গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি গিয়ে পাল্টে গেল সালমার ‘চরিত্র’
বছর খানেক আগে গৃহকর্মী ভিসায় বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান সালমা আক্তার। কথাবার্তায় চটপটে ও স্মার্ট সালমা গৃহকর্মী থেকে যে অ্যাজেন্সিতে কাজ করার সুযোগ পাবেন, তা হয়তো তিনিও ভাবেননি। আর এতেই ভাগ্যের চাকা খুলে যায় তার, তবে অন্ধকার নেমে আসে তার অধীনে থাকা অন্য গৃহকর্মীদের জীবনে।
চটপটে সালমার চাকরি মেলে সৌদি আরবের দাম্মামে আল- সাফার নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে যাওয়া অন্য গৃহকর্মীদের সহযোগিতা ও দেখাশোনার দায়িত্ব পান তিনি। মূলত বাংলাদেশ থেকে যেসব গৃহকর্মী সৌদিতে যান তাদের সার্বিক খোঁজ-খবর রখার জন্যই সালমাকে নিয়োগ দেয় আল-সাফার কর্তৃপক্ষ।
সৌদির বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তাদের শাখা-অফিস রয়েছে। এসব কোম্পানি ভিসা সরবরাহ করে বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী এনে বাসা-বাড়িতে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।
গৃহকর্মী হিসেবে সৌদিতে গেলেও গৃহকর্মী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি মেলায় বদলে যায় বাংলাদেশি সালমার চেহারা। গৃহকর্মীদের বিপদ-আপদ, দেখাশোনা ও সার্বিক খোঁজখবর নেয়ার দায়িত্ব পান সালমা। আর এই দায়িত্ব যেন পাল্টে দেয় তাকে। প্রতিষ্ঠানের কর্তা পদে বসে অন্যান্য গৃহকর্মীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে শুরু করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা গৃহকর্মীরা সুযোগ-সুবিধা এবং বেতন ঠিক মতো পাচ্ছেন কি-না ইত্যাদি বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানোই ছিল সালমার প্রধান কাজ। কিন্তু এসবের কোনো তোয়াক্কাই করেননি তিনি। সালমা যেসব অপকর্ম করতে শুরু করেন তা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের শর্তের পুরো উল্টো।
অফিসকে খুশি রাখার জন্য দায়িত্বের বাইরে নিজের মতো পালন করছেন ভয়ঙ্কর কিছু দায়িত্ব। যা শুনলে হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সৌদিতে আসা বাংলাদেশি গৃহকর্মীরা বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন। তারা তুলে ধরেছেন সালমার অত্যাচারের কাহিনী।
সালমার গৃহকর্মীদের মারধর, গালিগালাজের বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গৃহকর্মী সালমার নির্যাতন-নিপীড়নের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন গৃহকর্মী বলেন, এমন কোনো অত্যাচার নেই যা সালমা করতেন না। মারধর, গালিগালাজের ভিডিও ধারণ করে ছেলে বন্ধুদেরও দেখাতেন সালমা।
অভিযোগের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদক সালমার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইমোতে কথা বলার চেষ্টা করেন। সালমা তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তবে ভিডিওর কথা বলতেই নীরব হয়ে যান তিনি।
অন্যদিকে, নির্যাতিত গৃহকর্মীরা সালমাকে দেশে ফিরিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানান। গৃহকর্মীদের মারধরের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এমআরএম/আরআইপি