র্যাপার পাবলোর মুক্তির দাবিতে উত্তাল স্পেন
কাতালোনিয়ায় জন্ম নেয়া র্যাপ গায়ক পাবলো হাসেলের মুক্তির দাবিতে সহিংস আন্দোলনে উত্তাল স্পেন। স্পেনের মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, লেলিদা ও গ্রানাদাতে একটানা দুইদিন ধরে চলা (১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি) সহিংস আন্দোলনে এ পর্যন্ত প্রায় ১২ জনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ।
সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি ও স্পেনের রাজাকে ‘মাতাল’ বলার অভিযোগে সরকার এই শিল্পীকে ১৬ ফেব্রুয়ারি লেলিদা ইউনিভার্সিটিতে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় আটক করে। আটকের খবর শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তার ভক্ত ও সমর্থকরা। এরপর তার মুক্তির দাবিতে প্রথম দিন রাজপথে নামে প্রায় হাজার খানেক মানুষ। আর দ্বিতীয় দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি শুধু বার্সেলোনার রাজপথে নেমেছে প্রায় দুই হাজার বিক্ষোভকারী। আন্দোলন অব্যাহত ছিল রাজধানী মাদ্রিদসহ অন্যান্য শহরেও।
বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে ময়লার ক্যানে আগুন ধরিয়ে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাঁচ ভেঙ্গে, রাস্তার সিসি ক্যামেরা খুলে ও পুলিশের প্রতি চড়াও হয়ে ইট পাথর নিক্ষেপের করে বিক্ষোভ করে। বার্সেলোনা ও মাদ্রিদের কিছু কিছু পয়েন্টে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সঙ্ঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে এবং আন্দোলনকারীদের অনেককে গ্রেফতার করে। র্যাপারের মুক্তির দাবিতে এখনো পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছে, তাকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে মদদ দিয়ে গান লেখার অভিযোগে সম্প্রতি ৯ মাসের কারাদণ্ড হয় গায়ক পাবলোর। গ্রেফতার এড়াতে কাতালোনিয়ার লেলিদা ইউনিভার্সিটিতে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এই শিল্পী। পরে পুলিশ নাটকীয় অভিযান চালিয়ে পাবলোকে গ্রেফতার করা হয়।
৩২ বছর বয়সী এই শিল্পীর বিরুদ্ধে স্পেনের রাজতন্ত্রকে অপমান, সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের প্রশংসা করা এমন ৪ ধরনের অপরাধে প্রথমে ২০১৪ সালে তাকে দুই বছরের স্থগিত করাদণ্ড দেয়া হয়। পরে স্পেনের সাবেক রাজা খোয়ান কার্লোসকে নিয়ে করা একটি গান এবং দুই বছর ধরের করা উষ্কানিমূলক ৬৪টি টুইটের জন্য তাকে সর্বশেষ ৯ মাসের কারাদেশ দেয়।
সাবেক রাজার সমালোচনায় গায়ক তার গানে রাজার দুর্নীতির কথা, স্ত্রীকে পেটানোর কথা লেখেন। এছাড়া রাজা মাতাল ছিলেন, মাফিয়ার প্রধান ছিলেন এবং পতিতাদের নিয়মিত খদ্দের ছিলেন বলেও তার গানে লিখেছিলেন পাবলো।
পাবলোকে গ্রেফতারের বরে এই র্যাপার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের মৃত্যু হোক, আমরা জিতবোই, তারা নির্যাতন নিপীড়ন করে কখনোই আমাদের শেষ করতে পারবে না।
এদিকে বাবলো হাসেলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে প্রায় দুই শতাধিক শিল্পী। এর মধ্যে আছেন অভিনেতা খায়ের বার্দেম, ছবির পরিচালক পেদ্রো আলমোদাভা। তারা পাবলোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক পিটিশনে সই করেছেন।
স্পেনের জোট সরকার চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে স্পেনের বাকস্বাধীনতা সম্পর্কিত অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের বিধান রদ করার প্রস্তাবসহ এই আইনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে। তবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রক্ষণশীল ও উগ্র ডানপন্থি দলগুলো। তবে এটা কবে চালু হবে বা পাবলো মামলার ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য হবে কি-না সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।
এমআরএম/এমএস