ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে বাংলাদেশিদের ভাগ্যের চাকা

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৪৮ এএম, ২১ আগস্ট ২০২২

গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টে ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধ পথে অ্যানালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে নেই কোনো পাসপোর্ট। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছে না তারা। এমন সমস্যা প্রতিকারের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন।

গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে সিংহভাগই অনিয়মিত। নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। এমনকি অনেক প্রবাসীই আছেন যাদের ইউরোপে বৈধতা তো দূরের কথা তাদের কাছে নেই নিজ দেশের পাসপোর্টও। কারণ ৮ থেকে ১০ বছর আগে বিভিন্ন অবৈধপথে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন এমন বহু বাংলাদেশি রয়েছেন।

এদিকে নানা জল্পনা-কল্পনার পর বাংলাদেশ ও প্রাচীন সভ্যতার দেশ গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরে চার হাজার করে কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় নেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীদেরও বৈধতা দেওয়া হবে। অনিয়মিত বাংলাদেশিদের নিয়মিতকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এথেন্স আরেকটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়মিত হওয়ার জন্য দুই বছরের বেশি মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট, দূতাবাস থেকে পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি লাগবে। কিন্তু যাদের পাসপোর্ট নেই তারা এখন মহাবিপদে পড়েছেন। এ নিয়ে অনেকেই হতাশায় ভুগছেন।

এদেরই একজন গ্রিস প্রবাসী সিলেটের বাসিন্দা অজুদ মিয়া জানান, প্রায় ১০ বছর আগে ইরান-তুরস্ক হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেন। তখন বাংলাদেশে অ্যানালগ পাসপোর্টের যুগ ছিল। সেই হাতের লেখা পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান। তিনি গ্রিসে প্রবেশের সময় দালালের নির্দেশে সীমান্তে অ্যানালগ পাসপোর্টটিও ফেলে দেন। শূন্য অবস্থায় প্রবেশ করেন গ্রিসে। দেশ থেকে ধার-দেনা করে আসেন বিদেশে। সেগুলো পরিশোধ করার চাপও আছে। তাই তিনি গ্রিসে গিয়েই চলে যান কৃষি কাজে নেওয়া মানলোদা নামক স্থানে।

তিনি বলেন, সেখানে কৃষি কাজ করে কিছু টাকা নিজের খরচের জন্য রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন দেশে। এভাবেই অবৈধ অবস্থায় কেটে যায় কয়েক বছর। এরপর অজুদ মিয়া সেখানে বসবাসের অনুমতি নিতে চান। বৈধভাবে বসবাস করতে চান। কিন্তু তার পাসপোর্ট নেই। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা জানান বাংলাদেশ থেকে নতুন পাসপোর্ট আবেদন গ্রহণের নির্দেশনা আসলে আবেদন নেওয়া হবে। অবশেষে ২০২১ সালে আসে নতুন করে পাসপোর্ট তৈরি করার সুযোগ। তিনিও বারবার চেষ্টা করে দূতাবাসে গিয়ে নির্ধারিত ফি ও দলিলসহ আবেদন করেন।

‘এরপর অপেক্ষার পালা। মাসের পর মাস চলে যাচ্ছে কিন্তু পাসপোর্ট মিলছে না। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা জানান পাসপোর্ট ঢাকায় আটক আছে তাদের কিছু করার নেই। বর্তমানে বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে এ সুযোগ হারানোর আশঙ্কায় আছেন অজুদ মিয়া। তার মতো প্রায় অসংখ্য মানুষ পাসপোর্ট নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন।’

আরেকজন মোহাম্মদ পাভেল। তিনি জানান, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি দূতাবাসে গিয়ে আবেদন জমা করে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে আসেন। তখন তাকে বলা হয়েছিল ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। কিন্তু একে একে প্রায় ৯ মাস কেটে গেলো কিন্তু পাসপোর্টের কোনো হদিস নেই। পাসপোর্টের কারণে তিনি বৈধ হতেও পারছেন না।

