স্লোভেনিয়ায় করোনায় আক্রান্ত ২৫৩, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ক্রমেই বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। আর মধ্য ইউরোপের ছোট্ট দেশ স্লোভেনিয়াতে ধীরে ধীরে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে নোবেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ।
এখন পর্যন্ত দেশটিতে ২৫৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আশঙ্কার বিষয়, দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কেউ সুস্থ হয়ে ওঠেনি। ২৫২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইতিমধ্যে, মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে দেশটির অভ্যন্তরে সকল ধরনের গণপরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও ট্যাক্সিও চলাচল করছে না। দেশটির রাজধানী লুবলিয়ানাতে অবস্থিত ইয়োজে পুচনিক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সকল ধরনের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিউজিয়াম, গ্যালারি, রেস্টুরেন্ট এবং কফিশপ যেখানে একইসঙ্গে অনেক মানুষের সমাগম হয়, সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত স্লোভেনিয়াতে সকল শিক্ষাপ্ৰতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পোস্টঅফিস, ব্যাংক, ফার্মেসি, পেট্রলপাম্প এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ রয়েছে।
ভয়াবহ এ ভাইরাসের কারণে স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। মার্কাটোর, ফামা, স্পার, লিডল, হফারসহ যাবতীয় চেইনশপগুলো তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রত্যেকটি শপে একজন কিংবা একই পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। সুপারশপগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। ক্রেতাদের অনেকে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রাস্তাঘাট কিংবা দর্শনীয় স্থানগুলো বলতে গেলে এখন অনেকটাই ফাঁকা এবং সে রকম কোনো মানুষের উপস্থিতিও চোখে পড়েনি।
প্রতিবেশী দেশ ইতালির সঙ্গে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তে স্পেশাল মেডিকেল চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে তীব্র যানজট দেখা যাচ্ছে এবং গতকাল ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তে পণ্যবাহী ভারী ট্রাকগুলো প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে আটকে থাকার খবরও স্লোভেনিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গেও সীমান্ত সংযোগ বন্ধ করে দিতে পারে স্লোভেনিয়া।
তবে কারও শরীরে কোবিড-১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ তাকে ১১২ অথবা ০৮০১৪০৪ নম্বরে ফোন করার জন্য দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪ মার্চ স্লোভেনিয়াতে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি মূলত মরোক্কো থেকে ফেরার সময় ইতালি হয়ে স্লোভেনিয়াতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর থেকে ধীরে ধীরে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা ছাড়িয়ে অস্ট্রিয়ার সীমান্তবর্তী এবং স্লোভেনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মারিবোর, পোর্ট সিটি খ্যাত কপার, নোভা গোরিছা, ক্রানিয়ে, ছেলইয়ে, ম্যাটলিকা সব জায়গায় এ করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে এবং প্রতিনিয়তই এ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
রাকিব হাসান, স্লোভেনিয়া/এফআর/এমকেএইচ