ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

চলন্তিকা

শায়লা জাবীন | প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সবাই চুপচাপ খাচ্ছে,

শাহেদ বললো কিরে নাহিদ, তোর ফ্রান্স ট্যুর কেমন হলো? আইফেল টাওয়ারে যে উঠলি, ছবি তো দিলি না ফেবুতে, অন্তত ইনবক্সে পাঠাইতি, দেখতাম...

হ, ঠিকি কইছস, আমগোরেও দেখায় নাই, কে আছিলো লগে, কেডা জানে! কামাল বললো...

: কেউ ছিল না, খালি খালি সেলফি আর কি দিমু টাওয়ারে উইঠা... তাই দেই নাই ছবি, কেউ থাকলে ঠিকি ছবি দিতাম বা কইতাম ভালো কইরা ছবি তুলে দিতে, তয় ভালো করে দেইখা আসছি, যদ্দুর চোখ যায়, চারপাশ দেখে মনে হইছিল নাইমা একদিকে হাঁটা দেই, আর ফিরবো না কোনো জনপদে, মিশে যাই কোনো অজানাতে...অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাহিদ বললো অফিসের কাজে স্পেন পাঠাইছিলো, কাজ শেষে ট্রেনে কইরা ফ্রান্স গেছিলাম, একদিনে যদ্দুর ঘোরাঘুরি করা যায় ঘুইরা আয়া পড়ছি।

ওহ..., তা কোনদিকে হাঁটা দিয়েছিলি? ভাড়া করতি কাউরে... প্রেমের শহর প্যারিস! জাফর বললো...

: জাদুঘরের দিকে, মোনালিসারে না দেইখা আসি কেমনে, চাইলেই কি আর সব ইচ্ছে পূরণ হয়?

আমি তো প্যারিস গিয়ে ৭৭টা ছবি তুলছিলাম টাওয়ারে শুধু, আজকে আমি খাওয়াই তোদের সবাইকে, শাহেদ বললো...

কামাল বললো নাহ, তু্ই আরেক দিন খাওয়া, তয় সেইদিন কবে আজকেই ঠিক কর, খাওয়া মিস করতে আমি রাজি না, সানোয়ার আগেই কইছে আইজ ও খাওয়াইবো

: আচ্ছা তোরা বল কবে? সানোয়ার কয়দিন আছিস?

: আমি রাজশাহী থেকে ঘুরে আসি আগে, তারপর, আচ্ছা তোর বলে অনেক গার্লফ্রেন্ড...,ঘটনা সত্য নাকি রে?

আরও পড়ুন: এগুলোকে কি নারীর স্বাধীনতা বলে

শাহেদ হেসে বললো কি করবো পিছে লেগে থাকলে? এগুলো আগে ছিলো না, যেই না টাকা পয়সা বাড়ছে, সেই থেকে এই মাইয়াদের হাই, হ্যালো বাড়ছে...

তোর সঙ্গে একমত হইলাম না, জাফর বললো...
টাকা কি আমাদের নাই? শোন, সুন্দরী মেয়ে এবং টাকাওয়ালা ছেলেদের আশপাশে সবসময়ে মাছি ভনভন করে, আর সেই সুন্দরী মেয়ে যদি ধনী হয় অথবা সেই টাকাওয়ালা পোলা যদি সুন্দর হয় তাহলে তো কথাই নাই, মাছি আর মাছি কিন্তু তাদের সবার এত বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ড থাকে না, তারা আশপাশের মাছি তাড়াইতে জানে নিজেদের ব্যক্তিত্ব দিয়ে। তোর নিজেরও ইচ্ছে আছে তাই মাছিরাও এসে বসে, ইচ্ছে না থাকলে আসতো না।

: তাতো আছেই, বউ আছে জেনেও যদি এত মেয়ে পিছে ঘোরে তখন তো ইচ্ছে করবেই, আমার কি এদের খোঁজার সময় আছে? জানিস তো কেমন ব্যস্ত থাকি...

তোর সময় নাই তবে আমার আছে, আমি দেখছি সবাই সাড়া দেয় না, জাফরের সঙ্গে আমিও একমত, নিজের ইচ্ছের ওপরে সবকিছু, নাহিদ বললো...

: তোর বউ জানে?

কিছু কিছু তো কানে যায়, জেনেই বা কি করবে? কয়দিন কান্নাকাটি, ঝগড়া ঝাটি, বিছানা আলাদা এরপর যেই লাউ সেই কদু! পোলাপান হয়ে গেছে, এত আরাম আয়েশ, টাকা পয়সা, বাড়ি, গাড়ি রেখে মাঝ বয়সে কই যাবে?

কিন্তু তোর নিজের কাছে মনে হয় না চিট করতেছিস জীবনসঙ্গীর সঙ্গে? তু্ই মেনে নিতে পারবি তোর বউ এর নামের সঙ্গে জড়িয়ে অন্য কারো নামে এমন কিছু শুনলে? জাফর বললো...

