মালয়েশিয়া প্রবাসীদের দেখার কি কেউ নেই?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন জহিরুল ইসলাম জহির নামে এক মালয়েশিয়া প্রবাসী। চিঠিতে তিনি দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশিদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।
চিঠিতে জহিরুল ইসলাম জহির উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন সচেতন মালয়েশিয়া প্রবাসী। গত কয়েকদিন আগের ঘটনা, আমার এক ছোট ভাই রহিম পাসপোর্ট আনার জন্য হাইকমিশনে যায়। অন্য হাজারও বাংলাদেশি ভাইদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়ায়। দাঁড়ানোর কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্তু সেখানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার কোনো ব্যবস্থা নেই। এই হলো আমাদের মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। বৃষ্টিতে টাকা-পয়সাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিজে যায় রহিমসহ হাজার প্রবাসীর।’
‘প্রায় কাকভেজা শরীর নিয়ে লাইনে দাড়াঁনো, আবার লাইনের মধ্যে বিল্ডিং মালিকের নিরাপত্তাকর্মীদের নির্যাতন, ঘণ্টা দুয়েক পর ভেজা শরীর নিয়ে হাইকমিশনের ভেতর ঢুকতে গেলে বাধা দেয়া এবং প্রতিবাদ করলে নিরাপত্তাকর্মীদের মারধরসহ খারাপ ব্যবহারের মুখোমুখি হতে হয়। দুঃখের বিষয় এমন পরিস্থিতি দেখার পরও হাইকমিশনের কোনো কর্মকর্তা বাইরে এসে বিষয়টি দেখারও সময় হয় না।’
চিঠিতি তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসীদের শেষ আশ্রয় হলো নিজ দেশের দূতাবাস, সেই দূতাবাসে গিয়ে মার খাওয়া, অপমান হওয়া- এসব কি আপনার মন্ত্রীরা খবর রাখেন? বর্তমান হাইকমিশন বিল্ডিংয়ের এক তলার অর্ধেক ভাড়া নিয়ে অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অথচ মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত ৮/১০ লাখ বাংলাদেশির জন্য দূতাবাসে প্রবেশের জন্য নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই। দূতাবাসে প্রবেশের একটি রাস্তা, সেটি শুধু ভিআইপিরা অর্থাৎ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ব্যবহার করতে পারেন। আর সাধারণ প্রবাসীদের দূতাবাসে ঢুকতে হলে বিল্ডিংয়ের মালিকের জায়গা ব্যবহার করতে হয়। এ কারণে মালিক যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেন, মাঝেমধ্যে রাস্তাটির গেট তালাবদ্ধ রাখা হয়, আবার জনপ্রতি এক রিংগিত করেও নেয়া হয়।’
জহিরুল ইসলাম প্রশ্ন রাখেন, ‘কেন আমরা টাকা দেব? জিজ্ঞাসা করলে, নিরাপত্তাকর্মীরা বলে, এটা তো দূতাবাসের ভাড়া করা জায়গার রাস্তা না- এই হলো মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন।’
খোলা চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আরও লেখেন, ‘মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত রাষ্টদূত কতটুকু ভালো চান প্রবাসীদের, আওয়ামী লীগ সরকার ও আপনার ৮/১০ লাখ প্রবাসীর ভালো চাইতে গিয়ে একটা বিল্ডিংয়ের এক তলার অর্ধেক ভাড়া নেয়া হলো কার স্বার্থে? যেখানে সাধারণ প্রবাসীদের প্রবেশের নিজস্ব কোনো রাস্তা নেই? এমন স্থানে দূতাবাস করা হলো যেখানে এক লাখ প্রবাসীর সেবা দেয়ারও উপযুক্ত নয়।’
‘আমি এসব লিখলাম নিজের চোখে দেখে, নিজের কাজে গিয়েও চরম হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আমাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমার আবেদন, একটু ভেবে দেখবেন, ছবিও দিলাম, সত্য কি মিথ্যা- তদন্ত করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।’
‘এখানে যেভাবে দূতাবাস করা হয়েছে এভাবে কোনো দূতাবাস হয় না। প্রয়োজনে আপনি নিজেই একটি টিম পাঠিয়ে তদন্ত করে দেখুন। তদন্তে সাক্ষাৎকার নিতে হবে লাইনে দাঁড়ানো সাধারণ প্রবাসীদের, কোনো রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নয় এবং দূতাবাসের কোনো কর্মকর্তার নয়।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলার জনগণের কথা বলেন, জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনার পরিশ্রম ধুলায় লুটিয়ে দিচ্ছেন মালয়েশিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্টদূত শহীদুল ইসলাম এবং অযোগ্য কিছু কর্মকর্তা। এ বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।’
এমএআর/এমএস