ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

‘মালয়েশিয়ার জেলখানায় ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলো’

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৪৬ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘মালয়েশিয়ার জেলখানায় সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা মনে হলে লোমগুলো আমার শিউরে উঠে। আমাকে পাঁচবার আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবুও সহজে মুক্তি মেলেনি। আমার কোনো আইনজীবীও ছিল না। এ কারণেই আমার উপর অন্যায়টা বেশি হয়েছে। পাঁচ মাস পর সাজা শেষে দেশে পাঠানো হয়। জেলে শুধু বাবা-মার কথা মনে হতো। দেশের কথা মনে হতো। সময়গুলো যে কিভাবে কেটেছে বোঝানো সম্ভব নয়’

শহীদুল ইসলাম, বাড়ি বগুড়ায়। ভাগ্য বদলের আশায় আদম দালালের মাধ্যমে ২০১৬ সালের দিকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। এরপর তিনি একটা কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে দেশটিতে খুব একটা আইনি জটিলতা ছিলো না। যে কারণে কাগজপত্রবিহীন কাজ করতে পারতাম। পরবর্তীতে মালয়েশিয়ার নিয়ম-কানুন জটিল হতে থাকায় মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।’

‘আমার পাঁচ মাসের জেল হয়েছিল। জেলখানায় কষ্ট কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ৫টি মাস আমার কিভাবে যে কেটেছে আল্লাহ ভালো জানেন। পুলিশ মারধর করতো না তবে খাবার থেকে শুরু করে ঘুমানো পর্যন্ত সবই সমস্যা। গাদাগাদি করে থাকতে হতো সবাইকে। খাবার কেড়ে নিতো। মশার কামড় সহ্য করতে পারতাম না।’

কিভাবে গ্রেফতার হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৩ সেপ্টেম্বর সেলেঙ্গার রাজ্যে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করছিলাম। হঠাৎ আমিসহ বেশ কয়েকজনকে মালয়েশিয়ার পুলিশ গ্রেফতার করে। আমার সব কাগজপত্র ছিলো কিনা সেটায় ভালোভাবে বুঝতাম না। তখন আমি নতুন। পরে বুঝলাম যাবতীয় কাগজ নাই। কারাগারের ছোট একটি রুমে ২০০ জনের বেশি বন্দিকে রাখা হলো। বেশিরভাগই বাংলাদেশি। তবে অন্যান্য দেশেরও কম নয়। তখন মাঝে মাঝে ভাবতাম হয়তো আর ফিরতে পারবো না। আমি প্রতি রাতে কেঁদেছি। নিজের জন্য খুব খারাপ লাগতো।’

কুয়ালালামপুরের একটি অধিকার সংস্থা উত্তর সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড্রিয়ান পেরেরা বলেন, অভিবাসীদের নির্বিচারে গ্রেফতার পুলিশের নতুন কিছু নয়।

তিনি বলেন, ‘অনেক অভিবাসীরা ধরপাকড়ের কাহিনি আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে ভয় পায় কারণ তারা সাক্ষী সুরক্ষা ব্যবস্থায় আস্থা রাখে না। এমনকি নাগরিক সমাজ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, অভিবাসীদের অবস্থা যাচাইয়ের ঘটনাটি ঘটতে পারে। সুতরাং যারা দস্তাবেজ ধারণ করে তাদেরকে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্ষমতার লজ্জাজনক অপব্যবহার ও সরকারি সংস্থার বর্জ্য বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিবাসীদের প্রতিকারের জন্য কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করার এবং দুর্নীতি ও অধিকার লঙ্ঘনের চক্রটি শেষ করার জন্য নিরাপদ উপায় খুঁজে বের করা উচিত।

মালয়েশিয়ার ক্ল্যাং এর এমপি চার্লস সান্টিয়াগো অভিবাসীদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কথা জানিয়ে আসছেন। এমপি চার্লস সান্টিয়াগো অভিবাসীদের গ্রেফতার না করে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করবেন বলে জানান।

এদিকে ভয়ে ভয়ে দিন-কাটানো বাংলাদেশিরা অনেকেই অভিযোগ করছেন, কথিত এজেন্টদের হাতে প্রতারিত হওয়াতেই তারা আজ অবধি সেদেশে বৈধ শ্রমিকের স্বীকৃতি পাননি। ২০১৬ ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার সরকার রিহায়ারিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে এ অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু যে তিনটে ভেন্ডর কোম্পানিকে এর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাদের নাম ভাঙিয়ে বেশ কিছু নকল এজেন্ট বা দালাল বাংলাদেশিদের সঙ্গে বিরাট প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।’

উল্লেখ্য, জি-টু-জি-প্লাস পদ্ধতিতে ১০টি এজেন্সির বদলে সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া সফররত বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের দু’দফা বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কর্মী-সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ও মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী কুলা সেগারান নেতৃত্ব দেন

এমআরএম/আরআইপি

আরও পড়ুন