প্রবাসীদের মুখে মুখে সালমাদের নাম
এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের প্রশংসায় ভাসছেন সালমারা।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন সালমা-রুমানারা।
বিমানবন্দর থেকে ক্রিকেটাররা সরাসরি চলে আসেন রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে। সেখানেই বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান এবং পরিচালকরা সংবর্ধনা দেয় এশিয়া কাপ জয়ী ক্রিকেটারদের।
রোববার কুয়ালালামপুরের কিনরারা অ্যাকাডেমি ওভাল মাঠে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে সালমার দল ভারতকে তিন উইকেটে হারানোর পর থেকেই মালয়েশিয়াসহ সারাদেশে চলছে উৎসবের আমেজ। ঈদের আগে এই উপহার পেয়ে উৎফুল্ল দেশের মানুষ। এমন দুর্দান্ত অর্জনে মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
অভিনন্দন জানিয়ে স্পেন প্রবাসী মিরন নাজমুল বলেন, এই শিরোপা জয় আমাদের দেশে নারীদের অগ্রযাত্রার অনন্য প্রতীক হিসেবে দেখছি। আমাদের দেশে নারীরা ঘরের আঙিনা ছেড়ে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখছে। বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। এ যেন দেশের জন্য নতুন সূর্যোদয়। এগিয়ে চলুক বহ্নি শিখা।
ইতালি প্রবাসী জমির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে ক্রিকেট দিয়ে বিশ্ব বাংলাদেশকে জানছে। আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে। এমন একটি সময় নারী ক্রিকেটাররা বিজয় নিশান উড়িয়ে দিয়ে লাল সবুজের পতাকাকে বিশ্বের মাঝে জানান দিয়েছে। দূরদেশ থেকে তাদের প্রতি রইলো শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তাদের জয়ের এই ধারা অব্যাহত থাক। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা আরও বেশি বাড়ানোর অনুরোধ করছি।
মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহা. শহীদুল ইসলাম ও প্রবাসী কমিউনিটি নেতারা অভিনন্দন জানান। এছাড়া রোববার রাতে কুয়ালালামপুরস্থ হোটেল ইস্তানার হল রুমে দূতাবাস ও প্রবাসীদের যৌথ উদ্যোগে নারী প্রমীলাদের দেয়া হয় সংবর্ধনা ও উপহার সামগ্রী।
খেলা চলাকালীন প্রবাসী দর্শকদের নিয়ে মাঠ সরগরম রেখেছিলেন প্রবাসী কমিউনিটি ও শ্রমিক নেতা শাহ আলম হাওলাদার। শুধু খেলার মাঠ নয় প্রবাসীদের দুর্দিনে শাহ আলম হাওলাদারই পাশে থেকে সমাধানের চেষ্টা করেন তিনি। খেলার মাঠে প্রবাসী দর্শকদের নিয়ে উৎসাহ যুগিয়েছেন প্রমীলাদের।
মালয়েশিয়া থেকে আহমাদুল কবীর বলেন, মাঠে গিয়ে খেলা দেখার আনন্দই আলাদা। তাদের দুর্দান্ত জয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের ভেতর ব্যাপক ভালো লাগা কাজ করছে।
শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ক্রিকেট খেলার প্রতি আমার অন্যরকম টান রয়েছে। সেই টানেই প্রবাসে শত ব্যস্থতা থাকা সত্ত্বেও ছুটে যাই খেলার মাঠে। তাও আমাদের প্রমীলাদের খেলা দেখতে। অভিনন্দন আমাদের প্রমীলাদের এগিয়ে যাক আগামীর পথে এ প্রত্যাশা শাহ আলম হাওলাদারের।
সৌদি প্রবাসী আব্দুল হালিম নিহন বলেন, প্রমীলাদের জয় মানে আমাদের জয়। অভিনন্দন বাংলাদেশি নারীদের। এগিয়ে যাক আগামীর পথে এ প্রত্যাশা থাকবে সব সময়।
এদিকে অভাবনীয় সাফল্যে বদলে যায় অনেক কিছুই। মেলে প্রশংসা। অভিনন্দন। দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ক্রিকেটে যাদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব, সেই ভারতীয় নারীদের হারিয়ে এশিয়া কাপ (টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের) চ্যাম্পিয়ন হবার পর হঠাৎ ‘সাদা-কালো’ থেকে যেন ‘রঙিন আলোয় সালমার দল। ওই এক সাফল্যে তারা এখন আলোচিত। আলোড়িত। পাদপ্রদীপের আলোয়। অনাদরের বদলে মিলছে সাদর অভিনন্দন।
জাপান থেকে ফখরুল ইসলাম বলেন, সালমারা এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন। সত্যিই অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করছে। বাংলাদেশের নারীরা ইতিহাস গড়লো। মহাদেশীয় ক্রিকেটে সেরা হবার অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করাই আমরা আনন্দিত।
অনন্য কৃতিত্ব অর্জনের জন্য বিসিবিও নারী দলকে অন্য রকম সংবর্ধনা দিয়েছে। আজ সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সালমা বাহিনীকে সংবর্ধন দেয়া হয়।
বিসিবির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, নারী ক্রিকেট দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার দেবে বিসিবি। সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিগুণ হয়ে গেল এই পুরস্কার। সালমা-রোমানারা প্রত্যেকে পাবেন ১০ লাখ টাকা করে এবং পুরো দলের জন্য থাকছে ২ কোটি টাকার অর্থ পুরস্কার।
সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে বাংলাদেশে অবতরণ করার কথা ছিল নারী দলের। তবে ফ্লাইট বিলম্বের কারণে সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশে নামে সালমা খাতুনের দল। ফলে বিসিবির আনুষ্ঠানিক ইফতারে থাকতে পারেননি তারা। পরে সাড়ে ৭টা নাগাদ সোনারগাঁও হোটেলে উপস্থিত হন বাংলাদেশের শিরোপা জয়ী রত্নরা।
এমআরএম/আরআইপি