মালয়েশিয়ায় চার বাংলাদেশির কারাদণ্ড
মালয়েশিয়ায় চার বাংলাদেশির ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। একই সঙ্গে, তাদের প্রত্যেককে ১৫ হাজার করে মোট ৬০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার সিপাংয়ের একটি আদালত এ রায় দিয়েছেন।
ওই চার বাংলাদেশি হলেন-মনিরুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, দিপু ও রহমান।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির অধীনে গত ৩ সেপ্টেম্বর তারা দেশে ফিরছিলেন। তবে মালয়েশিয়া এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে চেক করার সময় তাদের কাছে জাল নথিপত্র পায় পুলিশ। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাবনার মনিরুল ইসলাম দূতাবাসে না গিয়ে কোতারায়া বাংলা মার্কেটে ফাদঁ পেতে থাকা বাংলাদেশি প্রতারক রাজিবের সঙ্গে পরিচয় হন। রাজিব তার ট্রাভেল পাস মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের স্পেশাল পাস করে দেবে বলে তার সঙ্গে দুই হাজার রিঙ্গিতে চুক্তি করেন। ওই দিনই চুক্তি অনুযায়ী রাজিবের হাতে দুই হাজার রিঙ্গিত তুলে দেন মনিরুল।
তিনদিন পর এয়ার টিকিট, ট্রাভেল পাস, স্পেশাল পাস মনিরুলকে বুঝিয়ে দেন প্রতারক রাজিব। ৩ সেপ্টেম্বর এয়ারপোর্টে বোর্ডিংকাড নিয়ে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর ডিউটিরত অফিসার তাকে গ্রেফতার করেন। তার এয়ার টিকিট, ট্রাভেল পাস, স্পেশাল পাস-সবই জাল ছিল।
এই স্পেশাল পাসে ২০১৭ সালে আব্দুল গনি নামে একজন বাংলাদেশে এসেছেন। দূতাবাস থেকে যে ট্রাভেল পাস ইস্যু দেখানো হয়েছে সেটিও জাল। ১২ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার সেপাংয়ের একটি আদালতে মনিরুলকে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাল নথিপত্র শো করার কারণে দোষী সাব্যস্ত করে ১৫ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা ও ৬ মাসের জেল প্রদান করেন আদালত। শুধু মনিরুলই নয়, খলিলুর রহমান, দিপু ও রহমান নামের আরও তিন বাংলাদেশিকে একই সাজার রায় প্রদান করেন আদালত।
মালয়েশিয়া থেকে অবৈধ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরছেন। গত ৫ সপ্তাহে ২৮ হাজার অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশটির সরকার ১ আগস্ট থেকে ‘ব্যাক ফর গুড’ নামে একটি নতুন স্কিম চালু করছে, যা সেখানে অনিবন্ধিত শ্রমিকদের বিনা বিচারে তাদের নিজ দেশে ফিরে আসতে পারবে।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, স্পেশাল পাস (এসপি) পেতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এখানকার বাংলাদেশিরা। ইমিগ্রেশনের ফ্লোরে রাত কাটিয়েও ইমিগ্রেশনের নানা অব্যবস্থাপনার কারণে এসপি পেতে তিন থেকে চারদিন ঘুরতে হচ্ছে বলে অভিযোগ প্রবাসীদের। আবার সম্প্রতি শেষ হওয়া বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেও এখনো ভিসা না পাওয়া অনেকেই বিরক্ত হয়ে দেশে ফেরত যেতে চাচ্ছেন। তাদের এসপি না দিয়ে ফেরত দেয়া হচ্ছে ইমিগ্রেশন থেকে।
ইমিগ্রেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুত্রাজায়া, জ্বালান দোতা এবং শাহ আলম ইমিগ্রেশনে অতিরিক্ত লোক সমাগম হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রাদেশিক ইমিগ্রেশন অফিস কিছুটা ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য আরও প্রায় পনেরটি দেশের অভিবাসীরাও এ কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা, যারা যে প্রদেশে আছেন তাদেরকে সে প্রদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন দূতাবাসে ট্রাভেল পাস নিতে আসা প্রবাসীদের। তাছাড়া বিমান ভ্রমণের তারিখের ৫ দিন আগে ইমিগ্রেশনে গেলে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আম্পাংয়ে অবস্থিত পাসপোর্ট সার্ভিস কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন টিপি (ট্রাভেল পাস) দেয়া হচ্ছে। যাদের পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ, নষ্ট বা হারিয়ে গেছে তাদের জন্যই মূলত টিপি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নেই, সাগরপথে পাচার হয়ে এসেছেন বা মালয়েশিযা প্রবেশ করেই দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ে পাসপোর্ট খুইয়েছেন, তাদের টিপি দিতে হচ্ছে সাবধানে। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে নাগরিকত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে টিপি ইস্যু করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সকালে আবেদন জমা দিয়ে সব ঠিক থাকলে বিকেলেই টিপি ইস্যু করা হচ্ছে বলেও জানান দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা।
এসআর/এমকেএইচ