ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

বন্ধু আর কাপড়: জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

রহমান মৃধা | প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

কাপড় পরি সবাই। নানা ধরনের কাপড় পরি। কিছু কাপড় বছরে একবার পরি। কিছু কাপড় মাসে একবার পরি, কিছু কাপড় সপ্তাহে একবার পরি। কিছু কাপড় প্রতিদিন পরি। কখনো কি ভেবেছেন যে, কাপড়টা যত দামি, সেটাই জীবনে কম সময় পরি? যেমন বিয়ের কাপড় অনেক দাম দিয়ে কেনার পরও জীবনে খুব একটা বেশিবার সেটা পরা হয় না।

একটা গেঞ্জি, লুঙ্গি বা শাড়ি প্রতিদিন ব্যবহার করি। কয়েক দিন আগে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এক বন্ধু বেড়াতে এসেছিল, সে একটি পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছিল। এবারের বিয়েতে সেই পাঞ্জাবিটি কিছুক্ষণের জন্য পরেছি। কিছু কাপড় শুধু বিশেষ উপলক্ষে ব্যবহার করা হয়।

কিছু কাপড় আলমারিতে বছরের পর বছর ঝুলতে থাকে কোনো ব্যবহার ছাড়াই। আবার এমনও আছে, অনেকে কাপড় ব্যবহার না করলেও তা অন্য কাউকে দিতে চায় না। এখন কাপড়ের দাম এবং তার ব্যবহারের দিকগুলো চিন্তা করার পর যদি প্রশ্ন করি, কোন কাপড়টা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন? হাজার রকম বিশ্লেষণ দেওয়া যেতে পারে, জানি না সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে কিনা! তাছাড়া যখন এক বা দুইবার পরি, তখন দোকান থেকে ভাড়া কেন করি না? এ সিস্টেমটি চালু হলে ভালো হতো (যদিও এটা অন্য একটি ইস্যু যা এ লেখায় টানছি না)।

কাপড়ের মতো আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রয়েছে, সেটা কী জানেন? সেটা হচ্ছে বন্ধু। বন্ধুকে কাপড়ের সঙ্গে তুলনা করব? এতে কি বন্ধুর মান সম্মানের হানি হবে, নাকি তাকে ছোট করা হবে? আমি বেশ ভেবে চিন্তেই উদাহরণটি তুলেছি, তারপরও মতভেদ হতে পারে। চলুন জানা যাক বন্ধু কীভাবে কাপড়ের মতো হতে পারে। বন্ধু একটি চমৎকার শব্দ। বন্ধুর মধ্যে রয়েছে শুধু বন্ধুত্ব। শৈশবের বন্ধু, গ্রামের বা শহরের বন্ধু, ক্ষণিকের পরিচয়ে বন্ধু, স্কুল বা কলেজের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, কাজের বন্ধু, বিদেশি বন্ধু, ফেসবুকের বন্ধু – আরো কত বন্ধু, তার ইয়ত্তা নেই।

কাপড়ের মতো কত প্রকারেরই না বন্ধু রয়েছে। এখন সব বন্ধুর সঙ্গে কি আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ হয়? না। কিছু বন্ধু সময়ের সাথে ঝরে যায়, কিছু বন্ধু হারিয়ে যায়, কিছু বন্ধু পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের পেছনে যুক্তি এবং অজুহাত রয়েছে। আবার দেখা যায়, কিছু বন্ধুর সাথে সেই কবে চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর বা আরো অনেক আগে শেষ দেখা হয়েছে। হঠাৎ কোনো গেট টুগেদারে দেখা হয়, কোনো কোনো বন্ধু বছরে ঈদ উপলক্ষে হয়তো একটি টেক্সটে ঈদ মোবারক জানায়।

কয়েকজন বন্ধু মাঝে মধ্যে হাই-বাই বলে। আবার এমনও আছে, কিছু বন্ধু প্রতিদিন প্রতিক্ষণ সেই দৈনন্দিন শাড়ি এবং লুঙ্গির মতো হৃদয়ে জড়িয়ে থাকে। ভেবেছেন কি প্রতিদিনের ব্যবহার করা শাড়ি ও লুঙ্গি আর সারাক্ষণের বন্ধুর মধ্যে কী ভীষণ মিল? সেটা আবার কী? শাড়ি-লুঙ্গি ও সারাক্ষণের বন্ধুর ওপর তেমন দরদ বা অনুভব হৃদয়ে আসে না। অথচ বহু বছর পরে যখন হঠাৎ এক বন্ধু একটি টেক্সট করে, তখন হৃদয়ে বিরাট আলোড়নের সৃষ্টি হয়। মনে হয়, বিরাট কিছু ঘটে গেছে জীবনে। এ বিষয়টি হয়তো আবার আলোচনা হয় সেই বন্ধুর সাথে, যে হৃদয়ে জড়িয়ে রয়েছে লতার মতো। যাই হোক, বন্ধু কাপড়ের মতো নাকি কাপড় বন্ধুর মতো – সেটি আরেকটি ভাবনা, তা নিয়ে এখন কিছু লিখতে চাই না।

অন্যবারের মতো এবারও অনেকেই জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে। আমিও অনেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। আমি আমার জীবনসঙ্গিনীর সাথে ভালোবাসার জাল বুনে লতার মতো একে অপরের সুখে-দুঃখে জড়িয়ে আছি। আমরা বলতে গেলে সেই শাড়ি-লুঙ্গির মতো প্রতিদিনের সাথী, সারাক্ষণের বন্ধু।

আজ হঠাৎ এক বন্ধুর এক যুগ পর একটি মেসেজ পেয়ে এত আপ্লুত হয়েছি দেখে আমার স্ত্রী মারিয়া কিছু কথা বললেন। বললেন, ‘মজার ব্যাপার, আমি তোমার প্রতিদিনের সঙ্গিনী। কিন্তু কই, আমি যখন টেক্সট করি কাজ থেকে, অমন করে আপ্লুত হতে দেখিনি তো?’ কথাটি শোনার পর বেশ লেগেছে মনে, তাই মনে পড়ে গেল ‘অলির কথা শুনে বকুল হাসে, কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো। ধরার ধুলিতে যে ফাগুন আসে, কই তাহার মতো তুমি আমার কাছে কভু আসো না তো।’ গানটি বহু বার গেয়েছি, কখনো ভাবিনি মারিয়া গানটি তার হৃদয়ে এমনভাবে ধরে রাখবে!

তাহলে কি জীবনটা সত্যিই এমন যে, অনেক ভালোবাসার কাছের মানুষটিকে আমরা হয়তো ভুলে যাই। ভুলে যাই সম্ভবত এই কারণে যে, সে সারাক্ষণই সাথে থাকে। এই কাছের মানুষটাকে ভুলে যাওয়া নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা অনেক লেখালেখিও করেছেন। ওই সব কথা আরেক দিন লিখব। কিন্তু আজ যেটুকু বলতে চাই তা হলো: এই কাছের মানুষটিকেও আদর-সোহাগ করা দরকার, মনে রাখা দরকার। হৃদয় দিয়ে, আবেগ দিয়ে তাকে উপলব্ধি করানো দরকার – আমি তাকে ভালোবাসি, হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি।

এবারের স্বৈরশাসনের বিদায়ের পর, এবারের অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের সময়কালেও যেন আমাদের হৃদয়ে ভালোবাসার প্রগাঢ় অনুভূতি বয়ে চলে, মত-দ্বিমতের কারণে যেন আমরা একে অপরকে হারিয়ে না ফেলি। যে অনুভূতি যুগ যুগ ধরে আমাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে, দুর্নীতি বা অনীতির কারণে তা যেন নষ্ট না হয়ে যায়। আমরা যেন ‘এগ্রী টু ডিজএগ্রী’ (agree to disagree) ধারণাকে মেনে নিতে শিখি এবং তা থেকে শক্তি অর্জন করি। মতভেদের মধ্যেও আমাদের পরস্পরের বন্ধুত্ব যেন কেবল ভালোবাসার মধ্য দিয়েই সঞ্চিত থাকে। সবসময় মনে প্রাণে বরণ করি সেই পথ, যেখানে প্রিয়জনের পথচলা রয়েছে – ‘চালাও সে পথে, যে পথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি!’

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

এমআরএম/জেআইএম