নিউইয়র্কে মোমেন-ছহুলের সংবর্ধনা যেন নেতাদের বিদ্রোহের মঞ্চ
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলছে সিলেটের রাজনীতি ও নির্বাচনী মহড়া। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও নানা মহল থেকে এমন প্রশ্ন উঠে আসছে। আলোচনা সভা, সমাবেশে ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিলেট ১ আসনের রাজনীতি ও নির্বাচনী সমীকরণে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে ব্যক্তিগত সফরে আসেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক আইন সচিব ও নির্বাচন কমিশনার কাজী ছহুল হোসাইন ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানসহ আরও অনেক নেতা। তাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিণত হয় সিলেটের আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজনীতির বিদ্রোহের মঞ্চ।
জানা গেছে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনেকে বক্তব্য রেখে কৌশলে সিলেটের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি অনুরাগ-বিরাগের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। নিজেদের পছন্দের জায়গা থেকে সংবর্ধিত ব্যক্তিদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।
পাশাপাশি সিলেটের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ ও অপছন্দের বিষয়টি ওঠে এসেছে তাদের বক্তব্য থেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সিলেট অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সাবেক আইন সচিব ও নির্বাচন কমিশনার কাজী ছহুল হোসাইন সিলেট-১ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করছেন।
কখনও বিয়ানীবাজার গোলাপগঞ্জ এলাকার আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সিলেট ৬ আসনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।
অনেকে মনে করেন, প্রবাস থেকে দেশের রাজনীতি ও আগামী নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের সম্ভাব্য স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীর পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিপ্লবী বিদ্রোহী মনোভাবের প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সিলেটের রাজনীতির মাতাল হাওয়ার ধাক্কায় দোল খাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
একই মঞ্চে একেক জনকে প্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে কমিউনিটির সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহল ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। গত মাসে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সিলেটবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়কালে জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেনকে সরকার গঠনের নিয়ামক আসন, সিলেট সদর আসন থেকে প্রার্থী হতে চাপ প্রয়োগ করেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বশীলরা। জবাবে তিনি সিলেট এক আসন থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
গত ৭ মে একই মঞ্চে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে সাবেক সচিব ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার কাজী ছহুল হোসেইনকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।
সভায় সিলেট সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে কাজী ছহুল হোসেনের পক্ষে অনেকেই দাবি তোলেন। জবাবে ছহুল হোসেন বলেছেন, দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি সিলেট সদর আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নির্বাচন করতে তিনি প্রস্তুত রয়েছেন জানিয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
রাজনৈতিক সচেতন অনেকে বলছেন, নিউইয়র্কের রাজনৈতিক-সামাজিক মঞ্চ থেকে তাদের দুই জনকেই প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে সিলেটসহ দেশের রাজনীতি ও নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে অনেকটা মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া হচ্ছে।
আলোচনা সভা অনুষ্ঠানেও প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম এসেছে। রাজনৈতিক ও নির্বাচনী মঞ্চে পরিণত হয়ে উঠছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই আসনে নির্বাচন করবেন কি করবেন না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সিলেটের আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বাদ দিয়ে প্রবাস থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কারও কারও নাম ঘোষণা করায় দলটির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন ড. এ কে মোমেন ও কাজী ছহুল হোসেইন। সম্প্রতি ব্যক্তিগত সফরে নিউইয়র্কে আসা সিলেটের এই দুই বরেণ্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত পৃথক পৃথক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানগুলো রাজনীতি ও নির্বাচনী সভা মঞ্চে পরিণত হয়।
শরিফুল হক মনজু/এসআর/এমআরএম/আরআইপি