আরও পড়ুন: চলন্তিকা

: জানি না, এত কিছু তো ইদানিং ভাবার টাইম পাই না, টাকা কামাই করতে করতে মন নষ্ট হয়ে গেছে, মাঝে মধ্যে আনন্দ ফুর্তি হিসেবে এইসব নিয়ে থাকি, কিন্তু এইটা সত্য বউ এমন কিছু করলে মানতে পারবো না, সাধু সাইজা লাভ নাই। আমার বাচ্চাদের ‘মা’ সে...কেমনে মানি?

তাইলে বুঝছোস তোর বৌয়ের কেমন লাগে? বাচ্চার দোহাই দিয়া মাইয়াগো যে এই সমাজ আর কত কোনঠাসা করবো! এরা সমাজ আর বাচ্চার কথা চিন্তা করে নিজের ঘরেই কাঁটামুরগীর মতো ছটফট করে, দিনের পর দিন চোখের পানি ফেলে, এদের মা বাপও সমাজের কথার ভয়ে সংসার ভাঙতে দেয় না। এরপর আর কয়টা মেয়ের সাহস থাকে প্রতিবাদ করার? করেই বা যাবে কই? সমাজ তো পুরোটাই পুরুষদের পক্ষে, জাফর বললো

হ, ঠিক কইছস, আর এই আমরাই আবার রাজনীতিতে গণতন্ত্র নাই, অর্থনীতিতে ভারসাম্য নাই, ব্যবসায় সততা নাই কইয়া গলা চড়াই, টেবিল চাপড়াই...!! গণতন্ত্র, ভারসাম্য, সততা তো আমগো পারিবারিক জীবনেই নাই, প্রত্যেকটা পরিবার নিয়াই তো সমাজ, আর সমাজের সমষ্টি একটা রাষ্ট্র, এরপর না অর্থনীতি, গণতন্ত্র। আমি ঢাকাইয়া পোলা, সোজা হিসাব বুঝি, তু্ই যা করবি তাই তোর জীবনে আইয়া পড়বো আইজ কিংবা কাইল। ছোটবেলা থাইকা শুইনা আইছি সাচ্চা মুসলিম হইলে নামাজ ছাড়া যাইবো না, মিছা কতা কওয়ন যাইবো না, মাইসের দিলে চোট দেওন যাইবো না, কারো লগে বেইমানি বা জুলুম করা যাইবো না, আয় রোজগার হালাল থাকা লাগবো। সবডি মাইনা চলার চেষ্টা করি, পারি কিনা জানি না তয় জীবনে ঠেকি নাই এহোনো, অশান্তিতেও নাই, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ, কামাল বললো

তু্ই তো নিজেরে মুসলিম দাবি করছ শাহেদ, তাই না? জন্মসূত্রে মুসলমান পরিবারের জন্মালেই কি মুসলিম হওয়া যায়? নিজেই নিজেরে জিগা? খালি নামটাই মুসলমানের, তোর কি মনে হয় না তু্ই অন্য মুসলমানদের ছোট করতাছোস? সমাজটারে এমুন বানাইলো কে? তোগো মতো পোলা মাইয়ারা। আমাগো বাপ মায়ের আমল কি এমুন আছিলো?

সবাই চুপচাপ...

সানোয়ার গলাখাকারি দিয়ে বললো, শাহেদ বন্ধু শোন, দুনিয়ায় চলতে ফিরতে নানাপদের মানুষ পাবি, তু্ই তাদের মাঝ থেকেই বেছে নিবি কে তোর বন্ধু হবে, যেমন আমি তোকে বা তু্ই আমাকে বন্ধু ভাবিস, আমি মনে করি আমার কোন বন্ধু বিপথে গেলে তাকে সাবধান করা আমার নৈতিক দায়িত্ব, আমরা ছেলেরা কখনোই বউ বা প্রেমিকার কষ্ট বুঝি না কিন্তু নিজের মেয়েরটা কিন্তু বুঝি, যেহেতু নিজের সন্তান। সমাজ যেদিকে যাচ্ছে তাতে করে তোদের মতো বয়ফ্রেন্ড বা স্বামী যদি নিজের মেয়ের ভাগ্যে জোটে তখন তোর মেয়ের কেমন কষ্ট হবে একবার ভেবে দেখিস এবং বাবা হিসেবে এই কষ্ট তু্ই নিতে পারবি কিনা সেটাও ভাবিস। এটা শুনে হয়তো ভাবতে বসবি যে মেয়েকে শক্ত মানসিকতার করে বড় করবি যেন সকল ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করতে পারে। সমাজ না বদলালে কোনো লাভ নেই, এই সমাজ খুব সহজেই মেয়েদের ঘাড়ে দোষ ঢালতে এবং তা বিশ্বাস করতে পছন্দ করে আর মানসিকভাবে শক্তিশালী মেয়েদের থেকে সবাই দশহাত দূরে থাকে।

