ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

ওমানের সালালায় মিলবে ‘বাংলাদেশের স্বাদ’

বাইজিদ আল-হাসান | প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আরব সাগর ঘেঁষে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত মনোরম দৃশ্যের বিশালাকার শহরের নাম সালালাহ। দেশটিতে হৃদয় জুড়ানো সব উপকরণই আছে। শহরটিতে প্রবেশ করেই মনে হবে আরেকটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি।

দেশটির পাহাড়- পর্বত্র দেখে মনে হবে রাঙ্গামাটি বান্দবানে ঘুরতে এসেছি। আবহাওয়া, সবুজের সমারোহ, বাজার-ঘাট, খাবার-দাবার সবকিছুতেই ঘ্রাণ পাওয়া যাবে প্রিয় মাতৃভূমির। ওমানের রাজধানী মাস্কাট থেকে প্রায় ১২শ কিলোমিটারের দূরত্ব এ জনবসতি বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্যতা চোখে পড়ার মতো। বাদ এশা সালালাহ'র চায়ের দোকানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আন্তরিক আড্ডা গ্রামগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া সেই প্রাণবন্ত ও জীবন্ত মুহূর্তগুলো স্মরণ করিয়ে দেবে।

মাস্কাট থেকে সালালাহ যেতে শত শত কিলোমিটার পাড়ি দিতে গিয়ে শুধু মরুভূমি আর মাঝে মাঝে কিছু উট ও তেলপাম্প ব্যতীত কিছুই দেখতে পাইনি।

সালালাহর বাঙালিদের বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা যোবায়ের মেহমানদারীতে দুপুরের খানা খাই। বিকেলে বিশ্রামের জন্য যায় আলী আকবারের পরিচালনাধীন মনোরম পরিবেশের একটি হোটেলে। দু'দিন ছিলাম ওই হোটেলে। আলী আকবারের অনুরোধেই হোটেলটিতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ছেলেটি বয়সে তরুণ। কুমিল্লায় বাড়ি। কাতারের এক মালিকের বিশ্বস্ত ফোরম্যান হিসেবে নিয়োজিত আলী আকবার। ভদ্র, সচেতন ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন আলী আকবার অনেক বড় হবে বলে বিশ্বাস করি। ছেলেটি আমাদের জন্য অনেক খেটেছে।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বাদ জোহর আলী আকবারের গাড়ি করে ঘুরতে বেরোই আমরা। সাত-আটটি প্রাইভেটকার ও জিপের বহর নিয়ে প্রথমে আইয়ূব আলাইহিসসালামের কবর দেখতে রওয়ানা হই। উঁচু পাহাড়ের টিলায় কবরটি দেখে পয়গম্বরের কবর বলে মন সাঁয় দেয়নি।

শোনা যায়, উপমহাদেশ থেকে আইয়ূব নামে এক আল্লাহর ওলী ওই পথ দিয়ে পবিত্র হজব্রত পালনে যাতায়াত করতেন এবং ওখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আর এটি তারই কবর। ঘটনাটি যৌক্তিক মনে হলেও নবী ইমরান আলাইহিসসালাম ও ইউনূস নবীর কথিত মাছের পেট থেকে মুক্তি পাওয়ার স্থান সম্পূর্ণ ভুয়া প্রচারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। স্থানগুলি দেখলে যে কেউ তা সহজেই অনুমান করতে পারবে। সন্দেহ আছে হযরত সালেহ আলাইহি সালামের ১শ বছর পর মৃত উট জীবিত হওয়ার স্থান নিয়েও।

oman

পাকিস্তানিরা এসব স্থানগুলোকে কবরপূজা ও মাজার ব্যবসার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকলেও ওমান সরকারের বিচক্ষণতায় এগুতে পারে না। রমজান থেকে কোরবানির মধ্যবর্তী সময়ে ওমানে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে অজস্র পর্যটক ঘুরতে আসে।

পর্যটকরা যে স্থানে অবস্থান করে থাকেন, সেখানেও নতুন করে একটি মাজার করতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তানিরা। নাম দিয়েছে ওয়ায়েস করনীর মাজার! মাস্কাটের সুকে অবস্থিত নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবী হযরত মেজান ইবনে গাদুবা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুর কবর জিয়ারতকালে লক্ষ্য করেছি, বেদআতীরা সেটিকেও মাজার বানাতে কম চেষ্টা করেনি। শুনেছি একবার নাকি ঘরও তুলে ফেলেছিলো, কিন্তু ওমান সরকার তা উচ্ছেদ করে দিয়েছে।

সালালাহ'র পাহাড়ের নয়নাভিরাম সবুজের মনকাড়া দৃশ্য, সাগরের গর্জন, পাখপাখালির কিচির-মিচির আওয়াজ আপনার অশান্ত মনকে মুহূর্তেই শান্ত করে করে দেবে। দু'দিনের সফরে সালালায় অসংখ্য বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। সবার নাম উল্লেখ করতে না পারলেও ভালোবাসাটা সবার জন্য সমানই আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বাদ আসর সাগর পাড়ের বালুচরে মাস্কট বনাম সালালাহ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়। আনন্দঘন সে মুহূর্তগুলো জীবনেও ভোলবার নয়। চট্টগ্রামের মাওলানা তৈয়্যবসহ ভুলবো না ওমান সফরে সংশ্লিষ্ট কাউকেই। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ওমান থেকে শারজাহর ফ্লাইটে ইউএইতে পৌঁছি। শারজাহ থেকে মাওলানা কাসেম ওসমানী ভাই রিসিভ করেন। পরদিন বাংলাদেশের ফ্লাইট ধরে চলে আসি প্রিয় মাতৃভূমিতে। এবারের মতো চলে এলেও আশাকরি আবার দেখা হবে প্রিয় ভাইদের সঙ্গে।

সালালাহ ভ্রমণ করে জাগো নিউজের কাছে অনুভূতিগুলো শেয়ার করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ।

এমআরএম/আরআইপি

আরও পড়ুন