‘প্রবাসী ছেলের মরা মুখটাও দেখা হলো না’
‘বাংলাদেশ হাইকমিশনে জানানোর পরও কোনো ধরনের সহায়তা পাইনি। আমার ছেলের পাসপোর্ট ভিসা থাকার পরও কেন বেওয়ারিশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় দাফন করা হলো। মা হয়ে ছেলের মরা মুখটাও দেখা হলো না।’
মালয়শিয়ান প্রবাসী শাওনের মা শিরিন বেগম, ছেলে হারানোর কষ্টে এভাবেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, শাওনের বয়স ৩০ বছর এবং চার ভাইয়ের মধ্যে শাওন সবার ছোট ছিল।’
সম্প্রতি শাওনকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় মালয়েশিয়ায়। অথচ তার বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল। কেন বেওয়ারিশ হিসেবে শাওনের মরদেহ দাফন করা হলো এমন প্রশ্ন প্রবাসীদেরও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী জানান, শাওনের মরদেহ দাফনের আগেই মিশনের কল্যাণ সহকারী মুকসেদ আলীর হোয়াটসঅ্যাপে শাওনের সব তথ্য পাঠানো হয়েছিল।
বুধবার সকালে হাইকমিশন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শাওনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে মিশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শাওনের বড় ভাই মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পরিচয় থাকার পরও দেশে না পাঠিয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে তাকে দাফন করা হলো, এটার সঠিক বিচার চাই।’
তিন মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ মার্চ মৃত্যু হয় শাওনের। ১৫ এপ্রিল বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয় তার মরদেহ।
এদিকে, ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে আহত হওয়ায় এর দায় নেয়নি শাওনের কোম্পানির মালিকও।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে ৮১ হাজার ৭৪৩ রিঙ্গিত বিলের মধ্যে ২২ হাজার ইন্স্যুরেন্স এবং প্রবাসীদের সহযোগিতায় ৯ হাজার রিঙ্গিতসহ মোট ৩১ হাজার রিঙ্গিত হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা হয়।
‘মালয়েশিয়ার হাসপাতালে কোনো বিদেশি নাগরিকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে বকেয়া বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত মরদেহ হস্তান্তর করা হয় না। হাসপাতালের বকেয়া বিল এবং পরিচয় থাকা সত্ত্বেও কেন শাওনের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হলো এমন প্রশ্ন সচেতন প্রবাসীদের।’
শাওন মালয়েশিয়া বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং মালয়েশিয়া জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা, জাসাসের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর নিজ দলের নেতাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি শাওন। শীর্ষ নেতারা শাওনের বিষয়ে একে অন্যকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন।
শাওনের বিষয়টি নিয়ে কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন দলের এক সক্রিয় কর্মী।
কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির গৌরীপুরের হাটচান্দিনা গ্রামের মোহাম্মদ আবু তাহেরের ছেলে মোহাম্মদ শাওন। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় কাজের জন্য যান। গত বছরের ২৭ আগস্ট নিজ কর্মস্থল রেখে স্থানীয় এক চীনা নাগরিকের ডাকে কাজ করতে গিয়ে পাঁচ তলা ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই মারা যান শাওন।
এমআরএম/জেআইএম