মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে বাংলাদেশিদের হয়রানি না করার অনুরোধ
বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের হয়রানি না করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ। প্রয়োজনে ভিসা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় আরও কঠোর করতে দেশটিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ভিসা থাকার পরেও ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের হয়রানির বিষয়ে ঢাকার মালয়েশিয়া হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়া কুয়ালালামপুর বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও মালয়েশিয়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিরা সম্প্রতি ব্যাপকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও অনেককে ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই মালয়েশিয়া সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে বলেও সূত্র জানায়।
ঢাকায় মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ইদহাম জুহরি মোহামেদ ইউনুসকে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে বাংলাদেশিদের বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াকে জানানো হয়েছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে সম্প্রতি বাংলাদেশি যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা থাকার পরেও বাংলাদেশিদের সেদেশে প্রবেশ করতে না দেওয়া ও নানা হয়রানিমূলক আচরণ করার বিষয়টি মালয়েশিয়াকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়া আরও কঠোর হতে পারে। তবে ভিসা দেওয়ার পর বিমানবন্দরে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়াটা দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সূত্র জানায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসা অনেকটাই সহজ। কেননা দেশটির ট্যুরিস্ট ভিসা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভিসা প্রার্থীকে সরাসরি কোনো ধরনের সাক্ষাৎকার দিতে হয় না। শুধু কাগজপত্র দেখেই ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে থাকে ঢাকার মালয়েশিয়ার হাইকমিশন। সে কারণে বেশ কিছু দালাল ও প্রতারক চক্র এই সুযোগে মালয়েশিয়ার ট্যুরিস্ট ভিসায় সেদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে।
এতে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে আসল ট্যুরিস্টদেরও হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে আরও ভালভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ করা হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে শত শত যাত্রী যাওয়া আসা করেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সমৃদ্ধ পর্যটন এলাকায় বেড়াতে তুলনামূলকভাবে খরচ কম হওয়ার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই দেশটিতে বাংলাদেশি পর্যটক বেড়েছে। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী বিভিন্ন বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশি যাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেখানের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়া হতো।
বিশেষ করে দালালচক্রের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে যারা মালয়েশিয়ায় থেকে যেতে আগ্রহী তারা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন না। তাদের মালয়েশিয়া বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে। তবে এখন যেভাবে বিভিন্ন যাত্রীকে বিমানবন্দরের ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রেখে নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে, সেটা আগে করা হতো না।
এদিকে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকেও বাংলাদেশি যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেখানে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ আশ্বাসও দিয়েছে বাংলাদেশি যাত্রীরা যেন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর/জেআইএম