ফেসবুকে পরিচয় : অন্যের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়ায় পলায়ন
ভালোভাবেই সংসার চলছিল মো. রকিবুল হক ও এসএম সোনিয়া হালিমা হামিদের। একে অপরকে ভালোবেসেই ২০০২ সালে বিয়ে করেন তারা। ২০০৯ সালে তাদের ঘরে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান। পরবর্তীতে তাদের সংসারে আসে আরও এক কন্যাসন্তান।
কিন্তু তাদের দীর্ঘ ১৪ বছরের সংসারে হঠাৎ করেই ভাঙনের সুর তোলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। ২০১৬ সালের জুলাইতে স্বামীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও সোনিয়া মালয়েশিয়ায় যান। দীর্ঘ ২৮ দিন পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরলে স্বামী রকিবুলের সন্দেহ হয়। তারপরও সন্তান ও সংসারের স্বার্থে সবকিছু মেনে নেন স্বামী।
একই বছরের নভেম্বরে রকিবুল স্ত্রী সোনিয়ার ব্যাগে তার পাসপোর্টের ফটোকপি পান এবং সেখানে স্বামীর নামের জায়গায় আলী রেজা সোহেল নামে এক ব্যক্তির নাম দেখেন। রকিবুল স্ত্রীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্ত্রী তখন কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপর থেকে স্ত্রী সোনিয়ার প্রতি রকিবুলের সন্দেহ বাড়তে থাকে। রকিবুল জানতে পারেন, আলী রেজা সোহেলের সঙ্গে সোনিয়ার ফেসবুকে পরিচয়ের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। একপর্যায়ে সোনিয়া আলী রেজা সোহেলের সঙ্গেই মালয়েশিয়া চলে যান।
রকিবুল হক জানান, ওই ঘটনার কিছুদিন পর থেকেই তার স্ত্রী ও দুই সন্তান বাসা থেকে উধাও হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও স্ত্রী-সন্তানদের হদিস পাননি তিনি। পরে এক মাধ্যম থেকে জানতে পারেন, সোনিয়া ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় যান এবং এ কাজে সোনিয়ার ভাই মাহফুজ আলম জিতু সহযোগিতা করেন।
এ খবরে রকিবুল ঢাকার একটি থানায় স্ত্রীর ভাই মাহফুজ আলম জিতু ও তার স্ত্রী মরিয়ম রহমানের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেন। আসামিদের গ্রেফতারের পর একদিনের রিমান্ড শেষে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পায় পুলিশ।
কিন্তু এতেও যখন কাজ হচ্ছিল না তখন স্ত্রী ও সন্তানদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য রকিবুল নিজেই চলতি বছরের এপ্রিলে মালয়েশিয়া যান। সেখানে রকিবুল আইনের আশ্রয় নেন। মইনুদ্দিন চৌধুরী বনি নামে এক বাংলাদেশির সহায়তায় রকিবুল তার স্ত্রী ও আলী রেজা সোহেলের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার বান্দরকিনা থানায় মামলা করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৫ মে আসামিদের গ্রেফতার করে। পরে দুপক্ষকে মুখোমুখি করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে আলী রেজা সোহেল সোনিয়াকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। এমনকি দুই সন্তানকে নিজ সন্তান বলে দাবি করেন। দাবির স্বপক্ষে কাগজপত্রও দেখান তিনি।
এ সময় রকিবুল ২০০৮ সালের ২২ মার্চ দেয়া সোনিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্বামীর নামের জায়গায় নিজের নামের প্রমাণ দেখান। এতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দ্বিধায় পড়েন এবং সমাধান দিতে অপারগতা জানান।
স্ত্রী-সন্তান কেউই তার নয়, এমনটা জানার পর এর শেষ দেখতে চান রকিবুল। তিনি আবারও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আকামা ইসলামে (আইন প্রয়োগকারী সংস্থা)। বিষটি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে ও ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করার জন্য গত ৯ মে আলী রেজা সোহেলকে গ্রেফতার করে আকামা ইসলাম। তবে সোনিয়া অন্তঃসত্ত্বা থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী রকিবুল হক বলেন, ‘সোনিয়ার সঙ্গে আমার এত বছরের সংসার। আমার এই সোনার সংসারে ফেসবুকের মাধ্যমে কাল হয়ে ঢুকে আলী রেজা সোহেল। আমি এই বাচ্চার বাবা এটাও তারা এখন অস্বীকার করছে। প্রয়োজনে আমি ডিএনএ পরীক্ষা দিতেও রাজি। আমি তাদের বাবা এই পরিচয়টি আমি চাই। আলী রেজা সোহেল আর সোনিয়াকে দেশে ফেরত নিয়ে এদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।’
রকিবুলকে মালয়েশিয়ায় সব কাজে সহযোগিতা করেছেন মইনুদ্দিন চৌধুরী বনি। এ প্রসঙ্গে বনি বলেন, ‘এই ছেলেকে (আলী রেজা সোহেল) বাংলাদেশে আইনের আওতায় আনলেই বেরিয়ে আসবে সন্তান ও স্ত্রী কার। কেন তারা ভুয়া কাগজপত্র বানাল। এখানে তারা যা দেখিয়েছে সব ভুয়া, তাদের কথাবার্তায় অনেক ফাঁক-ফোকর রয়েছে।
এআরএস/এসআর/জেআইএম