নানা আয়োজনে মেক্সিকোতে বিজয় দিবস উদযাপন
মেক্সিকো সিটিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযোগ্য মর্যাদায় ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নানা আয়োজনে মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে।
দিবসটির প্রারম্ভে রাষ্ট্রদূত দূতাবাস প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীতের মূর্ছনার সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রযাত্রা কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পরবর্তীতে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীসমূহ পাঠ করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।
এরপর বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং দূতাবাস কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে একটি উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়, যেখানে আলোচকরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ এবং বাংলাদেশের অগ্রগতির বিভিন্ন ইতিবাচক দিক বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। এসময় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারে আগতদের আপ্যায়ন করা হয়।
রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম তার বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাছাড়া, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহিদসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং দুই লক্ষ বীরাঙ্গণার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে বিদেশের মাটিতে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরতে তিনি উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনুরোধ জানান।
এছাড়াও মেক্সিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ উচ্চ শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাধিত অগ্রগতি সম্পর্কে আগতদের অবহিত করেন। বক্তব্য শেষে তিনি মুজিববর্ষ এবং মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা থেকে নির্দেশিত শপথ বাক্য পাঠ করান এবং সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে দূতাবাসে আয়োজিত সকালের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং বিজয় দিবসের গৌরবময় সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রাষ্ট্রদূত মেক্সিকোর বৃহত্তম এবং স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় উনাম আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে গত ১০ ডিসেম্বর মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন।
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান এবং তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’, বাংলাদেশের অভাবনীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, বিশ্ব-শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক রাউল গারার্দো পারেদেস, সাধারণ সচিব ড. জেসাস ম্যানুয়েল দোরাদর, একাডেমিক সচিব ড. মারিয়া মেগদালিনা জিওরদানোসহ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এসময় উপস্থিত ছিলেন যা ফেসবুকের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ১৫ ডিসেম্বর মেক্সিকো সিটিস্থ কাসা দোলা আমিস্তাদ শিশু ক্যান্সার হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু ফান্ড হতে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য ১০,০০০ পেসোর একটি চেক রাষ্ট্রদূত হাসপাতালটির মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার লিওনার্দো আরানার কাছে হস্তান্তর করেন।
এসময় দূতাবাসের কাউন্সিলর ও দূতালয় প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। চেক হস্তান্তরকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ দূতাবাস মেক্সিকোর ‘দারমেন অতেরো’ নামে একটি স্থানীয় ত্রৈমাসিক পত্রিকায় বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য, ঐতিহ্য, ইতিহাস, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা, সম্ভাবনা, সাফল্য এবং বাংলাদেশ মেক্সিকোর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চলেছে যা ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
মহান বিজয় দিবসের চেতনা এবং উদ্দীপনা স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে এবং বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে শিশুদের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতে ‘‘Escuela Secundaria Don Benito Juarez’’ বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন শিশুদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রদূত ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু’-এর উপর একটি সচিত্র উপস্থাপনা পরিবেশন করেন।
উপস্থাপনায় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি তুলে ধরেন। বিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ এরিক ওসিরিস লোপেজ এবং উপাধ্যক্ষ এলিজাবেথ গঞ্জালেজসহ অন্যান্য শিক্ষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারী শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু লোগো সংবলিত বিশেষ মগ ও নোটবুকসহ অন্যান্য উপহার সামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
এমআরএম/এএসএম