করোনায় স্থবির যুক্তরাষ্ট্র, বাংলা টাউনে প্রশংসিত বাংলাদেশিরা
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনার প্রভাবে নিউইয়র্কের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সকল অঙ্গরাজ্যের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাসিনো, পানশালা, রেস্টুরেন্ট বন্ধ দিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। সকল সরকারি ও বেসরকারি অফিস ও আদালতের বন্ধ ঘোষণা করে বাসায় থেকে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়।
এদিকে, গত ১৩ মার্চ হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে ইউরোপের দেশ থেকে আমেরিকায় ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের গভর্নররা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় গণজমায়েত না করার জন্য বলা হয়েছে।
ইন্ডোর ও মাঠের সকল খেলাধুলার ইভেন্ট বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। সকল সামাজিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীসহ সকল পারিবারিক অনুষ্ঠানও বাতিল করা হচ্ছে। সকলে ঘরে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন। রাস্তাঘাটে জনসমাগম নেই।
গত শুক্রবার রাজ্যের সকল মসজিদে জুম্মার নামাজে কোনো জামাত হয়নি। কানাডা-আমেরিকার জনপ্রিয় ও ব্যস্ত ব্রিজ সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরের পর থমকে যায়। কানাডা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সকল বর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ভীতির কারণে সকলে শুকনা খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল খাবার কেনার কারণে দোকানগুলোতে খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুধু বাঙালি ও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দামের কারসাজি করছেন। আমেরিকান দোকানে পণ্যের দাম বাড়েনি, তবে তাদের মজুত শেষ হয়ে গেছে প্রায়। অনেক দোকানে নতুন করে খাবার ও পানীয় তোলা হয়েছে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
নগরীর সকল স্কুল-কলেজগুলো বাসায় বসে পড়াশুনার জন্য পর্যাপ্ত হোমওয়ার্ক ও অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বড় বড় সব শপিং মলে জনসমাগম চোখে পড়ছে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে কিছু মানুষের দেখা মিলেছে বড় সব গ্রোসারিগুলোতে। টুকটাক তৈজসপত্র কিনে খুব তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার তাড়া সবার মধ্যে। শপিংমলগুলো দুপুর ১২টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানানো হয়। বয়স্কদের ঘর থেকে না বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
মিশিগানের কিছু বাংলাদেশি গ্রোসারি দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা এই সুযোগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, আদা, রসুন ও ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে মিশিগানের বাংলা টাউনে বাংলাদেশি এক গ্রোসারি মালিক বাংলাদেশিদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করেছেন। যা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমেরিকায়ও বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকায় সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি বিরাজ করছে- ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে। এর মধ্যে নিউইয়র্কের নিউ রচেল শহরে এক মাইল ব্যাসার্ধ ধরে চিহ্নিত অঞ্চলকে ‘কনটেইনমেন্ট এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছে। মিশিগানে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের গতিবিধি জেনে ওই সময়ে ওই সকল স্থানে যারা গিয়েছেন তাদেরকে ‘সেলফ কন্টেইনমেন্ট’এ থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের কোন পরিচয় প্রচার না করলেও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সকল গতিবিধি স্থানীয় গণ মাধ্যমে প্রচার করেছেন।
এফআর/এমএস