ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মালয়েশিয়ায় সাজা শেষে ফিরলেন ৪১ হাজার অভিবাসী

আহমাদুল কবির | প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সাজা শেষে ৪১ হাজার ৪১ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী ১২ হাজার ৪৪৮টি অভিযান পরিচালনার মাধ্য দিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৭ জন বিদেশি নাগরিকের নথিপত্র যাচাই করা হয় এবং এদের মধ্য থেকে ৩৬ হাজার ৬৬৪ জনকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক করা হয়।

এই সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের চাকরি দেয়া অথবা তাদেরকে সহায়তা করায় ৯’শ ২২ জন চাকরিদাতাদেরও আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে রয়েছে- ১২ হাজার ১৪২ জন ইন্দোনেশিয়ান, ৮ হাজার ৫৬ জন বাংলাদেশি, ৩ হাজার ৬৩৫ জন মিয়ানমার, ৩ হাজার ১৪৯ জন ফিলিপিন, ২ হাজার ১২৭ জন থাই, ২ হাজার ৬ জন ভারতীয়, ১ হাজার ৪৩৬ জন পাকিস্থান, ১ হাজার ৩১৩ জন ভিয়েতনাম, ৮শ’ জন চীনা, ৭৬৫ জন নেপালিস এবং ১ হাজার ২১৫ জনসহ অন্যান্য দেশের নাগরিককে আটক করা হয়।

এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬ (১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

ইতোমধ্যে বহু বিদেশি অভিবাসী যার যার দেশে ফেরত গেলেও গুরুতর অপরাধে ৯ হাজার ৫৩২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে অভিবাসন বিভাগ। এসব বন্দিদের সাজা শেষে দেশে ফেরত যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন তা জানা যায়নি।

এদিকে মালয়েশিযার ১৪টি ইমিগ্রেশন ডিটেনশন ডিপোতে আটক ৯ হাজার ৫৩২ অবৈধ অভিবাসীদের খাবারের পিছনে প্রতি মাসে ৩.৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত ব্যয় করছে বলে জানান ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি দাউদ।

পরিচালক বলেন, ১৪টি ইমিগ্রেশন ডিপোতে আটক এসব অবৈধ অভিবাসীদের এক থেকে দুই মাসের জন্য সেখানে রাখা হয়। সেখান থেকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে তাদের কূটনৈতিক মিশন (দূতাবাস) দ্বারা পরিচয় ও আনুষঙ্গিক কার্যাদী সম্পন্ন শেষে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

তিনি আরও বলেন, বুকিত জলিল, কুয়ালালামপুর, কেলআইএ, সেপাং, লেংগিং, নেগরি সেমবিলান, জুরু ও পুলাউ পেনাং ডিপো থেকে আটকদের মধ্যে কিছু অভিবাসীদের দ্রুত যার যার দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ার প্রতিটি ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা। দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছে তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে। যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাগ্য ফেরানোর আশায় দালালদের প্রলোভনে পরিবারে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অনেক যুবক লুফে নেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরুর আগে তারা উপলব্ধি করতে পারেননি, কী আছে সামনে। ভাগ্য বদলের নেশায় তারা বিভোর তখন।

সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগরপথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এ যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ।

এসব বন্দি বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটেমাটি, সহায়-সম্বল বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টানছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ প্রাণহানি ঘটছে, কেউ ধরা পড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে। কেউবা প্রতারকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন। সহায়-সম্বল বিক্রি করে টাকা দেয়ার পর মুক্তি মিলছে কারও।

হাইকমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল জানান, বন্দি শিবিরে যারা আটক রয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দি শিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, একটি ক্যাম্প থেকে তালিকা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিলম্ব হওয়ায় দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে সমস্যা হয়। আবার ক্যাম্প থেকে তালিকা পাঠানো হলেও ব্যক্তির ফরম থাকে না। পরে ক্যাম্পে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসতে হয়। তারপরও দ্রুত বন্দিদের দেশে পাঠাতে দূতাবাস কাজ করে যাচ্ছে।’

যাদের কেউ নেই অথবা টিকিটের ব্যবস্থা হচ্ছে না, তাদের দূতাবাসের পাশাপাশি জনহিতৈষী কাজে নিয়োজিতদের সহযোগিতায় বিমান টিকিট দিয়ে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এমআরএম/এমকেএইচ

আরও পড়ুন