আমিরাতে নারী শ্রমিকদের নিয়ে অসাধু ব্যবসা
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ থাকলেও পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্রমণ ভিসার সুযোগ রয়েছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের আমিরাতে নিয়ে যাচ্ছে অসাধু আদম ব্যবসায়ী ও নারী পাচারকারীদের একটি চক্র।
ইমিগ্রেশন ব্যুরোর ছাড়পত্রের ঝামেলা না থাকায় এই চক্রটি বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের আমিরাতে ভিজিট বা ভ্রমণ ভিসায় পাঠিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করছে। সাম্প্রতিক তিনটি ঘটনায় এর সুষ্পষ্ট প্রমাণও মিলেছে। বুধবার বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই ও উত্তর আমিরাতের তত্ত্বাবধানে আটক হয় বরগুনার সরোয়ার নামের এই চক্রের এক সদস্য।
কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা জানান, নারায়ণগঞ্জের এক নারী শ্রমিককে কাজ দেয়ার কথা বলে ভ্রমণ-ভিসায় গত বছরের ৭ নভেম্বর দুবাই পাঠানো হয়। পরে আদম ব্যবসায়ী ও নারী পাচার চক্রের সদস্যরা দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে ওই নারীকে নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে রেখে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। সেখান থেকে কোনোভাবে পালিয়ে ওই নারী বাংলাদেশ কনস্যুলেটে গিয়ে দেশে ফেরার জন্য সাহায্য চাইলে তাকে আর্থিক, মানসিক ও দাফতরিক সহায়তা দিয়ে ১৫ নভেম্বর দেশে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রের মূল হোতাকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় আটক করা হয়।
কর্মকর্তারা আরও জানান, একইভাবে নেত্রকোনার দুই নারীকে আলাদাভাবে দুবাই নিয়ে ফ্ল্যাটে রেখে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে এই চক্র। এই দুই নারীও অন্যের সাহায্য নিয়ে পালিয়ে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে অভিযোগ করলে কনস্যুলেট থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ দু'জনকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দুবাই ও উত্তর আমিরাতের কনসাল জেনারেল ইকবাল হোসাইন খান এ বিষয়ে বলেন, ‘শ্রমিকদের ভিসার জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ব্যুারোর ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু ভিজিট ভিসার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ও ছবি দিয়েই ভিসা বের করে নেয়া সম্ভব। ফলে দালাল চক্র বাসা-বাড়ি, পার্লার, কফি হাউসে কাজ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলক এই ভিজিট ভিসা দিয়ে নারী কর্মীদের সহজে আমিরাতে নিয়ে আসে। প্রত্যাশিত কাজে না দিয়ে বরং এয়ারপোর্ট পার হলেই তাদের বাধ্য করা হয় অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে। যারা পালাতে সক্ষম হয় আমরা তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ভিজিট ভিসায় এনে নারী শ্রমিকদের পাচার ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার ঘটনায় দালাল চক্রের এক সদস্যকে বুধবার আটক করা হয়েছে। যে বাড়িতে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয় সে বাড়ির সিকিউরিটির দায়িত্বে ছিল ওই চক্রের সদস্য। আটক প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। এই চক্রের আরো গভীরে পৌঁছার চেষ্টা করছি আমরা।’
কনসাল জেনারেল আরও বলেন, ‘সস্তা প্রলোভনের ফাঁদে পা না দিয়ে নারী কর্মীদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। পাশাপাশি নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশের ইমিগ্রেশন আইন আরো কঠোর করার জন্যে আমরা অবহিত করেছি।’
এমআরএম