প্রবাসী সালমার ৪১ ঘণ্টার অনশন ধর্মঘট
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ বাতিলের দাবিতে ইউএস কোর্টের সামনে ৪১ ঘণ্টার অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে ৪টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সালমা কানেকটিকাটের হার্টফোর্ড শহরে ইউএস কোর্ট হাউসের সামনে বিকেল ৪টা থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন।
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সালমা, তার স্বামী ও ছেলে সেখানে অবস্থান করবেন। একই দিন রাত ৯টায় জেএফকে বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ দিয়েছেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদের কাছ থেকে তার মাকে আলাদা করার মতো ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে স্থানীয় কানেকটিকাট প্রবাসী বাংলাদেশিসহ হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ জানাতে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন।
তারা বিভিন্ন স্লোগান লেখাযুক্ত প্লাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।এ সময় কানেকটিকাটের সিনেটর, কানেকটিকাট স্টেট গভর্নর ও বিভিন্ন শহরের হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধিরা ও হার্টফোর্ড শহরের মেয়র উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, এ দেশে অবস্থানকালীন সালমা ও পরিবার কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাহলে কেন সালমাকে তার কলেজ গমনেচ্ছুক ছেলের কাছ থেকে আলাদা করে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। সালমার মতো যুক্তরাষ্ট্রে আরও ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন বলে মার্কিন রাজনীতিবিদরা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সালমাকে এদেশে রাখতে তার বহিষ্কারাদেশ বাতিল করার দাবি জানান মার্কিন রাজনীতিবিদরা।
সালমা ও আনোয়ার দম্পতির একমাত্র ছেলে স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। আগামী ২৭ তারিখ থেকে তার ক্লাস শুরু হবার কথা রয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ছেলের ক্লাস শুরুর চারদিন আগে ২৩ আগস্ট সালমাকে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হচ্ছে।
এ সময় বহিষ্কারাদেশপ্রাপ্ত সালমার স্বামী ও তার ছেলে সামির মাহমুদ মার্কিন মিডিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের বর্তমান অবস্থা ও করুন কাহিনীর কথা তুলে ধরেন।
স্থানীয় সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল, কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সন, কানেকটিকাট স্টেট গভর্নর ড্যানিয়েল মলয়, হাউস অব জুডিসিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান উইলিয়াম টম, কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সন ও রোসা দেলারো, হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধিরা, হার্টফোর্ড সিটি মেয়র লুক ব্রোনিন সালমার স্বামী আনোয়ার মাহমুদ ও ছেলে সামির মাহমুদ বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের পর বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ পেয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সালমা। ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর আর দেশে ফিরে যাননি। যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে জন্ম নেবার পর তিনি তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য এদেশের থাকার জন্য একটি কষ্টের আবেদন করেন। সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদ স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন- বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর সাবেক সভাপতি ড. তামিম আহমেদ, আশফাকুল তরফদার, ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, তারেক আম্বিয়া, ডেভিড রোজারিও স্বপন, মোল্লা বাহাউদ্দিন পিয়াল, আনোয়ার হোসেন হিমু ও মোবারক নওশাদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ অংশ নেবার জন্য ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, তারেক আম্বিয়া ও আনোয়ার মাহমুদ উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এমআরএম/এমএস