (এসইএফ) অ্যাপয়নমেন্ট নিতে হবে। অ্যাপয়নমেন্ট তারিখে আপনাকে কাজের চুক্তিপত্র (উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে), বসবাসের ঠিকানা, সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, নিজ দেশের এবং পর্তুগালের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং ইতোপূর্বে অন্য কোনো দেশে থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইত্যাদি উপস্থাপন করতে হয়।

সবকিছু ঠিক থাকলে বর্তমানে অস্থায়ী রেসিডেন্ট পার্মিট প্রথমে দুই বছরের জন্য পাবেন এবং পরবর্তীতে নবায়ন করলে তিন বছরের মেয়াদ প্রদান করা হবে।

ইইউ ব্লু-কার্ডের ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে চাকরি এবং বেতনের হিসাব অনুযায়ী যদি ঠিক থাকে তাহলে একশভাগ ভিসা পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে পর্তুগালের রেসিডেন্ট পেতেও কোনো সমস্যা হয় না। তবে ইতোপূর্বে যদি ইউরোপের যে কোনো দেশে ভিসা আবেদন করে রিফিউজ হয়ে থাকেন অথবা ইতোপূর্বে আপনাকে ইউরোপের কোন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে অথবা আপনি কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড করেছেন; সেক্ষেত্রে এটি গ্রহণযোগ্য হবে না অর্থাৎ আপনার ভিসা আবেদন গ্রহণ করবে না।

তাছাড়া পর্তুগালে আসার পর যদি কোনো কারণে পর্তুগাল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপনাকে আবেদন রিফিউজ করে সেক্ষেত্রে আপনার আপিল করার অধিকার থাকবে। পর্তুগালের রেসিডেন্ট কার্ড পাবার পর কোনো কারণে যদি আপনার চাকরি চলে যায় এবং যদি রেসিডেন্ট কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাহলে নতুন চাকরি পাওয়ার আগে আপনি তা নবায়ন করতে পারবেন।

ইচ্ছা করলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে যদি যে কোনো প্রকার ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রে খুব সহজেই ব্যবসায়িক অ্যাক্টিভিটি খুলে আপনি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

পর্তুগালে ৫ বছর অস্থায়ী রেসিডেন্ট হিসেবে বসবাস করার পর পর্তুগিজ ভাষা সম্পর্কে দক্ষতাসহ পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষা সনদ থাকলে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কার্ড বা লং টাইম রেসিডেন্ট কার্ডের জন্য আবেদন করা যায়। একই সঙ্গে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব আবেদন করা যায় এবং আবেদনের তিনমাস থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভ করা যায়।

ইইউ ব্লু কার্ডের ক্ষেত্রে ইউরোপের সকল দেশের ক্ষেত্রে সাধারণত একই নিয়ম। তবে পার্থক্যটা হয় ওই দেশের গড় বেতনে পরিমাণের উপর এবং নির্দিষ্ট চাকরি নিয়ে আপনি যাচ্ছেন সেই চাকরি ক্ষেত্রে যদি তাদের লোক কম থাকে।

এর বাইরে ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশভেদে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি যেই পেশাগত কাজে বা যে ধরনের পেশায় যাচ্ছেন অবশ্যই ওই পেশায় যে দেশে যাচ্ছেন সে দেশের স্থানীয় পেশাজীবী অপ্রতুল হলে বা চাহিদা পূরণে অক্ষম হলে সে ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য হবে।

ইইউ ব্লু-কার্ডের সাথে সাধারণ ওয়ার্ক পারমিটের অনেক পার্থক্য রয়েছে। কেননা ব্লু-কার্ডের মাধ্যমে আপনি ইউরোপের যে দেশেই থাকুন না কেন পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে গেলে অথবা নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে আপনি ইউরোপের অন্য দেশে থাকাকালীন হিসাব করা হয়।

ধরুন আপনি ইতোপূর্বে জার্মানিতে তিন বছর কাজ করেছেন ব্লু কার্ডের মাধ্যমে। এখন যদি আপনি পর্তুগালে একইভাবে চাকরি জোগাড় করে থাকতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার দুই বছর থাকলেই আপনি স্থায়ী (পার্মানেন্ট) রেসিডেন্ট বা দীর্ঘমেয়াদি রেসিডেন্ট আবেদন করতে পারবেন।

নাগরিকত্বের ক্ষেত্রেও কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। তবে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে যে নাগরিকত্ব আইন প্রতিবেশী খুবই দ্রুত পরিবর্তন এবং সংশোধন করছে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে দেশের অর্পিত আইন কার্যকর হবে।

লেখক: ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী, সমাজকর্মী ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, পর্তুগাল থেকে, [email protected]

এমআরএম/জিকেএস