দেশে মেডিকেল ফিট হলেও কুয়েতে আনফিট : চারজনকে ফেরত
জনশক্তি রফতানির আগে প্রত্যেক শ্রমিকের মেডিকেল পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তবে এখানেও অনিয়মের কমতি নেই। সম্প্রতি দেশে মেডিকেলে ফিট হলেও মাত্র চার মাস পর কুয়েত মেডিকেলে আনফিট হওয়ায় চারজনকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
দেশে ফেরত চারজন হলেন- ঢাকার ইব্রাহীম গাজী, নোয়াখালীর মোতালেব, নরসিংদীর আনসার মিয়া ও গাজীপুরের হাসান।
জানা গেছে, উন্নত জীবন যাপনের জন্য ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে ছয়/সাত লাখ খরচ করে চার মাস আগে কুয়েত যান তারা। তবে কুয়েতে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আনফিট ধরা পড়লে গত ১৯ জুলাই দেশে পাঠিয়ে দেন কুয়েতে আল সারি ক্লিনিং কোম্পানি। ফলে কুয়েতে চার মাস থাকলেও দেশে ফিরে আসতে হয় শূন্য হাতে।
ঢাকা কেরানীগঞ্জের ইব্রাহীম গাজী বলেন, আমাদের চারজনকে আলাদা রুমে আটক রাখা হয়েছিল। রুমের মধ্যে আমাদের সব কাপড় রয়ে গেছে, কিছুই নিতে দেয়নি। এক কাপড়ে তারা বিমানবন্দরে দিয়ে গেছে। দেশে নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, কিছু জায়গা বিক্রি করে এবং একটি ফাউন্ডেশন থেকে আড়াই লাখ টাকা লোন নিয়েছি। এ ছাড়া মাসিক সুদে আরও দুই লাখ টাকা ধার নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে কুয়েত গিয়েছিলাম এ বছরের ১৭ মার্চ।
ঢাকা পল্টনের এস আর ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্ট থেকে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে আল সারি ক্লিনিং কোম্পানি। আমি নিশ্চিত হওয়ার জন্য দেশে একাধিক বার একাধিক মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা করিয়েছি, আমার কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। সর্বশেষ সিলেট মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস লিমিটেডেও ফিট মেডিকেল রিপোর্ট দেয়া হয়। কিন্তু কুয়েতে মেডিকেল রিপোর্টে কেন আপনাদের আনফিট দেয়া হল? যার ফলে আপনাদের এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, কুয়েত যাওয়ার পর প্রথমে একটি কোম্পানিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ দেয়া হয়। দুই মাসের চুক্তিতে কাজে নিয়ে শ্রমিকদের ঠিক মত বেতনও দেয় না। প্রথম মাস কাজ করে আমরা ১৩ দিনার পাই। এরপর আর ৬০ দিনার পাই। তবে দেশে ফেরত আসার সময় টাকা চাইতে গেলে বলা হয়, তোদের বেতনের টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কেটেছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের কিছু অসাধু দালালদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোম্পানির চাহিদার অতিরিক্ত লোক পাঠানো হয়। দুই মাস কুয়েতে থাকার পর আমাদের কাছে দালাল মারফত আরও ৭০ হাজার টাকা করে চাওয়া হয়। বলা হয়, এ টাকা দিলে আকামাসহ সব কাগজপত্র হয়ে যাবে। অন্যথায় ঝামেলা হলে তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।
ইব্রাহীম গাজী বলেন, এক কাপড়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছি, এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। পরিবার কিভাবে চালাবো? কিভাবে ঋণ শোধ করব? চোখে অন্ধকার দেখছি। বাড়ি ফেরার পর পাওনাদারদের তাগাদা শুরু হয়ে গেছে। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।
আবু সাদেক রিপন/আরএস/এমএস