প্রবাসে ‘মা’ বলার মতো কেউ নেই
মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। মা ডাকেই মানুষ খুঁজে পায় সীমাহীন শান্তি। মা-ই মানুষের একমাত্র নিরাপদ শান্তির ঠিকানা। মায়ের ভালোবাসা অতুলনীয়। কবির ভাষায়- ‘মা বড় ধন সবচে আপন, নেইকো যাহার তুল্য; এক ফোঁট দুধ অনেক দামি, কে দেবে তার মূল্য।’
‘প্রবাসে মা, মাটি, দেশ, মমতা অনেক কিছুই মিস করি। যা আসলে প্রবাসীদের মতো করে ভেতরে ভেতরে আর কেউ এত গভীর করে লালন করতে পারে না। পারবেই বা কেমন করে, প্রবাসীরা যে তাদের মায়া ত্যাগ করে অন্য দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে না বা অর্জন করলেও তাদের বিবেক তাদের অর্জন করতে দেয় না, সবসময় তাদের বুকের মধ্যে বাজতে থাকে যে, এটা তোমার দেশ না, তোমার পরিচয় কি? তোমার দেশ বাংলাদেশ।’
দেশের মানুষের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পর্ক গভীর হয়েও গভীর হতে পারে না, কারণ প্রবাসীদের কখনোই দেশ সম্মানের চোখে দেখে না বা তাদের মূল্যবোধের জায়গাটা দেয় না। প্রবাসীরা দেশের বাইরে থাকে বলেই হয়তোবা এমনটা হয়। প্রবাসীরা দেশের জন্য দেশ ছেড়ে যায় অন্য দেশে এটা বুঝলেও বোঝে না আমার দেশের মানুষ।
আমাদের দেশে কর্মসংস্থানেরর অভাবেই প্রবাসীরা দেশ ছেড়েছেন, আমাদের দেশের মানুষজনদের ভালো রাখার জন্য তারা দেশ ছেড়েছেন। দেশ প্রবাসীদের ভুলে গেলেও প্রবাসীরা কখনো দেশের কথা ভুলে যায় না, তারা ভুলতে পারে না, কেননা সে সে’দেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
মায়ের ভালোবাসার নিদর্শন শুধুমাত্র মানুষের জন্যই প্রযোজ্য নয় বরং সমগ্র প্রাণিজগতের জন্য। সন্তান যখন কোনো বিপদাপদে পড়ে, তখন কারো ব্যথা না লাগলেও মায়ের নাওয়া-খাওয়া-ঘুম বন্ধ হয়ে যায়। হায়রে মা!
বলা যায়, প্রবাসীদের সঙ্গে দেশে সম্পর্কটা ততটা বন্ধুত্বপূর্ণ না হলেও দেশের প্রতি প্রবাসীদের একটা টান আছেই শুরু থেকে। কেননা তারা তাদের আপনজনদের দেখা পাওয়ার জন্য যেখানেই যাক না কেন সবশেষে তাদের দেশেই ফিরে আসতে হয়, মা বলে ডাকার জন্য নিজের গ্রামটার মনোমুগ্ধকর প্রতিচ্ছবি তাকে বারবার দেখায় যেন তার টান, দেশের প্রতি তার মায়া আরো তীব্র হয়ে ওঠে তার কাছে।
তখন প্রবাসীরা নতুন করে সবকিছু দেখতে শুরু করে, যে দেখায় মিশে থাকে দেশের প্রতি গভীর মমতা। এই মমতাই তাদের আবার দেশে ফিরিয়ে আনে, প্রিয় মানুষের কাছে এসে তারা তাদের মুখ দেখে প্রবাসে থাকার তৃষ্ণা দূর করে। প্রবাসীরা আমাদের দেশের সম্পদ। তারা না থাকলে আমাদের দেশের উন্নতি এতটা চোখে পড়ত না, বাংলাদেশের নামটা অন্যান্য দেশের মতো এত স্পষ্ট করে পরিচিতি পেয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত না বা তার কাজ সম্পর্কে, এই দেশ সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা হতো না।
প্রবাসীরা হলো একটি দেশের মোহর। যে মোহরের কারণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দেশ এবং দেশের মানুষ সুতরাং প্রবাসীদের ভালো থাকা বা ভালো রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিন্তু আমরা তার কতটুকু পালন করতে পেরেছি বা পারি তা হয়তো একটু লক্ষ্য করলেই বলতে পারি। দেশ থেকে প্রবাসীরা যখন বিদেশ যায় তখন তাদের প্রতি আমাদের বোধের জায়গাটা আরো খোলাসা হওয়া উচিত, যে খোলাসায় থাকবে স্পষ্টতা, গভীরতা, মমতা ও সম্মানবোধ।
এমআরএম/আরআইপি