মালয়েশিয়া হাইকমিশনের এ কেমন খাদ্য সহায়তা!
মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে ভাইরাস ঠেকাতে মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার (গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ আদেশ) এখনও জারি রয়েছে দেশটিতে। এমন পরিস্থিতিতে কোয়ারেন্টাইনে (সঙ্গরোধ) থাকা বাংলাদেশিরা কঠিন সময় পার করছেন।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের খাদ্য সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন জনহিতৈষী ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। তারা জানাচ্ছেন, দেশটিতে জারি করা মুভমেন্ট কন্ট্রোলের কারণে খাদ্য পৌঁছানোটাও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে সমস্যায় থাকা প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদত্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান নিয়ে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দূতাবাস কর্তৃক খাদ্য সহায়তা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশনের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসীরা।
গত দু’দিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠলে রোববার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক নোটিশে বলা হয়, সমস্যায় পড়া প্রবাসী যারাই আবেদন করছেন তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে দূতাবাস থেকে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী।
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক জারি করা মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার- এমসিও’র কারণে কাজকর্ম বন্ধ করে নিজ নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করতে হচ্ছে। সেখানে চলাফেরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ায় অবস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে ‘খাদ্য চাহিদা ফরম’ পূরণের আহ্বান জানায়। প্রাপ্ত আবেদনসমূহ যাচাই-বাছাইকালে দেখা গেছে, অনেকে একাধিক ফরম পূরণ করেছেন, অনেকে পরীক্ষা করার জন্য ফরম পূরণ করেছেন, অনেকে প্রয়োজন নাই বলে জানিয়েছেন। এভাবে প্রাপ্ত ৬৫০০ জনকে খাবার সহায়তা প্রদান করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১৮ শ'র অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে গেছে। এখন পর্যন্ত কুয়ালালামপুর, পুত্রজায়া ও সেলাঙ্গরের বিভিন্ন এলাকায়/লোকেশনে অবস্থিত ‘খাদ্য চাহিদা ফরম’ পূরণ করা বাংলাদেশি নাগরিকের আবাসস্থল/বাসা/বাড়িতে (দোর গোড়ায়) এ খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একইভাবে অন্যদের নিকট পর্যায়ক্রমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
কঠোরভাবে চলাচল নিয়ন্ত্রণ এবং করোনাভাইরাস সংক্রমিত হবার আশঙ্কার মধ্যেই নানা নিয়মকানুন পরিপালন করে খাদ্য সহায়তা পৌঁছতে বিলম্ব হচ্ছে। হাইকমিশন প্রদত্ত খাদ্য সহায়তা মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশি নাগরিকদের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। এ মহাদুর্যোগে এগিয়ে আসার জন্য ভলান্টিয়ারদের ধন্যবাদ জানিয়েছে দূতাবাস।
এছাড়া কুয়ালালামপুরে লকডাউন করা তিনটি ভবনে (সিটি ওয়ান প্লাজা, সেলাংগর ম্যানসন ও মালয়ান ম্যানশন) অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিকট খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সারা পৃথিবীতে চলমান এ মহাদুর্যোগে হাইকমিশন যখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করার ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছে তখন এসব নিয়ে বিভিন্নভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য কেউ কেউ অপচেষ্টা চালাচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। যাবতীয় সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বিধায় বিভ্রান্ত না হবার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো।’
এদিকে সরকার ঘোষিত লকডাউনের সময় বিদেশি কর্মীদের বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা পাননি বলে জানিয়েছেন অনেক কর্মী। কিছু কিছু কোম্পানি চাচ্ছে না এ সময়ে শ্রমিকদের বেতন বুঝিয়ে দিতে। এ নিয়ে অভিবাসীকর্মীরা রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। দায় হয়ে উঠেছে তাদের খরচ মেটানোর। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। বৈধ-অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে খাদ্য সহায়তা বিতরণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে।
এমএআর/জেআইএম