স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম হীরার দেশে
দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিলাম বড় স্বপ্ন নিয়ে। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় আজ আমার করুণ দশা। ১০ লাখ টাকা খরচ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসেছিলাম হীরার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। যখন এ দেশে পা দিয়েছি, তখন থেকেই কষ্ট, হতাশা ও অনিশ্চয়তায় প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে আমার।
এ দেশে চারদিকে আতঙ্ক। সব সময় আল্লাহকে ডাকি রাতটা যেন ভালোভাবে কাটে।দিনে টাকা-পয়সা সঙ্গে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। আবার রাতে ঠিকমতো ঘুমও আসে না সন্ত্রাসীদের ভয়ে। জানি না দেশে ফিরতে পারব কি না? বেশিরভাগ নিগ্রো (কালো) কোনো কাজ করে না। সবসময় মদ্যপ অবস্থায় রাস্তায় প্রকাশ্যে মাতলামি করে। সরকার মাসে মাসে ওদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়েই সংসার চালায় ওরা। কথাগুলো বলছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবাসী উজ্জল হোসাইন।
এখানে এসেছি প্রায় পাঁচ বছর আগে। এর মধ্যে ৮-৯ বার হামলার শিকার হয়েছি। দোকানের মালামাল লুট হয়েছে অনেকবার। দুবার আমার হাতে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। প্রতি দিনই ঝরছে কারও না কারও প্রাণ। অভিযোগ করার মতো কাউকে পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখানকার পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করে না। নিগ্রোদের সবাই ভয় করে। বাঙালিদের দোকানই এখানে আয়ের প্রধান উৎস। এসব দোকানে আফ্রিকানদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পাওয়া যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কীভাবে গেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে আসা সহজ। বৈধ কাগজপত্র লাগে না এ দেশে ঢুকতে। পাসপোর্ট আগেই জমা দিয়েছিলাম।ভিসার কাজ ওরা আগেই করে রেখেছিল। ১ লাখ টাকা সঙ্গে আনতে হয়েছিল। চট্টগ্রামে একটি হোটেলে রাতেই আমাদের সাতজনকে বিস্তারিত বিষয় বুঝিয়ে দেয়া হলো। প্রথমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ভোরে ফ্লাইট এরপর দুবাই বিমানবন্দর। দুবাই থেকে কেনিয়া, কেনিয়া থেকে ইথিওপিয়া। এরপর পাশের দেশ ইথিওপিয়া থেকে মোজাম্বিকে পৌঁছাই। মোজাম্বিকে দুদিন রেখেছিল আমাদের। ভোরে আমাদের আফ্রিকা বর্ডারের কাঁটাতার কেটে ঢোকানো হয়েছিল।
দালালদের শর্ত মোতাবেক দেশ ত্যাগ করেছিলাম। সঙ্গে ছিল প্রায় ১২০০ ডলার। ডলার ওরাই ভাঙিয়ে দিয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাকি টাকা সাউথ আফ্রিকায় পৌঁছানোর পর দিতে হবে। ওই ডলার বিভিন্ন দেশে খাবার, মোবাইল রিচার্জ ও আনুষঙ্গিক কাজে লেগেছিল। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছাতে কমপক্ষে পাঁচদিন লাগবে।
এরপর রাখা হয় পাকিস্তানিদের কাছে। আমাদের কাছে যা ছিল সবই কেড়ে নেয় পাকিস্তানি আদম দালালরা। তিনদিন একটা বদ্ধরুমে আমাদের আটকে রাখে। খাওয়া-দাওয়া সবই বন্ধ। ঠিক তিনদিন পর বর্ডার পার করে দেয়। এরপর আফ্রিকান দালালরা আমাদের রিসিভ করে। রিসিভ করার পর আমাদের ফোন দিতে বলে বাড়িতে বাকি টাকা পরিশোধ করার জন্য। পৌঁছামাত্রই আরও ২ লাখ টাকা দালালদের দিতে হয়। তবেই আমরা মুক্ত। এত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি হয়। অবৈধভাবে যাওয়ায় সে দেশে চাকরি কিংবা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন থাকার পর কমপক্ষে বাংলাদেশি ২ লাখ টাকা দিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তবে অবৈধ প্রবাসীদের আইনি ঝামেলা নেই বললেই চলে। পুলিশকে টাকা দিলেই সব সমস্যার সমাধান।
এমআরএম/পিআর