ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

বিড়ম্বনায় ক্রোয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি কর্মীরা

রাকিব হাসান রাফি | প্রকাশিত: ০৮:৫৮ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো ধীরে ধীরে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে বলকান পেনিনসুলার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ ক্রোয়েশিয়ার নাম। সম্প্রতি জীবিকার সন্ধানে বাংলাদেশ দেশে অসংখ্য মানুষ ক্রোয়েশিয়াতে পাড়ি জমাচ্ছেন।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে ক্রোয়েশিয়া সবচেয়ে বেশিমাত্রায় আলোচনায় আসে ২০১৮ সালে। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত সেবারের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হিসেবে রানার্স আপ দল হিসেবে ফাইনালে মাঠে নেমেছিল ক্রোয়েশিয়া। লুকা মডরিচ, ইভান রাকিটিচ, মারিও মানজুকিচ ও ইভান পেরেচিচের মতো ফুটবলাররা সমগ্র বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টজুড়েই আলো ছড়িয়েছিলেন। এছাড়াও জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ গেইম অব থ্রোনসের শ্যুটিং হয়েছিল ক্রোয়েশিয়াতে।

পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময়ী এক দেশ ক্রোয়েশিয়া। ২০১৩ সালে ক্রোয়েশিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে। বর্তমানে দেশটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেম নেটওয়ার্কখ্যাত সেনজেনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

ইউরোপিয়ান অন্যান্য দেশের তুলনায় ক্রোয়েশিয়ার ভিসা প্রসেসিং সিস্টেম কিছুটা আলাদা, বিশেষত স্টুডেন্ট কিংবা ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় দীর্ঘমেয়াদি ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশেই ডি ক্যাটাগরিতে ভিসা প্রদান করে। ডি ক্যাটাগরিতে প্রাপ্ত ভিসার মেয়াদ ছয় মাস থেকে এক বছর কিংবা তার চেয়ে অধিকও হতে পারে। কোনো কোনো দেশ সরাসরি স্টিকার ভিসার পরিবর্তে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট প্রদান করে। তবে ক্রোয়েশিয়াতে যে কোনোক্ষেত্রে ভিসার আবেদনের সময় ডি এর পরিবর্তে সি ক্যাটাগরিতে শর্ট টার্ম ভিসা দেয়া হয়। এ ভিসার মেয়াদ এক মাস থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের হয়। ক্রোয়েশিয়াতে পৌঁছানোর পর ক্যাটাগরি ভিত্তিতে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী অ্যাপ্লিক্যান্ট রেসিডেন্ট পারমিটের জন্য আবেদন করেন।

ক্রোয়েশিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের কোনো দূতাবাস নেই। রাষ্ট্রীয় যে কোনও প্রয়োজনে ক্রোয়েশিয়াতে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।

গত মাসের পাঁচ তারিখে নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যাকার প্রাইভেট রিকুটমেন্ট এজেন্সির মাধ্যমে কন্সট্রাকশন খাতে কর্মসংস্থানের জন্য ক্রোয়েশিয়া গমনকারী ১৩ জন কর্মীর সবাই কর্মস্থল থেকে পলায়ন করে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় কর্মদক্ষতার অভাবে অনেক কর্মীকে তাদের প্রতিষ্ঠান চাকরি থেকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে তারা কোথায় অবস্থান করছেন কিংবা আদৌতে তারা ক্রোয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন কি না সে প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাসকে নিশ্চিতভাবে কোনও কিছু জানাতে পারেনি দেশটির সরকার। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্রোয়েশিয়া সরকারের মাঝে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো জানায়, এখন থেকে কর্মী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যারা ক্রোয়েশিয়া যাবেন, তাদের সবাইকে দেশ ত্যাগের পূর্বে বাধ্যতামূলকভাবে ম্যানপাওয়ার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের সবাইকে নিকটস্থ অভিভাবকের কাছ থেকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়ারি স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা তৈরি করতে হবে এবং দক্ষিণ কোরিয়াগামী ইপিএস কর্মীদের মতো তাদেরকে বিএমইটির অনুকূলে এক লাখ টাকা নিরাপত্তা জামানত প্রদান করতে হবে।

এছাড়াও বহির্গমন ছাড়পত্র কিংবা স্মার্টকার্ড প্রাপ্ত ক্রোয়েশিয়াগামী কর্মীদের তালিকা ও ফ্লাইটের সময়সূচি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রেরণের নির্দেশনা দিয়েছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর পর সকল কর্মীকে সাত দিনের মধ্যে নেদারল্যান্ডসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগের বাধ্যবাধকতা জারি করেছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

তবে সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অবহিত না থাকায় ক্রোয়েশিয়াগামী অনেক কর্মী বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও সেদেশে ফ্লাই করতে পারছেন না। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন থেকে অনেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। কতিপয় এজেন্সি এবং একই সঙ্গে এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ সুযোগে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের কথা বলে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিভিন্ন অঙ্কের টাকা।

ক্রোয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি উল্লাহ আহম্মেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ক্রোয়েশিয়া সরকারের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ফলে আমাদের দেশ থেকে সম্প্রতি অনেকে কনস্ট্রাকশনসহ বেশ কিছু খাতে সেখানে সুযোগ পেয়েছেন। তবে আশানুরূপভাবে কর্মদক্ষতা না থাকায় অনেক কোম্পানি তাদেরকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও অনেক বাংলাদেশি সেনজেনভুক্ত কোনও দেশে অনুপ্রবেশের রুট হিসেবে ক্রোয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন। তাই ক্রোয়েশিয়াতে আসতে না আসতে তাদের সবার লক্ষ্য হয়ে উঠে কীভাবে সীমানা পাড়ি দিয়ে স্লোভেনিয়া কিংবা হাঙ্গেরির মধ্য দিয়ে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন কিংবা পর্তুগালে চলে যাওয়া যায়। অনেকে এ যাত্রায় সফলকাম হন, অনেকে আবার পুলিশের হাতে আটক হন’।

আহম্মেদ আরও যোগ করেন, ‘আগামী দিনগুলোতে যদি সত্যি আমাদের মাঝে এ ধরনের প্রবণতা থাকে তাহলে ক্রোয়েশিয়াতে আমাদের জন্য সকল সম্ভাবনার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।’

তাই ক্রোয়েশিয়াতে আসার পূর্বে সবাইকে তিনি নির্ধারিত কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং অবৈধপথে সীমানা পাড়ি দিয়ে সেনজেনভুক্ত দেশগুলোতে যাতায়াত করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসার পরামর্শ প্রদান করেছেন।

এমআরএম/এমএস