সেকেন্ড হোম নিতে বাংলাদেশিদের প্রতি মালয়েশিয়ার আহ্বান
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম নিতে বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সরকার। এ প্রসঙ্গে বেশ জোর দিয়ে মালয়েশিয়ার পর্যটন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ নাজরি বিন আব্দুল আজিজ বলেছেন, ‘আপনারা মালয়েশিয়ায় শুধু বেড়াতে বা শ্রম দিতে আসবেন না। আপনারা এখানে সেকেন্ড হোম নিয়ে বসবাস করুন। এ ব্যাপারে আমি নিজে সহায়তা করবো এবং সব সম্যসা সমাধানে মালয়েশিয়া সরকার সহযোগিতা করবে।’
মালয়েশিয়ায় ‘বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট’-এর দ্বিতীয় দিন রোববার পৃথক চারটি সেমিনারের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
শনি ও রোববার কুয়ালালামপুরের বার্জায়া টাইম স্কয়ার হোটেলের হলরুমে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইউরোপীয়ান প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন ‘অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (আয়েবা)’ -এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়ার এই মন্ত্রী বাংলাদেশিদের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন। এতো সুন্দর একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আয়েবাকে ধন্যবাদ। আমি বাঙালিদের প্রতি অতি আকৃষ্ট। কারণ তাদের মধ্যে ভালো একটি সংস্কৃতি রয়েছে। আমি লন্ডনে এক সফরে গিয়ে কোথাও হালাল খাবার পাইনি। শুধু বাংলাদেশিদের রেস্টুরেন্টে সম্পূর্ণ হালাল খাবার পেয়েছিলাম।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রথমেই এই প্রবাসী সম্মেলন কুয়ালালামপুরে করার পছন্দকে স্বাগত জানাচ্ছি। মালয়েশিয়া একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের মাটি মুসলমানদের জন্য যতটা নিরাপদ তেমনি অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও নিরাপদ। আমি জানি, বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যায় মালয়েশিয়া তৃতীয়।
তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে বাংলাদেশি কর্মীরা বিশেষ একটি ভূমিকা পালন করছেন। তাদের শ্রমেই মালয়েশিয়ার অর্থনীতি উন্নত হচ্ছে। আমি মালয়েশিয়ানদের প্রতি অনুরোধ রাখবো, আপনারা যখন ওমরা করতে সৌদি আরবে যান, এই যাওয়া বা আসা বাংলাদেশ হয়ে যান। কারণ বাংলাদেশ চমৎকার একটি দেশ। মালয়েশিয়ায় এ রকম আরো সম্মেলনের আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আহ্বান জানান দাতো সেরি মোহাম্মদ নাজরি বিন আব্দুল আজিজ।
সম্মেলনে প্রবাসীদের সমস্যা, সম্ভাবনা, দেশে বিনিয়োগ, জ্বালানি, পরিবেশ, পর্যটন, অভিবাসনসহ উন্নয়নের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে কুয়ালালামপুর ডিক্লারেশন নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন আয়োজকেরা।
দুই দিনের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম। শনিবার প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সেশনের পর শুরু হয় বিশেষায়িত কর্মশালা। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবানও হচ্ছেন। বাংলাদেশের বাইরে যেসব প্রবাসী বসবাস করছেন, তারাও দেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।
অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অবদান ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। প্রবাসীরা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে আরও কী কী ধরনের অবদান রাখতে পারেন, সেটা আলোচনার জন্যই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিটের আয়োজন করা হয়েছে। এই সেমিনারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে একটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে।
সমাপনী সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন আয়েবার সভাপতি প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন সম্পাদক আবেদ খান, একুশে টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, সময় টেলিভিশনের সিইও আহমেদ জোবায়ের, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রধান সাবির মুস্তাফা। বাংলানিউজের কনট্রিবিউটিং এডিটর মাহমুদ হাফিজ, বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম ও অধ্যাপক ফরহাদ আনোয়ার।
প্রবাসীদের মধ্যে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন মুকুল, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হাকিকুল ইসলাম খোকন, তাহমিনা ওয়াটসন ও মায়া নেহাল, কোরিয়া প্রবাসী আবু বকর সিদ্দিক রানা, সিঙ্গাপুর প্রবাসী এমএ রহীম, মো. সাখাওয়াত হোসেন, সিকদার গিয়াস উদ্দিন, মাহবুব সিরাজ, সিঙ্গাপুর থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা বাংলার কণ্ঠ`র সম্পাদক একেএম মহসীন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সরওয়ার কামাল এবং জাপান প্রবাসী শেখ আলীমুজ্জামান, আয়েবার প্রধান উপদেষ্টা আহমেদ সামাদ চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মুহিবুর রহমান মুহিব, ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাখরুল আকম সেলিম, নুরুল করিম, রানা তসলিম উদ্দিন, শামসুল আলম লিটন, শরীফ আল মোমিন, সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক মাঈনুল ইসলাম নাসিম, এমএএইচ ফেরদৌস, শফিক খান, মাহারুল ইসলাম মিন্টু, নাসরিন জাহান ও সাইফুল খন্দকার।
আলোচনা সভা শেষে শান্তা জাহনের উপস্থাপনায় ‘বাংলাদেশ নাইট’ নামক এক জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় রাত ৯টায়। একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরসহ প্রবাসের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী শিল্পীরা নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে গ্লোবাল সামিটের রূপরেখা প্রকাশ করেন আয়েবার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড জিন্নুরাইন। রূপরেখা প্রকাশের পরপরই ব্যবসায়ী নেতা মো. আতিকুল ইসলাম অল ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন নামে একটি সংস্থার নাম ঘোষণা করেন।
এ সময় নতুন আহ্বায়ককে স্বাগত জানান সামিটে যোগ দেয়া বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ থেকে দুই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি।
জেডএ/এনএইচ/এমএস