মালয়েশিয়ায় নিয়ে দেহব্যবসা, দুই পাচারকারীকে খুঁজছে পুলিশ
মালয়েশিয়ায় থামছে না নারী পাচার। গার্মেন্টস, রেস্টুরেন্ট অথবা ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সের কিশোরী মেয়েদের পাচার করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ওরা এতটাই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। কিশোরী মেয়েদের মালয়েশিয়া নিয়ে বিভিন্ন ক্লাব অথবা মনোরঞ্জন মোজরায় বিক্রি করে দেয়া হয়।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের উঠতি বয়সের মেয়েদের চাহিদা বেশি বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। এমনই একজন পাচারের শিকার কিশোরী মিনাকে (ছদ্মনাম) দূতাবাসের সহায়তায় দেশে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টায় মালিন্দ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দূতাবাস। এ চক্রকে ধরতে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নেমেছে বলে দূতাবাসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। কিশোরী মিনা গত তিন মাস আগে কুমিল্লার দালাল জহুরুলের প্ররোচনায় মালয়েশিয়া আসে।
মিনা এ প্রতিবেদককে জানায়, জহুরুল মালয়েশিয়ায় রেস্টুরেন্টে কাজ দেবে বলে আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে মিনাকে ঢাকা থেকে অন অ্যারাইভেল ভিসায় ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যায়। সেখান থেকে পানিপথে নিয়ে আসে মালয়েশিয়ার ক্লাংয়ে। সেখান থেকে তিনদিন পর নিয়ে আসে কুয়ালালামপুর শহরে। শহরে এনে রাজবাড়ীর নূর ইসলামের কাছে জহুরুল মিনাকে বিক্রি করে দেয়।
নূর ইসলাম মিনাকে বুকিতবিনতাং এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাকে দিয়ে দেহব্যবসা শুরু করে। মিনা প্রতিবাদ করতে গেলে নূর ইসলাম তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাতজনের সঙ্গে তাকে বিছানায় যেতে হতো। এ অত্যাচার থেকে বাঁচতে মিনা কৌশলী হয়ে ওঠে। একদিন সে নূর ইসলামকে বলে বর্তমানে মালয়েশিয়ার অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিদিন ধরপাকড় চলছে। আপাতত একটি ট্রাভেল পাস করে রাখা দরকার। এতে নূর ইসলাম রাজি হয়ে গেলে গত রোববার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়ে আসে ট্রাভেলপাস নিতে।
ওইদিন দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস না দিয়ে বলা হয় পরেরদিন আসতে। মিনা পরেরদিন যথাসময়ে দূতাবাসে এলে নূর ইসলাম তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এতে সন্দেহ হয় সংশ্লিষ্টদের। মিনা তখন কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সব খুলে বললে পাচারকারীরা আঁচ করতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। মিনাকে দূতাবাসের হেফাজতে রেখে ওইদিনই দূতাবাসের সহায়তায় স্থানীয় আম্পাং থানায় এ দুই নারী পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
পরে মিনাকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্পেশাল পাস ও টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অহিদুর রহমান অহিদ। দূতাবাসের কল্যাণ সহকারী মো. মুকসেদ আলী বুধবার দেশে ফেরত পাঠান।
এদিকে দুই নারী পাচারকারীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর মালয়েশিয়া পুলিশ তাদের খুঁজছে। মিনা মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে যেভাবে বিকৃত ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এ রোমহর্ষক বর্ণনায় স্তব্ধ প্রবাসীরা। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি দাবি করেছেন প্রবাসীরা।
বিএ