তিনি বলেন, আমরা চাই বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে, দেশকে আরও শক্তিশালী করতে কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় তা করতে পারছি না। বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তর আমাদের এ সুযোগ দিচ্ছে না। তারা আমাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ ইউরো ফি সহকারে আবেদন গ্রহণ করে কেন পাসপোর্ট আটকে রেখেছে। তারা কি চায় না আমরা বৈধ হই, আমরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করি।

জরিপে দেখা গেছে, নতুন পাসপোর্টের আবেদন ছাড়াও পাসপোর্টে নিজের নাম, পিতামাতার নাম, বয়স, ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য সংশোধন ও পরিবর্তন ও কেউ কেউ চান আংশিক পরিবর্তন করতে চান। তবে অনেকেই তথ্যাদি আমূল বদলে ফেলতে চান। যেমন ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বয়স পরিবর্তনের আবেদনও করছেন দূতাবাসে। এর কারণ জাতীয় পরিচয়পত্রের তোয়াক্কা না করে কয়েক বছর আগে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন অনেকে।

BD-Embassy-1

যাদের অনেকের এনআইডিতে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার সঙ্গে পাসপোর্টে উল্লেখিত ঠিকানার মিল নেই। দালালরা চুক্তিতে এসব পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার পর যারা এ নিয়ে বিদেশে গেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। ওইসব পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়নের আবেদন করলে এনআইডির সঙ্গে তথ্যে গড়মিল থাকায় নতুন পাসপোর্ট হচ্ছে না। এমন নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে আছে অনেক প্রবাসীর ভাগ্যের চাকা।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসী সাংবাদিক ইউরো বাংলা প্রেস ক্লাব গ্রিসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মুন্না বলেন, গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অনেক প্রবাসীর ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্সযোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধপথে অ্যানালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে এসেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে নেই কোনো পাসপোর্ট। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছে না তারা।

‘বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্ট নতুন করে করার কার্যক্রম গ্রিসে বন্ধ রয়েছে। এমনকি যারা এর আগে আবেদন করেছে তাদের পাসপোর্টও আটকে আছে ঢাকায়। এমন সমস্যা প্রতিকারের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন বাংলাদেশিরা। অনেকেই বিভিন্ন সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন কিন্তু আবেদন গ্রহণ করা হলেও পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না তাদের। এ কারণে অনেক বাংলাদেশি অবৈধ হচ্ছেন ইউরোপের এই দেশে। এমন নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে আছে অনেক প্রবাসীর ভাগ্যের চাকা।’

এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে একটি সমঝোতার ফলের দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েকটি শর্তের মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে নিজের পাসপোর্ট মূল কপি থাকতে হবে এবং এর ২ বছর মেয়াদ থাকতে হবে। কিন্তু যারা ৬ থেকে ১ বছর ধরে দৌড়ঝাঁপ করেও পাসপোর্ট পাচ্ছে না, তাদের কি হবে? তারা কিভাবে পাবে এই বৈধতার সুযোগ? বাংলাদেশ দূতাবাসকে এ ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রবাসীরা।

এ ব্যাপারে গ্রিসে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেন, ঢাকায় যাদের পাসপোর্ট আটকে আছে দ্রুত তাদের পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে সবাই বৈধতার আওতায় আসতে পারবে। এই মর্মে পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাদের পাসপোর্টে বিভিন্ন সমস্যা সংশোধনের আবেদন করা হয়েছে শুধু তাদের এই আবেদনগুলো দেখার জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরে যাতে একজন কর্মকর্তা নিযুক্ত করে দায়িত্ব দেওয়া হয় সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে গ্রিস দূতাবাস থেকে।

এদিকে, গত ১৮ আগস্ট গ্রিসে অনিয়মিতভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে এক ব্রিফিং ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ সময় প্রায় অর্ধশতাধিক পাসপোর্ট সংক্রান্ত সমস্যার ভুক্তভোগী উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং নানা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এমআরএম/এমএস