ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

বাংলাদেশে পর্তুগালের দূতাবাস খোলার আহ্বান

নাঈম হাসান পাভেল | প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগুস্তো সান্তোস সিলভারের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো নেতারা। দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. রুহুল আলম সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে পর্তুগাল-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

শুরুতেই বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সভাপতি শাহ আলম কাজল সবাইকে অভ্যর্থনা জানান। পরে নৈশভোজের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে দুইটি দাবি আছে বলে জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে শুনতে চান। শাহ আলম কাজল প্রথম দাবিটি করেন বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস স্থাপনের ব্যাপারে। কারণ দিল্লিতে পর্তুগিজ দূতাবাস হওয়ায় নানা ধরনের কনস্যুলার সেবা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয় তাই তিনি পর্তুগালের বাংলাদেশি কমিউনিটির সবার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী দূতাবাস স্থাপনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট দাবি জানান।

পোর্তোর স্থানীয় পোর্তোগান্ধি রেস্টুরেন্টে শনিবার রাত ৮টায় বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর আয়োজনে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতারা ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন পর্তুগালের ক্ষমতাসীন স্যোশালিস্ট পার্টির পোর্তো শাখার সভাপতি ম্যানুয়েল পিজারো, পর্তুগিজ সংসদের এমপি থিয়াগো বারবোজা রিবেইরো, পোর্তো যুব স্যোশালিস্টের সভাপতি হুগো গিলবাইয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জোয়াও কোয়েলো।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে কৃষিসহ বিভিন্ন পেশায় দক্ষ শ্রমিক নিতে আহ্বান জানান তিনি। পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিভিন্ন বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন শাহ আলম কাজল। যিনি নিজেও পর্তুগালের সরকারি দল পর্তুগিজ সোশালিস্ট পার্টির পোর্তো শহরের নেতৃত্বে রয়েছেন।

দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায়। বিশেষ করে নয়াদিল্লীতে পর্তুগিজ কনস্যুল্যার অফিসে নানা হয়রানি নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিত আকারে জানানো হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগুস্তো সান্তোস সিলভা বলেন, বর্তমানে ৭৮ দেশে আমাদের কনস্যুলার সেবা চালু রয়েছে। বাংলাদেশিরা যে ধরনের সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হচ্ছে আমরা তাদের জন্য এ ব্যাপারগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও পর্তুগালে যে সমম্ত বাংলাদেশিরা বসবাস করছেন তাদের জন্য কাজ এবং অভিবাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমরা সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি।

নতুন দূতাবাস করার ব্যাপারে আমাদের সরকারের অভ্যন্তরীন আলোচনা এবং পর্যালোচনায় আমি আপনাদের দাবিটি তথা বাংলাদেশের নামটি মাথায় রাখবো।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রুহুল আলম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো প্রায় ৫০২ বছরের। আমাদের জীবনে পর্তুগিজদের প্রভাব অনেক এবং আমাদের এই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অনেক গভীর। আমাদের এবং পর্তুগিজদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে, বিশেষ করে খাবারের। বাংলাদেশে দূতাবাস না থাকায় বাংলাদেশিরা অনেক সমস্যায় পড়ছেন।

আমি নিজেও এটার ভুক্তভোগী। বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাসের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান। ট্যুরিজম, টেক্সটাইল, কনস্ট্রাকশন খাতে পর্তুগালের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই খাতগুলোতে পর্তুগাল বাংলাদেশের সহযোগী হতে পারে। পর্তুগালের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে যাচ্ছেন আগের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি। আগামী দিনে সেটি আরো বৃদ্ধি পাবে। এটি আমাদের পারস্পরিক বানিজ্যের প্রসারের একটি উদহারণ।

পর্তুগালের রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশ কমিউনিটি সম্পর্কে বরাবরই ইতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন। বক্তব্যে ম্যানুয়ের পিজারো এবং থিয়াগো বারবোজা এমপি বলেন, বাংলাদেশ কমিউনিটি পর্তুগালে অন্যতম শান্তিপূর্ণ একটি কমিউনিটি। বাংলাদেশ কমিউনিটি আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পর্তুগালে সব বিদেশি কমিউনিটির চেয়ে এই কমিউনিটি আলাদা। মানুষগুলো বন্ধুসুলভ আর পরিশ্রমী। আমরা তাদের যেকোনো যৌক্তিক দাবিগুলো এবং চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিক।

বৈঠকে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নেতারা বিশেষ উপহার তুলে দেয়া হয়। ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম।

উল্লেখ্য, পর্তুগাল-বাংলাদেশের সম্পর্ক বহু পুরনো। পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এসেছিল ষষ্ঠদশ শতকে। ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতেন। তৎকালীন তারা চট্টগ্রামের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে মোগল এবং আরাকানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বেশিদিন সেই নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি পর্তুগিজরা। সপ্তদশ শতকের মধ্যেই তারা চট্টগ্রামের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। যদিও এখনও পর্যন্ত তৎকালীন পর্তুগিজ বংশধরেরা চট্টগ্রামের পুরাতন অংশে বসবাস করছেন।

jagonews

ষষ্ঠদশ শতকে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ নাবিকরা বাংলাদেশে এলেও বাংলাদেশিদের পর্তুগালে আগমন শুরু ১৯৯১ সালের পর থেকে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে পর্তুগালে বাড়তে থাকে বাংলাদেশিদের সংখ্যা যাদের বেশীরভাগ সংখ্যকই ব্যবসায়ী। অনেকেই গল্পের ছলে বলে থাকেন ষষ্ঠদশ শতকে পর্তুগিজরা আমাদের দেশে ব্যবসা করতে গিয়েছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে আমরা তাদের দেশে ব্যবসা করতে আসছি।

পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনা করে। পর্তুগিজ ধর্মযাজক ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাঁও প্রথম বাংলা ভাষার সেই ব্যাকরণ রচনা করেন। সুদীর্ঘ পথচলায় পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান। সম্প্রতি পর্তুগাল-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০০ বছর উদযাপিত হয়েছে।

এমআরএম/আরআইপি

আরও পড়ুন