ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মানুষের দাম কত!

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২৩

অমিয় দাশ, যুক্তরাষ্ট্র

সেদিন অংশুর হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেলো তার এক বন্ধুর সঙ্গে। ওর মেয়ে বন্ধু। বান্ধবী বললে লোকজন মনে করে মেয়েটি বোধহয় অংশুর প্রেমিকা। আবার বন্ধু বললে কেমন যেন আক্ষরিক হয় না। অংশু ও মেয়েটির ছেলে বন্ধু। ক্বচিৎ কিঞ্চিৎ দেখা হয় ওদের। ওদের বয়সের পার্থক্য বছর তিনেকের।

মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের হিসেবে অংশু তিন বছরের বড় মেয়েটির থেকে। অংশুর সাতাশ, আর ওর মেয়ে বন্ধু চব্বিশের কোঠায়। ওর নাম বাঁধন। বাঁধনের সঙ্গে অংশুর প্রথম দেখা হয় এক আড্ডাতে। ওর বোন অংশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিওর ছাত্রী ছিল। যদিও ওর বোনটি অংশুর থেকে এক বছরের ছোট, তবুও মাঝে মাঝে দেখা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে।

বাঁধন সব সময় ওর বোনের সঙ্গে লেপ্টে থাকে। বোন আছে মানে সঙ্গে বাঁধনও আছে। বাঁধন অন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছে। তবুও সবাই ওকে অংশুদের একজন হিসেবেই জানে। মেয়েটি সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য, চারুকলা এসব কোনো কিছুতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে না, তবে ও একজন ভালো শ্রোতা ও দর্শক।

খুব হাসে মেয়েটা, যেন জীবনের কোনো দুঃখ, সীমাবদ্ধতা ওকে স্পর্শ করেনি, করতে পারে না। কারণে অকারণে হাসে। হাসলে ওর চকচকে দাঁতগুলো যেন হাসিটাকে আরও সমৃদ্ধ করে, ওর হাসির সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দেয়। অদ্ভুত শোনালেও এটি সত্য যে, হাসি আরও হাসি আনে, সুখ আরও সুখ আনে। মানুষের হাঁসি একটি সংক্রামক বিষয়। হাসি একইভাবে চারপাশে সংক্রামিত করে আরও হাসি নিয়ে আসে।

কেউ যদি আপন আনন্দে হাসে, আশপাশে থাকা গোমড়ামুখরেরও মনের গভীরে হাসিহাসি ভাব হয়। যখন আশপাশের সবাই আড্ডা মেরে হাসাহাসি করে, বাঁধন সবার সঙ্গে এক ধাপ এগিয়ে আরও জোরে হেসে কুটিকুটি। এমন একটা ব্যাপার যে রসাত্মক কথাটা যেন ওর উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে!

যারা অনেক হাসতে পারে তারা অনেক তাড়াতাড়ি বন্ধু হতে পারে। বাঁধনও এভাবেই অংশুর একজন মেয়ে বন্ধু হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে খেয়াল করেছে যে অন্যান্যরা একটু আড়চোখে তাকায় ওদের এই বন্ধুত্বটাকে। ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব হতে পারে এ যুগেও অনেকের সেটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। আরও কষ্ট হয় যদি কি না বাঁধনের মতো প্রাঞ্জল সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে একটা ছেলের বন্ধুত্বের বিষয় আসে। বাঁধন ডাকসাইটে সুন্দর না হলেও বাঙালি নারীর সৌন্দর্য্য বলতে আমরা যা বই পুস্তকে পড়ি তার সবটাই তার আছে।

ওর ভ্রু জোড়া স্রষ্টা দারুণভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন। ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনার যেভাবে প্রতিটি ফুলগাছ কিংবা বাগানের গাছপালা যত্নের সঙ্গে ছাঁটাই করে শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির মতো করে রাখে, প্রকৃতি সেভাবেই ওর ভ্রু জোড়ার একটা একটা চুলকে ঠিক ঠিকস্থান মতো লাগিয়েছেন। চোখ দুটি ফোলা ফোলা। দেখলে মনে হয় এইমাত্র দুপুরের দিবা নিদ্রা শেষ করে উঠে এলো।

সামনের ওপরের পাটির দাঁতগুলো সামান্য উঁচু। দাঁত সামান্য উঁচু হওয়াতে ওর ঠোট দুটো অল্প ফাঁকা থাকে, হাঁসি হাঁসি অধিকাংশ সময়। মডেলরা যেভাবে ইচ্ছা করে ক্যাটওয়াকে ঠোট খুলে হাঁটে, সে রকম। বাঁধন জানে ওর চোখ দুটো সুন্দর। তাই কাজল কিংবা চোখের কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করে না।

অংশু একদিন কৌতূহলবশত ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এই বাঁধন- তুমি চোখের কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করো না কেন?’
‘কেন চোখের প্রসাধনী ব্যবহার করলে কি হতো?’
‘অনেকেই ব্যবহার করে, তাই বললাম’।

বলেই অংশু একটু অপ্রস্তুত হয়ে বিষয়টাকে হাল্কা করার চেষ্টা করলো। চোখের প্রসাধনী ব্যবহার করলে হয়তো আরও সুন্দর দেখাতো এটা বলার সাহস হলো না।
‘আমার চোখ এমনিতেই সুন্দর’!
‘আড়চোখে তাকিয়ে বাঁধন বলেছিল, ‘আপনার চোখে আইশ্যাডো লাগালে যদি আরও সুন্দর দেখায়, তাহলে আপনি কি আইশ্যাডো লাগাবেন? দ্যাখেন, ছেলেদের চোখেরও অনেক সৌন্দর্য আছে’।
‘তাই নাকি? জানতাম না তো!’

বলেই বাঁধনের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার উৎসুকের মতো জিজ্ঞেস করল, ‘ছেলেদের চোখের সৌন্দর্যের বিষয় নিয়ে তেমন কিছু শুনি না, তুমি কি ছেলেদের চোখের এই বিষয়টা কোথাও শুনেছো বা পড়েছো?’

জিজ্ঞেস করেই হা করে বাঁধনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো উত্তরের অপেক্ষায়।

‘অবশ্যই শুনেছি, পড়েছি এবং দেখেছি। এই ধরুন, নায়কের মতো চোখ, ভিলেনের মতো চোখ, মিথ্যাবাদীর মতো চোখ, মাতালের মতো চোখ, টেরা চোখ, ইত্যাদি। তারপরে বোকা বোকা চোখও আছে, যেমন এই মুহূর্তে আপনার চোখ সে রকম মনে হচ্ছে!’

বলেই মিটমিট করে হাসলো। অংশু গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। এই কয়েক সেকেন্ড পরে বিষয়টা আঁচ করতে পারলো যে তাকে নিয়ে বলা হয়েছে। আর বুঝেই হা হা করে শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসির তোড়ে চেয়ার কেপে মেঝের টাইলের ওপরে কুছ্ কাচ্ শব্দও হলো। আশপাশে তাকিয়ে অংশু দেখলো বসা দাঁড়ানো অনেক মানুষের চোখগুলো ওর ওপরে। সবার দৃষ্টি কেন ওর উপরে তা বুঝতে একটু সময় লাগলো ওর।

চলবে…

লেখক: অমিয় দাশ, ফার্মাসিস্ট, ওষুধ প্রস্তুতকারক।
বোকা রেতন, যুক্তরাষ্ট্র
[email protected]

এমআরএম/এএসএম