মধ্য আষাঢ়ে লন্ডনে বৈশাখী মেলা
লন্ডনে মধ্য আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব লন্ডন বৈশাখী মেলা। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে রোববার পূর্ব লন্ডনের বাংলাটাউন সংলগ্ন উইভার্স ফিল্ডে বসেছিল এ মেলা। হাজারও মানুষের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল এবারের মেলায়।
বাঙালি তার নিজস্ব জাতিসত্ত্বার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতগুলো উৎসব পালন করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলা নববর্ষ উদযাপন। বাংলা নববর্ষের মূল আকর্ষণ বৈশাখী মেলা। বাঙালি ও বৈশাখী মেলা মুদ্রার এ পিঠ-ওপিঠ।
নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই লন্ডনের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও আবহাওয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর মূল উৎসব হয় ব্রিটিশ সামারে, যা বাংলাদেশের আষাঢ় মাস।
মেলায় ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে হাজারো প্রবাসী বাঙালিরা অংশ নেন। এ যেন শেকড়ের টানে একই মোহনায় মিলন সবার। তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সব প্রজন্মের একাকার হওয়ার চেষ্টা মেলায় যুক্ত করেছিল এক ভিন্ন মাত্রা।
ঢাক-ঢোল, হরেক বাদ্য-বাজনা আর রঙ-বেরঙের সাজ পোশাকে দিনভর জমজমাট ছিল পুরো মেলা। মেলা উপলক্ষে দীর্ঘদিন পর দেখা হয় বন্ধু-বান্ধব পরিচিত মুখগুলোর সঙ্গে।
পশ্চিম ধারায় বেড়ে ওঠা প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বর একটি মাধ্যম এই বৈশাখী মেলা। মেলায় চটপটি, ফুসকা, পেঁয়াজু, ছোলা, হালিম, বিরিয়ানিসহ নানা পদের আঁচার ছিল মুখরোচক সব বাঙালি খাবারে সমাহার। মেয়েদের শাড়ি, চুরি, গয়নাসহ বাচ্চাদের খেলনার স্টলগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়।
বেলা ১১টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। নানা রঙে-ঢঙে সেজে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রায় অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক মানুষ। বাঘ, কুমির, মাছ, শাপলা, নৌকা, হরিণের প্রতিকৃতি আর বৈশাখী গানের সাথে নাচ শোভা যাত্রাকে আরো বর্ণিল ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
দুপুর ১২টা থেকে মেলার মূল স্টেজ থেকে ধারাবাহিকভাবে পরিবেশন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলায় উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় এমপি রোশনারা আলী, লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস, ডেপুটি স্পিকার আহবাব হোসেইন, কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলামসহ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অধিকাংশ কাউন্সিলার, সাংবাদিক ও কমিউনিটি নেতারা।
মেলার পুরো সময়ই উইভার্স ফিল্ডের মূল স্টেজে মেলায় দর্শকদের মাতাতে বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন খ্যাতিমান শিল্পী লাভলী দেব, ইমরান ও বেলি আফরোজ। ছিলেন সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ প্রজন্মের হার্টথ্রব শিল্পী, আরবান রাইজিং স্টার নিশসহ স্থানীয় শিল্পী আলাউর রহমান, হাসি রানি, আমির মোহাম্মদ ও সুজানা আনসার। মঞ্চ উপস্থাপনায় ছিলেন রনি মির্জা ও বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কের নাদিয়া আলী।
ফিরোজ আহম্মেদ (বিপুল), লন্ডন/এমআরএম