বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় জাতি হিসেবে মেক্সিকানদের কাছে উপস্থাপন
মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে। দিবসের শুরুতে, জাতীয় সঙ্গীতের মূর্ছনার সঙ্গে রাষ্ট্রদূত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে দূতাবাসে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনার পরে এ দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে, মিগেল হিদালগোর মেয়রের দপ্তরের সহায়তায় ২৬-২৭ মার্চ দূতাবাস মেক্সিকো সিটিস্থ জনবহুল লিংকন পার্কের নেলসন ম্যান্ডেলা কালচারাল স্পেস অ্যান্ড এসপ্ল্যানেডে বর্ণাঢ্য ‘বাংলাদেশ মেলা’-এর আয়োজন করে।
মেয়রের দপ্তরের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সমন্বয়কারী লুর্ডেস পোজো পিয়েত্রা সান্তা ও সমন্বয়ক ওমর লোপেজ হার্নান্দেজ দুই দিনব্যাপী এই ‘বাংলাদেশ মেলা’-এর শুভ উদ্বোধন করেন। মেয়রের দপ্তরের সাংস্কৃতিক সমন্বয়কারী এনেল নচেবুয়েনা ২৭ মার্চ বাংলাদেশ মেলা ও প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে যথাযথভাবে মেক্সিকোর সাধারণ জনগণের কাছে উপস্থাপনের জন্য, দূতাবাস অনুষ্ঠানস্থলে ‘বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন’ স্থাপন করে যেখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, হস্তশিল্প, দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যসহ (সিরামিক, চামড়া, পাট, চা ইত্যাদি) বাণিজ্য সুবিধাদি ও পর্যটন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যাদি ও বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিষয়ক লিফলেট আগতদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
মেলায় বাংলাদেশি বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের প্রায় ১০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনের পাশাপাশি মেহেদি ও মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশি মালিকানাধীন ‘ঢাকা বিরিয়ানি’-এর ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এছাড়া নিউইয়র্ক থেকে আগত দুই-সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশি নৃত্যশিল্পী মাজেদ লোদি ও ফারজানা জাবিন জ্যোতির নৃত্য পরিবেশনায় আগত দর্শনার্থীরা বিমোহিত হন।
বাংলাদেশ উৎসব চলাকালে তিন হাজার দর্শনার্থী মেলার স্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আজারবাইজান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া, এল সালভাদর ও ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত, মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, স্থানীয় সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও আরও অনেকে।
সর্বশেষ ৩১ শে মার্চ স্থানীয় হোটেল শেরাটনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সিনেটর, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মেক্সিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- মেম্বার অব চেম্বার অব ডেপুটিস ও মেক্সিকো-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মিজ রোজালিন্ডা ডমিনগুয়েজ ফ্লোরেস। তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও লিঙ্গ ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করবার আশা ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। সেইসাথে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র আগতদের সামনে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে বাংলাদেশের প্রখ্যাত গায়িকা ফাহমিদা নবীর মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশনা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি চিত্রকর্ম, রপ্তানিযোগ্য পণ্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।
আগতদের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের লোগো সংবলিত উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের মেক্সিকান শেফ দ্বারা প্রস্তুতকৃত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি খাবার পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এমআরএম/এএসএম