ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

যুক্তরাজ্যে বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলনের যাত্রা

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:৪৮ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

মাহবুব আলী খানশূর, যুক্তরাজ্য

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকার আদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলন। সারা বিশ্বের প্রবাসীদের অধিকার আদায়ে ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করার প্রত্যয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় লন্ডনে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্পৃক্ত থাকা শিক্ষার্থী ও সাধারণ প্রবাসীদের বিপ্লব পরবর্তী ঐক্যবদ্ধ রাখতে সংগঠিত হয় বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলন।

‘প্রবাসীদের স্মৃতিতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দিনগুলো’ শিরোনামে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রবাস থেকে অবদান রাখা ছাত্র–জনতার একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় লন্ডনের হোয়াইট্যাপেলে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রবাস থেকে সক্রিয়ভাবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ যোগ দেন।

বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা নাঈম হাসানের সঞ্চালনায় ও ইঞ্জিনিয়ার রাজিব হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আতাউল্লাহ ফারুক, সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মাহবুব খানশূর, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রুপম রাজ্জাক, তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল নোমান।

যুক্তরাজ্যে বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলনের যাত্রা

এছাড়া মতবিনিময় সভায় ‘প্রবাসীদের স্মৃতিতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের দিনগুলো’ স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রবাসীরা।

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার বিদায় নিলেও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। প্রবাসীরা দেশের আন্দোলনে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন, সামনের সময়ে একইভাবে দেশ গড়ার কাজেও তারা অবদান রাখবেন। প্রবাসীরা সবক্ষেত্রে অবদান রাখলেও দেশে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হন। সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে প্রবাসীদের প্রবাসী হিসেবে নয় বরং দেশের নাগরিক হিসেবে প্রকৃত মর্যাদা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য প্রবাসীদের অধিকার আদায় ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা দেশে এবং প্রবাসে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। তারা ইউরোপ, আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে অবস্থানরত প্রবাসীদের চেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার হন। তাই উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে সেসব প্রবাসীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকবে সংগঠনটি।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের সংগ্রাম, দেশে বিভিন্ন প্রকার দালাল চক্র বিদেশে পাঠানোর নাম করে প্রবাসীদের অর্থ আত্মসাৎসহ তাদের কাছ থেকে ভিসা বাবদ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে থাকে, যেন নিঃস্ব হয়ে পড়ে একেকটি প্রবাসী পরিবার। তাই এ ধরনের প্রতারণা বন্ধে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান সংগঠনটি।

এছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা, প্রবাসী অধিকার নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে প্রবাসী এমপি নির্বাচিত করার বিধান রাখার দাবি সংগঠনটির, যারা প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় কথা বলতে পারবেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীরা বলেন, প্রবাসীরা কষ্টার্জিত অর্থ রেমিট্যান্স হিসেবে পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা দেন, কিন্তু সেই প্রবাসীরাই ছুটিতে দেশে গেলে নানা ধরনের হয়রানির স্বীকার হতে হয়। প্রত্যেক প্রবাসীকে বিমানবন্দরে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করতে হবে, সম্ভব হলে বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমনে প্রবাসীদের জন্য ভিআইপি সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি স্তরে প্রবাসী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী হিসেবে নয় বরং দেশের নাগরিক হিসেবে প্রকৃত মর্যাদা নিশ্চিত করা।

বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলন থেকে প্রবাসীদের ১২ দফা সংস্কার প্রস্তাব:

১। বিমানবন্দরে হয়রানি বন্ধ ও প্রবাসীদের দেশে আগমন ও বহির্গমনে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করতে হবে।
২। বাংলাদেশ বিমানের দুর্নীতি বন্ধ করে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রবাসীদের জন্য বিমানে টিকিটের মূল্য কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনতে হবে।
৩। বিদেশে মৃত্যুবরণ করা অসচ্ছল প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪। সিন্ডিকেট ভেঙে অভিবাসন ব্যয় কমানো। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যারা ভিসার দালালি করে মানুষ প্রতারিত করছেন, কমিশন গঠন করে তাদের একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা।
৫। প্রবাসীর পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা।
৬। দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও স্মার্ট কার্ড পাওয়া সহজীকরণ এবং প্রবাস থেকে ভোটদানের সুযোগ। এছাড়া পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালালমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা।
৭। দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ রাখা। প্রবাসী অধিকার নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে প্রবাসী এমপি, যারা প্রবাসীদের স্বার্থে কথা বলতে পারবে।
৮। দূতাবাসগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে প্রবাসীদের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা। প্রবাস থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ জানানোর সরাসরি ব্যবস্থা।

যুক্তরাজ্যে বৈষম্যবিরোধী প্রবাসী আন্দোলনের যাত্রা

৯। মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত কর্মীরা অবসরে নিয়ে দেশে ফেরত গেলে তাদের পেনশন–সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা। প্রবাস থেকে দূতাবাসের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা।
১০। প্রবাসফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণসুবিধা দিতে হবে। দালালদের দ্বারা প্রতারণার শিকার প্রবাসী কর্মীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।
১১। বিদেশে বৈধ কাগজপত্রবিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
১২। এছাড়া জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। যেকোনো বিপদে সার্বক্ষণিক প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে ম্যান পাওয়ার প্রাপ্তি সহজীকরণ ও হয়রানি বন্ধ করা। প্রবাসযাত্রার পূর্বে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের নামে অর্থ আদায় ও হয়রানি বন্ধ করা।

বিশ্বের প্রায় ৪০টির বেশি দেশ থেকে সমন্বয়কেরা সংগঠনটির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে জার্মানি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, আমেরিকা, কানাডা, ইতালি, চেক রিপাবলিক, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, মালয়েশিয়া, তুর্কিয়ে, গ্রিস, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, মাল্টা, রোমানিয়া, আয়ারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জাপান, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, জাপান, ঘানা অন্যতম।

এমআরএম/এএসএম