ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মালয়েশিয়ায় এক বছরে ৬ হাজার বাংলাদেশির মৃত্যু

আহমাদুল কবির | মালয়েশিয়া | প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রবাসে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাংলাদেশিদের মৃতের সংখ্যা। মালয়েশিয়ায় এক বছরে ছয় হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশে আসছে প্রবাসীদের মরদেহ।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন ছয় হাজার বাংলাদেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগ, সড়ক দুর্ঘটনা ও ভবন নির্মাণের কাজের সময়।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাংলাদেশির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মূলত ওই অঞ্চল থেকেই মরদেহ আসছে সর্বাধিক। এর মধ্যে তালিকায় প্রথমে আছে সৌদি আরব। তালিকায় দুই নম্বরে মালয়েশিয়া। এরপর আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত।

গত ১০ বছরে কেবল সরকারি হিসাবেই বিভিন্ন দেশে মারা গেছেন ২৪ হাজার ৩শ ৮১ জন। এই হিসাব কেবল বিমানবন্দর হয়ে যেসব মরদেহ বাংলাদেশে গেছে এবং দূতাবাস ও জনশক্তি রফতানি ব্যুরো (বিএমইটি) যেসব বাংলাদেশির মরদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে দাফতরিক সহায়তা দিয়েছে তাদের নিবন্ধিত হিসাব মাত্র। প্রকৃত হিসাব কত তা জানা যায়নি।

এছাড়া যাদের মরদেহ ওইসব দেশেই দাফন করা হয়েছে তাদের বিষয়ে কোনো তালিকা বাংলাদেশে দফতরে নেই বলে জানা গেছে। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। মানবপাচারকারীদের মিথ্যা প্ররোচণায় কত মানুষ সমুদ্রপথে কিংবা অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, তার কোনো হদিস মিলছে না। সমুদ্রেই সমাধি হচ্ছে এর সংখ্যা কম নয়।

malayisa

জানা যায়, সরকারি হিসাবে ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন ২৪ হাজার ৩শ ৮১ জন। তবে ১০ বছরের তুলনায় সাম্প্রতিক কয়েক বছরে বিদেশে প্রবাসী মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি।

পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশে প্রতি মাসে প্রবাসীর মরদেহ আসছে ১৯৭টি। তবে গত চার মাসের হিসাব আরও উদ্বেগজনক। প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের মতো মরদেহ দেশে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এই হিসাবের বাইরে যাদের বিদেশে দাফন করা হচ্ছে তাদের সংখ্যা কত সে ধরনের কোনো তথ্য সংশ্লিষ্টদের কাছে পাওয়া যায়নি।

দৈত নাগরিকত্বের অধিকারীদের মৃত্যুর পর বিদেশেই দাফন করার হার বেশি। কিন্তু তাদের কোনো নিবন্ধন রাখছে না বাংলাদেশ দূতাবাস। তাই বিদেশে এ পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে দাফন করা হয়েছে তার কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ওইসব দেশে কতজন বাংলাদেশিকে দাফন করা হয়েছে তার কোনো হিসাব তারা দিতে পারেননি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এইসব তথ্য রাখার মতো কোনো আলাদা ডেস্ক নেই বলে জানা গেছে।

বিভিন্ন অপরাধে ৪৭টি দেশে ৭৮ জন বাংলাদেশিকে ওইসব দেশের আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মানবিক কারণে ২৯ জনের মৃত্যুদণ্ড রহিত করে তাদের অন্য দণ্ড দিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বিদেশ থেকে যত মরদেহ এসেছে তার প্রায় ৬৫ ভাগ এসেছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত থেকে।

mala

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী শ্রমিকদের মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচ বহন করে থাকে।

তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা ঠিকমতো ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বলে মালয়েশিয়া দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে। মূলত যারা অবৈধভাবে থাকেন তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না। জানা গেছে, যাদের বৈধতা রয়েছে এবং কাগজপত্র সঠিক তারাই ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর এই ক্ষতিপূরণ আদায়ে দূতাবাস সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকে।

অভিযোগে জানা গেছে, বরিশাল সদরের চরবুখাই নগর গ্রামের আছমত আলী দফাদারের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী মৃত. ফজলু দফাদার পাসপোর্ট নং (এফ-০৪৭৬৩৬৫) সিলনং-১২, ক্লেইমনং-৯৬/২০/৬, ০৭/১১/২০১৭। মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ হাইকমিশন থেকে তার স্ত্রী ও চার কন্যার নামে পাঁচটি ড্রাফ্ট আসে।

মৃতের পরিবার ডিইএমও বরিশাল থেকে ড্রাফ্ট গ্রহণের পর বরিশালের বিভিন্ন ব্যাংকে ড্রাফ্ট জমা দিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান ড্রাফ্টগুলো ভাঙানো যাবে না। পরবর্তীতে মৃত. ফজলু দফাদারের পরিবার ঢাকাস্থ ডাচ-বাংলা ব্যাংক, শান্তিনগর শাখায় জমা দিতে গেলে ড্রাফ্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান। ফলে মৃতের স্ত্রী শাহানূরের নামে একক চেক পাওয়ার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নিসহ মূল ড্রাফ্ট পাঁচটি ডিইএমওর মাধ্যমে হাইকমিশনে শ্রম কাউন্সিলরে ফেরত পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত দূতাবাস ক্ষতিপূরণের সমাধান করতে পারেনি। এ প্রতিবেদককে মোবাইল ফোনে এসব তথ্য জানান মৃত ফজলু দফাদারের স্ত্রী শাহানূর।

এ বিষয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করা হলে শ্রম কাউন্সিলর মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, ক্ষতিপূরণের চেক সময়মতো তারা ব্যাংকে জমা না করায় এ সমস্যা হয়েছে। অামরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধানের।

এছাড়া ৯ হাজার ৭শ ৫৪ জন শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ বাবদ ওই বোর্ডের তহবিল থেকে অনুদান পেয়েছে। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক ধীরগতি, হয়রানিসহ নানা কারণে বেশিরভাগ শ্রমিকের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমআরএম/বিএ

আরও পড়ুন