ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

একাকিত্ব

আম্বিয়া অন্তরা | প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

একাকিত্ব বোধ করা এক ধরনের রোগ। এ রোগ শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার মধ্যেই বিদ্যমান। একাকিত্ব ভেতর থেকে মানুষকে অকেজো করে দেয়। এ রোগ দীর্ঘমেয়াদি হলে তা মানুষকে আত্মহত্যা অব্দি পৌঁছে দেয়।

নিঃসঙ্গতার ওপরে অনেক গবেষণা হয়েছে। অথচ পৃথিবীর সেরা জীব মানুষ। সে অর্থে মানবজীবন স্রষ্টার পরম উপহারও বটে। ‘জীবন সুন্দর’ এ সমীকরণে সুখ-দুঃখ উভয়ের প্রয়োজন এবং তা অনাবশ্যকও নয়। কবি-সাহিত্যিকরা বলেছেন, ‘জীবন পরিমাপের মানদণ্ডে দুঃখের উপস্থিতি জরুরি কেন না তা জীবনের মূল্য বোঝাতে শেখায়’।

জীবন এক বৈচিত্র্যময় সত্তা। এতে হরেক রকমের বৈচিত্র্য থাকে। এক একটি সত্তা এক এক রকম বৈচিত্র্য মোকাবিলা করে। অবশ্য এক্ষেত্রে অনেকেই জীবনকে বিভিন্ন প্যারামিটারে তুলনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আহমেদ জীবনকে সাগরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। জীবনকে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী। যে যেভাবেই তুলনা করেন না কেন, মৌলিকতা হলো জীবন মানেই বৈচিত্র্যময়।

অথচ আমরা মাঝে মধ্যেই এই চিরন্তন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যকে ভুলে যাই। এমনকি ডিপ্রেশন শব্দটাকে খুব বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলি। ফলে করে ফেলি আত্মহত্যার মতো জঘন্যতম ভুল কিংবা অপরাধ।

এই ভুল পুরো পৃথিবীজুড়ে পালন করা হচ্ছে। আমরা জানি আত্মহত্যার দর্শন উদ্ভূত হয়েছে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর চিন্তা থেকে, যিনি আত্মহত্যার নৈতিকতার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করেছেন।

প্লেটোর মতে, যখন কেউ রাষ্ট্রীয় আইনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হন অথবা দুর্ভাগ্যবশত জীবন ধারণে অপারগ হন অথবা অনিবর্তনীয় অপমানে জর্জরিত হন, তখন আত্মহত্যা করা অনৈতিক নয়। তবে প্লেটো বিশ্বাস করতেন, যদি কেউ নিষ্ক্রিয়তা বা কাপুরুষতার জন্য আত্মহত্যা করেন, তবে সেটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও আত্মহত্যার পক্ষে এখন পর্যন্ত বহু দার্শনিক যুক্তি দেখিয়েছেন পক্ষান্তরে প্রায় সব ধর্মই আত্মহত্যাকে অপরাধ বলে সাব্যস্ত করে।

পৃথিবীতে আত্মহত্যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই মিছিলে সামিল হয়েছেন বহু মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে। এ আত্মহত্যার তালিকায় ওপরের স্থান দখল করে আছে ক্যারিবীয় দেশ গায়না।

২০১২ সালে সেখানকার প্রতি ১ লাখ মানুষের মধ্যে ৪৫.২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এরপরের তালিকায় যথাক্রমে- উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, লিথুনিয়া ইত্যাদি দেশসমূহ। পিছিয়ে নেই ভারতীয় উপমহাদেশ, বিবিসির প্রতিবেদনে ল্যান্সেটের জরিপ বলছে, বিশ্বে প্রতি বছর যত নারী আত্মহনন করেন তার ১০ জনের চার জনই ভারতীয়।

এদিকে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যায় যেসব লোকদের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায় তাদের মধ্যে ২.০৬ বাংলাদেশি। ডিএমপির গত দুই বছরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৯ জনের বেশি আত্মহত্যা করেছেন। একাকিত্ব, পারিবারিক কলহ, আর্থিক অসচ্ছলতাগুলোই আত্মহত্যার মৌলিক কারণ।

এজন্য এখানে পরিবারও সমাজের অনেক কিছুই করণীয় আছে। যেমন নিঃসঙ্গ মানুষকে সঙ্গ দেওয়া। পরিবারের সদস্য কেউ ডিপ্রেশনে থাকলে তাকে উপযুক্ত মানসিক সাপোর্ট দেওয়া। কেউ খুব অভাব অনটনে থাকলে অবশ্যই রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়া কর্তব্য। এভাবেই আমরা একটা সমাজ থেকে আত্নহত্যার হার কমিয়ে নিয়ে আসতে পারি।

সময় কাটানোর জন্য ও অন্যের ভালো করতে চাইলে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করুন। দেখবেন নিঃসঙ্গতা পালিয়ে যাবে। সমাজ, মানুষ ও অবহেলিতদের জন্য কিছু করুন। দেখবেন মনে শান্তি পাবেন ও ভালো থাকবেন। বয়স্ক ব্যক্তিরাই একাকিত্বে বেশি ভোগেন।

বয়সের কাছে হার মেনে যাওয়ার কারণেই তারা নিঃসঙ্গতা বোধ করেন। এ সময় চাইলে পুরোনো কোনো শখ বাস্তবায়ন করতে পারেন। বয়স কোনো বিষয় নয়, তাই হেরে না গিয়ে নিজের যা ভালো লাগে তা-ই করুন। বর্তমানে ছোট-বড় সবাই ডিজিটাল টেকনোলজিতে আসক্ত। যা অনেকের জীবনেই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

যে ব্যক্তি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বা একাই বাস করেন, তিনি ওই ছবি দেখলে তো কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তাই ডিজিটাল টেকনোলজি কম ব্যবহার করুন। কারো যত্ন নেওয়া একাকিত্বের অনুভূতি কমাতে পারে। ঘরে একটি পোষ্য রাখুন। দেখবেন পোষ্যের যত্ন নিতে নিভে সময় কেটে যাবে আপনার।

একটি অর্থপূর্ণ জীবনের জন্য উদ্দেশ্য ঠিক করা জরুরি। আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। যখনই ভাববেন, জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ঠিক তখনই নতুনভাবে জীবন গড়ার বিষয়ে ভাবুন। আপনার একাকিত্ব যদি আত্মহননের পথে নিয়ে যায়, তাহলে দ্রুত থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মনোবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে দেখবেন আপনি আবারও বেঁচে থাকার আনন্দ ফিরে পাবেন।

এমআরএম/এএসএম