আরও পড়ুন: চলন্তিকা

আমি তোদের চেয়ে বেশি খোলামেলা কালচারে অভ্যস্ত গেলো বারো বছর, যেখানে নানা ধর্মের, নানা বর্ণের, নানা চিন্তার মানুষ বাস করে। সেখানে কে কি করছে তার নিজের পরিবার ছাড়া বাইরের কারো জানার কোন উপায় নাই, কিন্তু সত্য বলছি সেখানেও নৈতিকতার এমন বিপর্যয় নাই। ওখানে মানুষ মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে, ছেলে মেয়ে যাই হোক, এমন সামাজিক বিশৃঙ্খলা নাই, দুই-চারটা অনিয়ম কানে আসে, কিন্তু প্রকট আকারে না, সবার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নাই। সংসার অসহনীয় হলে বা পারস্পরিক বোঝাপোড়া না থাকলে সম্পর্কের ইতি টেনে নিজেকে সময় দিয়ে নতুন কিছু ভাবা দোষের না তবে এক সম্পর্কে থেকে অনেক নৌকায় একসাথে পা দেওয়ার পরিণাম মোটেই ভালো হয় না। রিলেশনে লয়াল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিজের মনের শান্তির জন্য নয়তো দিনশেষে তু্ই স্বস্তি পাবি না যত টাকাই থাক তোর, যা বললাম ভেবে দেখিস প্লিজ, আমার উঠতে হবে, কাল ভোরে রাজশাহী যাবো, ঢাকায় ফিরে আসলে জানাবো। আমরা অবশ্যই আরেকদিন বসবো, রাশেদ, জুবায়ের ফ্রি থাকলে আসতে বলিস,আজকে উঠি।

কিছুই মনে করি নাই দোস্ত, আসলে আস্তে ধীরে এমন হয়ে গেছি, সবাই শুধু টাকা চায়, টাকার দরকারে আমার কাছে আসে, একটা সময় মনে হলো আমি টাকা বানানোর মেশিন হয়ে গেছি, আমি যে একটা মানুষ, শখ আহ্লাদ দুঃখ বেদনা আছে, সেগুলো কাউকেই বলতে পারি না। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে এমন। বউ, বাচ্চা নৈতিকতা এসব নিয়েও এত ভাবিনি আর হ্যাঁ, আমি তো একা না, আমার মতো অনেকেই আশপাশে তাই কিছুটা প্রভাবও আছে।

হ কথা ঠিক, নাহিদ বললো...
আমরা একটা বদ্ধ স্রোতহীন জলাশয়ে আটকে গেছি, বদ্ধ পানি দেখতে দেখতে সমুদ্রের ঢেউ ভুলে গেছি, একটা বড় সুনামি এসে যে নিমেষেই আমাদের ডুবিয়ে দিতে পারে এটা মাথায় নাই, সপ্তাহ দুইপর আর একদিন বসি সবাই, কি বলিস?

জাফর বললো, হ্যাঁ সেটাই ভালো, সানোয়ার ঘুরে আসুক, দোস্ত তোর আব্বা আম্মাকে সালাম দিস

সানোয়ার বিল দিয়ে সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বেরিয়ে গেলো।

আরও পড়ুন: লাল দোপাট্টা

ফাহমি পড়ন্ত বিকেলে ফিরলো বাসায় KFC নিয়ে...

Mum, Bangladeshi KFC তে fried rice দেয়! Strange
ঈশান KFC খেতে খেতে বললো...

ফাহমি বললো হ্যাঁ দেয়, এদেশের প্রধান খাবার ভাত, তাই মিল সেট করার সময় এসব লক্ষ্য রাখে তবে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও তো এনেছি, আম্মা দেখোতো বড় প্যাকেট টার ভেতর আর তুমিও খাও, ঠান্ডা হয়ে গেলে একটুও ভালো লাগে না KFC, সবার জন্যই তো এনেছি, আমি আব্বা কে ডেকে আনছি...বলে ফাহমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো

: এগুলো আনতে গেলি কেন, এগুলো তো তোরা ওখানে খাসই, বাসায় কত কিছু রান্না করছি তোদের জন্য...

: আমরা খাই, কিন্তু তোমরা খাওনা তাই, আর যা রান্না করছো সেগুলো রাতে খাবো ইনশাআল্লাহ, সানু আসুক

ঈপ্সিতা খেতে খেতে বললো Mum, you know your son is in serious trouble, listen from him...

ঈশান চোখ কটমট করে ঈপ্সিতার দিকে তাকালো

ঈপ্সিতা হেসে দিলো, oh Mum, Salman chachau will go with us tomorrow, he called today.

ফাহমি ঈশানের দিকে তাকালো, কী হয়েছে ঈশান?

Nothing Mum, No worries

চলবে...

এমআরএম/এমএস