মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে লক্ষাধিক পাসপোর্টের আবেদন
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৬৪টি পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে গত ৫ মাসে প্রবাসীকর্মীদের মাঝে ৯৩ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছে দূতাবাস। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন দূতাবাসের পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মো. মশিউর রহমান তালুকদার।
দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীরা কয়েকটি ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে বৈধ হওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছেন। প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী দূতাবাসে যাচ্ছেন নতুন পাসপোর্টের আবেদন করতে। মালয়েশিয়া সরকারের চলমান রিহিয়ারিং প্রক্রিয়া শেষের দিকে। আর সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কর্মীদের হাতে দ্রুত পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে দূতাবাসের সেবার পরিধি বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের অস্থায়ী কাজের পারমিটের জন্যে ই-কার্ড প্রোগ্রামে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮০৬ অবৈধ শ্রমিকের নিবন্ধন সফলভাবে শেষ করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগ। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল ই-কার্ড নিবন্ধন। মালয়েশিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমদ জাহিদ হামিদির মতে, ৫৯% অর্থাৎ ৯৭,১৯১ জন বাংলাদেশি, ২২.৯% অর্থাৎ ৩৭,৭৪৩ জন ইন্দোনেশিয়ান এবং ১০.৯% অর্থাৎ ১৭,৯০৬ জন মিয়ানমারের নাগরিক সফলভাবে ই-কার্ড প্রোগ্রামে নিবন্ধন করেছেন।
বিগত দিনে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় শ্রমিক ঘাটতি মেটাতে ই-কার্ড প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল। ই-কার্ড নিবন্ধন প্রক্রিয় শেষ হয়েছে ৩০ জুন। যে সকল অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ই-কার্ড প্রোগ্রামে নিবন্ধন করে ই-কার্ড পেয়েছেন তাদের ই-কার্ডের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
ই-কার্ড প্রোগ্রামটি শুধুমাত্র ১৫টি দেশের নাগরিকদের জন্য চালু হয়েছিল। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ, ফিলিপাইন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং ভিয়েতনাম।
দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী আহমেদ জাহিদ বলেন, বৈদেশিক কর্মীদের জন্য শুরু হওয়া রিহায়ারিং কর্মসূচির জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ থেকে ৩০ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫২০ জন অবৈধ বিদেশি কর্মী আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্ছ সংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, মিশন সবসময় শ্রমিক বান্ধব। ই-কার্ড ও মাই-ইজির মাধ্যমে যারা নিবন্ধিত হয়েছেন যা সর্বমোট আবেদনের যথাক্রমে ৫৭% এবং ৮৯%। বাংলাদেশিদের এই অভূত পূর্ব সাড়ায় প্রশংসা করেন তিনি।
হাইকমিশনার বলেন, শ্রমিকদের সেবা নিশ্চিত করতে প্রত্যেকটি প্রদেশে দেওয়া হচ্ছে কন্স্যুলার সেবা। যারা বৈধ হওয়ার জন্য রি-হিয়ারিং অথবা ই-কার্ড করেছেন, তাদের সঠিক কাগজ পত্র নিয়ে দূতাবাসে আসলে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট অথবা কন্স্যুলার সেবা দিতে সকল কর্মকর্তা প্রস্তুত রয়েছেন।
হাইকমিশনার বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৬৪ টি। এ সময়ের মধ্যে ৯২ হাজার ২৬২ টি পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রিহায়ারিং প্রোগ্রামের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার মাই-ইজি সার্ভিস বারহাদ, ভক্তিমেঘা ও ইমান কোম্পানি অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের রিহায়ারিং প্রোগ্রাম পরিচলনা করে আসছে। তবে এর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতু মোস্তাফার আলী।
এআরএস/আইআই