মিশিগানের বাঙালিপাড়ায় বাড়ছে করোনা আক্রান্ত
তোফায়েল রেজা সোহেল, মিশিগান (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হেমট্রামিক, ডেট্রয়েট এবং ওয়ারেন সিটির বাঙালিপাড়ায় বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ রাজ্যে প্রথম ঢেউয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে আক্রান্তের হার কম থাকলেও এখন দ্বিতীয় ঢেউয়ে এসে ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ে এখন পর্যন্ত চারজন বাংলাদেশি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পরিবার। কমিউনিটির নেতারা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে অন্তত দুইশতাধিক বাংলাদেশি করোনায় ভুগছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলার কারণে সম্প্রতি সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে।
জানা গেছে, জটিলভাবে আক্রান্তরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃদুভাবে সংক্রমিত কোভিট রোগীরা হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ডেট্রয়েট সিটির চেরেস্টে ও হেমট্রামিক সিটির ক্যানিফ ব্লকে বেশ কয়েটি পরিবার লকডাউনে আছেন। যাদের প্রায় সবাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তাদের বেশিরভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওয়ারেন সিটির ১০ মাইলের বাসিন্দা দু’জন নারী-পুরুষ আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের ভ্যান্টিলেশনে আছেন। বাঙালি একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ২৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ৯ মাইল, ১০ মাইল, ১৫ মাইল, ১৮ মাইল ও ২৬ মাইলে গাড়ির ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন এমন বেশ কিছু বাংলাদেশি করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
জানা গেছে, তারা সবাই হেমট্রামিক ও ডেট্রয়েট সিটির বাসিন্দা। সুমি আক্তার ও জামাল আহমেদ নামে দু’জন সুস্থ হয়ে ২৩ মাইলের একটি কোম্পানির কাজে ফের যোগ দিয়েছেন। ওয়ারেন সিটির একটি এপার্টমেন্টে থাকেন কয়েকজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কাজের সন্ধানে নিউইয়র্ক থেকে মিশিগানে অবস্থান নেয়া আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কেউ কেউ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রেজিস্ট্রার নার্স শারমিন আক্তার সূচি জাগো নিউজকে জানান, কমিউনিটির অনেকে করোনাকে পাত্তা দেননি। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা শুরু করেন। এই অবহেলা বা অসতর্কতাই এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেছেন, কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব মানা হয়নি। অবাধে মেলামেশার কারণে করোনার প্রকোপ বেড়েছে। এছাড়া ছুটির দিনে রেস্টুরেন্টগুলোতে জটলা বেঁধে আড্ডা দেয়ার কারণে অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন।
এমনিতে জাতিগতভাবে আমাদের ইউমিন সিস্টেম দুর্বল। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। চিকিৎসকদের পরামর্শ, নিজের খেয়াল খুশি মতো নয়, সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কারণ করোনা এখনও শেষ হয়নি।
মিশিগান স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, রাজ্যে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৫ হাজার করোনা আক্রান্ত অতিক্রম করেছে। সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ১০ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ সাড়ে ৯ হাজার। গত ১ সপ্তাহে ১০ হাজার ২৪১ জন সংক্রমিত হয়েছেন।
গড়ে প্রতিদিন ১৪৬৩ জন নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। মিশিগান হেলথ অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের সিইও ব্রায়ান পিটার্স গণমাধ্যমকে বলেন, মিশিগানে হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর ভর্তির সংখ্যা ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমআরএম