ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

তোমাকে আর পাবো না

রহমান মৃধা | প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ০১ জানুয়ারি ২০২৪

সুইডিশ ভাষায় ‘ফেস্ট‘ শব্দের ইংরেজি অর্থ ‘পার্টি’, বাংলা ভাষায় পার্টি শব্দটি বেশ পরিচিত। ইউরোপের পার্টি, বিশেষ করে সুইডিশ পার্টির ওপর কিছু তথ্য আজ তুলে ধরবো। জানুয়ারি মাস বছরের প্রথম মাস। সব কিছুতে বেশ নতুনত্বের ভাব যার কারণে মাসটি পার হয়ে যায় স্বল্প সময়ের মধ্যে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ঠিক পার্টি নয় তবে সুইডেনে ‘স্পোর্টলোভ’ বা শীতকালীন ছুটি পালিত হয় এক সপ্তাহ ধরে।

এ সময় স্কুল এক সপ্তাহের জন্য ছুটি থাকে। ছোট বড় সবাই তুষারে স্কী থেকে শুরু করে স্কেটিংয়ে সময় কাটায়। নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটিসের মধ্যে দিয়ে সময়টি বেশির ভাগ সুইডিশরা পার করে এবং অ্যাক্টিভিটিসগুলো বলতে গেলে পার্টির মধ্যে পড়ে। যেমন একসঙ্গে স্কি করা, সাওনাতে গরম এবং ঠান্ডা পরিবেশে গোসল করা, তুষারের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, এক সঙ্গে ডিনার করা, সব কিছুই ছোট বড় সবার জন্য ছুটির একটি আনন্দময় বিশেষ সময়।

মার্চ মাসে অকেশনালি তেমন কিছু ঘটে না। তবে এপ্রিলে যিশুখ্রিস্টের বেঁচে ওঠা তথা পুনরুত্থানের অলৌকিক ঘটনাটিকে স্মরণ করার জন্য পালিত হয় ইস্টার হলিউডে। এটি খ্রিস্টীয় বর্ষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এটি পুরাতন জীবন অবসানের পরে নতুন জীবন শুরুর প্রতীক।

এ সময় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকে। ছুটিতে অনেকেই সুইডেন বা ইউরোপের বাইরে গরমের দেশে সময় কাটাতে পছন্দ করে। এপ্রিলের শেষের দিন বা মে মাসের প্রথম দিনে ‘Valborgsmässoafton’ শীতের বিদায় দিতে জঙ্গলের কাঠ জমা করে আগুন জ্বালিয়ে ‘majbrasa’ গরমকে বরণ করে, সঙ্গে নাচগান ও হৈহুল্লোড়ের মধ্যে সুইডিশ জাতি দিনটিকে উদযাপন করে থাকে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়ই নানা ধরনের অনুষ্ঠান বা পার্টি হয়ে থাকে। আবার ডর্মিটরির ফেস্ট বা ডরমিটরি পার্টি বেশ মজাদার সময় শিক্ষার্থীদের জন্য। জুনমাসে সুইডেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্টি হলো মিডসামার পার্টি। এ সময় সুইডিশরা বিশ্বের যেখানেই থাকুক না কেন বাড়িতে আসবেই। সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তি এবং নাচগানের সঙ্গে ভালো খাবার, প্রচুর ড্রিঙ্ক করা, কিছুটা ব্যতিক্রম ট্রেডিশন বললে ভুল হবে না।

সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে এরা ‘হোস্ট পার্টি’ বা ‘অক্টোবর পার্টি’ পালন করে। জার্মানিতে প্রতি সপ্তাহে এ সময় বিশাল পার্টি হয়ে থাকে যা দেখতে এবং এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা দেশের লোকের ভিড় দেখা যায়।

সুইডেনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজকীয় পার্টি ডিসেম্বরের দশ তারিখ, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকী। যদিও মৃত্যুবার্ষিকী, তবে দিনটি পালিত হয় আনন্দ ফুর্তির মধ্য দিয়ে। কারণ এ দিনে সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সফল এবং অনন্যসাধারণ গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডিসেম্বর মাসেই খ্রিষ্টানদের বড়দিন উদযাপিত হয়। সুইডেনে ‘বড়দিন পালনের’ সময়টিও বেশ আনন্দের।

বড় দিন পালন শেষ হতেই শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করার প্রস্তুতিপর্ব। নববর্ষ উদযাপন বা দিনটিকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরের নতুন দিনটিকে বরণ করার জন্য কতকিছুই না ঘটে। দিনের শেষে বরফের দেশে ঘরে বাইরে সবখানেই প্রতীক্ষা, অপেক্ষা, চাওয়া, পাওয়া, দেওয়া নেওয়ার পালা। কখন ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা বাজবে, কখন ঘণ্টা বাজবে আর কখন শ্যাম্পেনের বোতল খুলে নববর্ষ দিবসে চিয়ার্স বলতে হবে, সেই প্রতীক্ষায় আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা।

হঠাৎ যখন সেই সময়টি এসে হাজির হবে ঠিক তখনই ডিস্কটেকে বিখ্যাত আব্বার গান বেজে উঠতেই বন্ধু তার বান্ধবী, প্রিয় তার প্রিয়ার, স্বামী তার স্ত্রীর গা জড়িয়ে ধরে গাইতে শুরু করবে— ‘No more champagne / Here we are, me and you / Feeling lost and feeling blue / It's the end of the party / And the morning seems so grey / So unlike yesterday / Now's the time for us to say — Happy New Year’.

এভাবেই বিদায় হবে ২০২৩, তোমাকে আর পাবো না, তোমার সঙ্গে যাবো না। কী দিলে বা না দিলে সে বিষয়ে ভাববো না। রাত কখন শেষ হয়ে সকাল হয় সে খেয়াল আর থাকে না। কখন, কে, কোথায় এবং কীভাবে ঘুমিয়ে আছে তাকি জানার দরকার আছে? পহেলা জানুয়ারি সুইডেনে ছুটির দিন। দোসরা জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে হবে।

কী প্রত্যাশা হ্যালো ২০২৪ সাল, তোমার থেকে?

পুরনো সেই ২০২৩ সালকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে নতুন বছর নতুন প্রত্যাশায়। আমরা যূথবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ফোরামের বন্ধুরা নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দেব শুভ ও মুক্ত চিন্তায়, নতুন বছরের প্রত্যাশায়। একটি শান্তি ও স্বস্তিপূর্ণ সময়, একটি দুর্নীতি ও অনীতিমুক্ত সমাজ, একটি সুস্থ ও অভাবমুক্ত জীবনের এক নতুন পথচলা হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা, সেই সাথে স্বাগত নতুন ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালোবাসা জানাচ্ছি।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। [email protected]

এমআরএম/জেআইএম